শুক্রবার, ১০ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নেত্রকোনায় চাঁদাবাজি ছেড়ে ব্যবসায় নেমেছে তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রদায়

তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রদায়ের একমাত্র পেশা ছিলো দোকানে, ট্রেনে কিংবা রাস্তায় বিয়ের বরযাত্রী বা কনের গাড়ি আঠকিয়ে তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়। এখন সেই পেশা বদলে খাবার হোটেল, টেইলার্স এবং চা-কপির দোকানের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবন-যাপনে ফেরার চেষ্টা করছে এই সম্প্রদায়ের একটি দল। তাদের এমন কর্মের প্রশংসা করছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। তাদের স্বাবলম্বী ও ভাগ্য উন্নয়নের সার্বিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার দেওয়ান বাজার। প্রতিদিনই এ বাজারে শত শত মানুষের আনাগুনা চলে। বৃহস্পতিবারে জমে উঠে সবচেয়ে বড় গরুর হাট। এই বাজারে বিভিন্ন ধরনের দোকানের পাশাপাশি রয়েছে তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রদায়ের ত্রিনয়না নামে বেশ কিছু দোকান পাঠ। যেখানে রয়েছে ভাতের হোটেল, কফি হাইজ ও টেইলার্সের দোকান। এ দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করছে তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রাদায়ের লোকজন। যা দেখে বেশ খুশি স্থানীয়রা। সেইসঙ্গে আগামী দিনগুলোতে কর্মের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবন-যাপনে ফিরবে এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তারা।

২০১৭ সালে স্থানীয় এক হিজরা স্বপ্নের ছোঁয়া নামে একটি সংগঠন তৈরি করেন। এই সংগঠনটি উপজেলার প্রায় অর্ধশত হিজরাকে নিয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। প্রশিক্ষণ পেয়ে নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখে। তারপর তাদের এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষে এগিয়ে আসে মদন উপজেলা প্রশাসন। তাদের বিভিন্ন সরকারি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরও দক্ষ করে গড়ে তোলা হয় এবং সুযোগ করে দেওয়া হয় কর্মসংস্থানেরও। তারপর থেকেই যাত্রা শুরু হয় সংগঠনটির সদস্যদের। সরকারিভাবে ব্যবসা করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ায় বেশ খুশি হিজরা সম্প্রদায়ের সদস্যরা।

স্থানীয়রা জানান, হিজরা সম্প্রদায়ের লোকরা আগে রাস্তাঘাটে, দোকানে চাঁদা ওঠাতো এখন তারা নিজে কর্ম করছে এটি যেমন আনন্দের তেমনি স্বস্তিরও বটে।

ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের জানান, তাদের হাতের রান্না করা খাবার খুবই সুস্বাদু। তাছাড়া টেইলার্স এবং চা-কপির দোকানও ভালো চলছে। একটু সহযোগিতা ও সুস্থ পরিবেশ যে কারও জীবন পালটে দিতে পারে এটি তার অন্যতম উদাহরণ। এরকম মহৎ উদ্যোগে সহায়তা করার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলায় যদি এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয় তাহলে হিজরা সম্প্রদায়ের লোকজন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে।

তৃতীয় লিঙ্গের সুচরিত জানায়, জীবনের তাগিদে চাঁদা উঠাতে গিয়ে মানুষের মুখে নানান কথা শুনেছি। এখন আমরা ব্যবসা করে বেশ ভালো আছি। পূর্বের জীবনে আর ফিরে যাব না।

সংগঠনটির সভাপতি জয়িতা অনন্যা বলেন, তাদের এই কর্মকাণ্ড দেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিজরা সম্প্রদায়ের সদস্যরা চাঁদা উত্তোলন বা ভিক্ষাবৃত্তি বাদ দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। এটি দেশের জন্য একটি রুল মডেল হবে বলেও তিনি বিশ্বাস করেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহ আলম মিয়া জানান, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে হিজরা সম্প্রদায়ের লোকজনও ভূমিকা রাখতে পারে। সেই চিন্তা থেকেই তাদের একত্রিত করেছি। তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করছি।

তিনি আরও জানান, হিজরা সম্প্রদায়ের লোকদেরকে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলায় এমন উদ্যোগ গ্রহণ করলে উন্নত সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে তাদেরও ভূমিকা থাকবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ