বুধবার, ১৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শেখ কামাল ২য় বাংলাদেশ যুব গেমস সমাপ্ত

শেখ কামাল ২য় বাংলাদেশ যুব গেমস সমাপ্ত

স্পোর্টস রিপোর্টার – শেষ হলো শেখ কামাল ২য় বাংলাদেশ যুব গেমস। গত ২ জানুয়ারি প্রায় ৬০ হাজার ক্রীড়াবিদ, কোচ, টেকনিক্যাল অফিসিয়াল ও ক্রীড়া সংগঠকের অংশ গ্রহণে যে মহাযজ্ঞের শুরু হয়েছিল, শনিবার আর্মি স্টেডিয়ামে হয়েছে তার সফল সমাপ্তি। ট্র্যাক এন্ড ফিল্ডের গতির ঝলক, আতশবাজির রোশনি, মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সঙ্গে চোখ ধাঁধানো সমাপনীতে পর্দা নামল শেখ কামাল ২য় বাংলাদেশ যুব গেমসের।

চূড়ান্ত পর্বে ৪ হাজার এ্যাথলেটের ক্রীড়াশৈলীতে সাত দিন ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে ছিল উৎসবের আবহ। সেই উৎসবের শেষ ঘোষনা করেন বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের(বিওএ) সভাপতি ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ,এসবিপি(বার),ওএসপি, এনডিইউ,পিএসসি, পিএইচডি, ‘আমি শেখ কামাল ২য় বাংলাদেশ যুব গেমস ২০২৩ এর সমাপনী ঘোষনা করছি।’

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রায় তিন ঘন্টার সমাপনী অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন সেনাবাহিনী প্রধান। এ সময় বিওএ মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা, বিওএ’র অন্যান্য কর্মকর্তাগণ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন ফেডারেশন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন ।

আটটি বিভাগের খেলোয়াড়দের নিয়ে ২৪টি ডিসিপ্লিনে অনুষ্ঠিত গেমসে সেরা হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। ৪৯টি স্বর্ন, ৪০টি রৌপ্য এবং ৫৭টি ব্রোঞ্জসহ মোট ১৪৬টি পদক নিয়ে শীর্ষে চট্টগ্রামের তরুন-তরুণীরা। দ্বিতীয় হয়েছে ঢাকা বিভাগ। তারা ৪৬টি স্বর্ন, ৩৯টি রৌপ্য, ৬১টি ব্রোঞ্জসহ মোট ১৪৬টি পদক জিতেছে। ৪২টি স্বর্ন, ৪৩টি রৌপ্য এবং ৫৯টি ব্রোঞ্জসহ মোট ১৪৪টি পদক নিয়ে তৃতীয় হয়েছে খুলনা বিভাগ।

সমাপনী অনুষ্ঠানটিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। প্রথম পর্বে প্রধান অতিথি সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ এর আগমন, এ্যাথলেটিকসের ১০০ ও ৮০০ মিটার দৌঁড় ইভেন্ট, শেখ কামাল ২য় বাংলাদেশ যুব গেমসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অডিওভিজ্যয়াল প্রদর্শন , স্পন্সরদের ক্রেস্ট প্রদান , প্রধান অতিথির বক্তব্য এবং সমাপনী ঘোষণা। দ্বিতীয় পর্বকে সাজানো হয় ১ ঘন্টা ৩০ মিনিটের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দিয়ে। যেখানে সুরের তালে সবাইকে মাতিয়ে তোলেন শিল্পীরা।

আর্মি স্টেডিয়ামের গ্যালারি ছিল পরিপূর্ণ। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নানান শ্রেনী-পেশার মানুষের উপস্থিতিতে শেখ কামাল ২য় বাংলাদেশ যুব গেমসের সমাপনী অনুষ্ঠানটি অন্য মাত্র পায়। এ্যাথলেটিকস শুরুর আগে দেশের নানান উন্নয়ন চিত্র নিয়ে কয়েক মিনিটের অডিও ভিজ্যুয়াল প্রদর্শন করা হয়। সেখানে যুব গেমসের কিছু খন্ডচিত্র দেখানো হয়। এ্যাথলেটিকসের জনপ্রিয় ইভেন্ট ১০০ মিটার স্প্রিন্টের সময় তরুণ-তরুনীদের গতির সঙ্গে স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকদের গর্জনে ভিন্ন এক আবহ তৈরী হয়। স্প্রিন্টের পর ২৫ মিনিটের বিরতি।

এরপর শুরু হয় সমাপনীর আনুষ্ঠানিকতা। শুরুতে শেখ কামাল ২য় বাংলাদেশ যুব গেমসের ওপরে সংক্ষিপ্ত একটি অডিওভিজ্যুয়াল প্রদর্শন করা হয়। সেখানে তুলে ধরা হয়, জেলা, উপজেলা, বিভাগীয় পর্যায় থেকে শুরু করে গেমসের মশাল প্রজ্বলন। এরপর যুব গেমসের স্পন্সরদের হাতে সম্মানসূচক ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়। বিভিন্ন পৃষ্ঠপোষকদের সঙ্গে ফটোসেশন করেন বিওএ সভাপতি সেনাপ্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, বিওএ মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা। ক্রেস্ট প্রদান অনুষ্ঠানের পর ৮০০ মিটার এবং ১০০ মিটার স্প্রিন্টের তরুন ও তরুণী বিভাগে পদক জয়ীদের গলায় পদক পরিয়ে দেয়ার সঙ্গে যুব গেমসের সেরা হওয়া চট্টগ্রাম ও দ্বিতীয় হওয়া ঢাকা বিভাগের হাতে ট্রফি তুলে দেন বিওএ সভাপতি।

বিওএ উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন ফেডারেশন কর্তাদের সঙ্গে ফটো সেশনের পর প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। সুন্দরভাবে শেখ কামাল যুব গেমস শেষ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। আর এবারের যুব গেমসে সেরা ২৮ জন তরুন-তরুণীকে ১০ লাখ টাকা ভাগ করে দেয়ার ঘোষনা দেন তিনি। সেনাপ্রধানের বক্তব্য শেষ হওয়ার পরই আতশবাজির আলোতে আলোকিত হয়ে ওঠে স্টেডিয়াম। মোবাইলে দারুণ এই মুহূর্তটিকে বন্দি করেন দর্শকরা। এরপরই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি হয় শেখ কামাল ২য় বাংলাদেশ যুব গেমসের ।

বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেখ কামাল ২য় বাংলাদেশ যুব গেমস-২০২৩ এর সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অলিম্পিক

এসোসিয়েশনের সভাপতি ও শেখ কামাল ২য় বাংলাদেশ যুব গেমস এর কো-চেয়ারম্যান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।

সমাপনী বক্তব্যে প্রধান অতিথি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খেলাধুলার জন্য ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা দেশের ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়ন ও আধুনিক কাঠামোতে রূপান্তরিত করতে বিভিন্ন পদপে ও কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে এগিয়ে নিতে তিনি ১৯৭২ সালে গঠন করেন ‘ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ সংস্থা’। সে সময় একে একে গড়ে ওঠে সাঁতার, হকি, ভলিবল, অ্যাথলেটিকস্, টেনিস ইত্যাদি ফেডারেশন। এক কথায় রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই ক্রীড়াঙ্গনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।

সেনাপ্রধান আরো বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের ক্রীড়াঙ্গন। দেশের বিভিন্ন স্থান হতে প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের খুঁজে বের করাই এ আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য এবং নতুন প্রতিভার সমন্বয়ে আমরা জাতীয় দলগুলোকে সমৃদ্ধ করতে পারব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল ছিলেন দেশের অন্যতম ক্রীড়া সংগঠক ও তারুণ্যের প্রতীক। তাঁর যৌবন দীপ্ত ক্রীড়াশৈলী দেশের তরুণদের প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করে। এ প্রজন্মের তরুণরাও খেলাধুলার বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের প্রতিভা ও ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করে আগামীতে হয়ে উঠবে অনন্য সাধারণ ক্রীড়াবিদ।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ক্রীড়াঙ্গনের সম্প্রসারণ এবং খেলাধুলার মান উন্নয়নে অনেক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে এবং করে যাচ্ছে। দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে তরুণ প্রতিভাবান ছেলে-মেয়েরা যাতে তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পায়, সেজন্য দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন ধরণের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, কর্মসূচী ও প্রশিণের ব্যবস্থা করেছে বর্তমান সরকার। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের নারীরা সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবল, সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপ এবং সাফ অনূর্ধ্ব-২০ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। সম্প্রতি কাজাকিস্তানে অনুষ্ঠিত এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিকস্ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের ইমরানুর রহমান ৬০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণপদক অর্জন করে। এছাড়াও বাংলাদেশের প্রতিযোগীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় কৃতিত্বের সাথে অংশগ্রহণ করে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনছে।

প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের (বিওএ)প্রধান পৃষ্ঠপোষক শেখ হাসিনা এর সার্বিক নির্দেশনা এবং বিওএ এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় শেখ কামাল ২য় বাংলাদেশ যুব গেমস-২০২৩ তিনটি পর্বে অনুষ্ঠিত হয়েছে। চূড়ান্ত পর্বে ২৪টি ডিসিপ্লিনের মধ্যে ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, স্কোয়াস, রাগবি, শ্যূটিং, জুডো, হকি, হ্যান্ডবল, আর্চারী, ভারোত্তোলন এবং সাইকিনিং ডিসিপ্লিনের চূড়ান্ত পর্বের প্রতিযোগিতা ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। অ্যাথলেটিকস্ প্রতিযোগিতার বিভিন্ন ইভেন্ট এবং আড়ম্বরপূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেখ কামাল ২য় বাংলাদেশ যুব গেমস-২০২৩ এর সমাপ্তি হয়। উল্লেখ্য, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে চূড়ান্ত পর্বের শুভ উদ্বোধন করেন।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত সেনাবাহিনী প্রধানের সহধর্মিণী, সেনাসদরের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারগণ (সস্ত্রীক), উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ (সস্ত্রীক), বিওএ এর মহাসচিব ও কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন ফেডারেশনের সভাপতিগণ, বিভিন্ন ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানগণ, সম্মানিত স্পন্সরগণ, জেসিও এবং অন্যান্য পদবির সেনাসদস্যগণ (সস্ত্রীক), আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ, খেলোয়াড়বৃন্দ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ