ফিরোজ মান্না :
দক্ষিণাঞ্চলের ১৯ জেলার মানুষের অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে ২৫ জুন। এই দিন স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ওই দিন থেকে সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে না। তার পরের দিন থেকে সেতুর উপর দিয়ে সব ধরণের যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। উদ্বোধনের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহর টোল দিয়ে পদ্মা সেতু পার হয়ে মাদারীপুরের জাজিরায় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষন দিবেন।
সেতু বিভাগ জানিয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভোগান্তি লাঘবের জন্য অপেক্ষা করতে আরও একদিন। ২৬ জুন থেকে সেতু দিয়ে পারাপার হতে পারবেন তারা। উদ্বোধনের পর সেতু এলাকায় উৎসুক মানুষ ভিড় করবে। দর্শকদের বিষয়টি মাথায় রেখে একদিন পরে যানবাহন চলাচলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ। আগ্রহী মানুষকে সেতুতে উঠতে দেয়া হবে কি না তা নিশ্চিত করেনি কর্তৃপক্ষ। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, কিছু সময়ের জন্য সেতুর একটি নির্দিষ্ট অংশ পর্যন্ত দর্শকদের উঠতে দেয়া হতে পারে। কত সময়ের জন্য দর্শকদের সেতুতে থাকতে দেয়া হবে তা এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২৫ জুন মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুর ফলক উন্মোচনের পর সুধী সমাবেশে অংশ নেবেন। এরপর তিনি টোল দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে গাড়িতে সেতু পার হবেন। প্রধানমন্ত্রীর গাড়িই প্রথম টোল দিয়ে সেতু পার হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রী জাজিরা প্রান্তে ফলক উন্মোচন করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা দুপুরের মধ্যে শেষ করবেন। বিকেলে তিনি মাদারীপুরের শিবচরে সমাবেশে যোগ দিবেন। প্রধানমন্ত্রীর ঢাকায় ফিরতি যাত্রা সড়কপথে না হয়ে হেলিকপ্টারেই হওয়ার কথা রয়েছে।
দুপুরের পর থেকে পদ্মা সেতু মোটামুটি উন্মুক্তই থাকবে। উম্মুক্ত সময়ে সেতু কেমন অবস্থায় থাকবে সেটা নিয়ে গঠিত ১৪ টি কমিটি আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা মনে করছেন, ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু চালুর পর উৎসুক মানুষের দেখার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছিল। যমুনা সেতুর চেয়ে পদ্মা সেতু নিয়ে মানুষের আগ্রহ আরও বেশি। ফলে এই সেতু চালুর পর উৎসুক মানুষকে দেখতে দেয়ার বিষয়টি তারা বিবেচনা করবেন। এ কারণে উদ্বোধনী দিনে যানবাহন চলা করতে দেয়া হচ্ছে না। সাধারণ মানুষের ইচ্ছেকে গুরুত্ব দিয়ে সেতু পরিদর্শনের সুযোগ দেয়া হতে পারে। তবে সেতু ুদয়ে পায়ে হেঁটে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। সেতু দেখতে হলে গাড়িতেই দেখতে হবে। কারণ, সেতুতে হাঁটার আলাদা কোনো পথ নেই। এ বিষয়টি মাথায় নিয়েই সেতু পরিদর্শন নাও হতে পারে। কারণ গাড়ি এবং মানুষের চলাচল একসঙ্গে শুরু হলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যাবে। তাই যানবাহন চলতে দিলে সাধারণ মানুষের সেতুতে ওঠার সুযোগ দেয়া ঠিক হবে না।
সেতু বিভাগের জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হচ্ছে, ২৬ জুন থেকে স্বাভাবিক যানবাহন চলাচল করবে। আর উদ্বোধনের পর সন্ধ্যা পর্যন্ত সাধারণ মানুষকে প্রবেশ করতে দেয়া যেতে পারে। তবে এর সবকিছুই সে সময় মানুষের উপস্থিতি, নিরাপত্তা পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে গঠিত কমিটি গুলো মনে করছেন। তবে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগেই কবে থেকে যানবাহন চলাচল করতে পারবে এবং সাধারণ মানুষকে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হলে কত সময়ের জন্য দেওয়া হবে-এই বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবে সেতু বিভাগ।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, মাদারীপুরের সমাবেশ সফল করার বিষয়ে অঅওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে আলোচনা হয়েছে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জনসভা করা হবে। এই সভায় ১০ লাখ মানুষের সমাবেশ ঘটবে। এ ছাড়া বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে যেসব কর্মসূচি পালন করা হবে, এর সবকিছুতেই পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের ছাপ রাখা হবে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সফল করতে করতে ইতোমধ্যে সারা দেশের নেতা কর্মীদের নিদের্শ দেয়া হয়েছে।