স্টাফ রিপোর্টার : ‘উন্নয়নের এত ঢাকঢোল বাজানো হলো, তাহলে সারাদেশে লোডশেডিংয়ে দুর্বিষহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো কেন?’-কথাগুলো বলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মঙ্গলবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘উন্নয়নের এত ঢাকঢোল বাজানো হলো, তাহলে সারাদেশে লোডশেডিংয়ে দুর্বিষহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো কেন? জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে যে ১৫২টি বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল, তার বেশিরভাগই এখন অচল হয়ে পড়ে আছে। লোডশেডিংয়ের ভয়াবহ ছোবলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ রাজধানী শহরও বিপন্ন হয়ে পড়েছে। অথচ বেসরকারি খাতে কুইক রেন্টালে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করতে ভর্তুকি দিতে হয়েছে। এই টাকা কিভাবে খরচ হচ্ছে- সেটি নিয়ে কেউ যাতে প্রশ্ন তুলতে না পারে সেজন্য দায়মুক্তির আইন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন যে একটা ভোজবাজি এখন তা আরও দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। বিদ্যুতের বিল অস্বাভাবিক হলেও দেশ আজ অন্ধকারে নিমজ্জিত।’
রিজভী বলেন, ‘সরকারের উন্নয়নের হাতির ভেতর যে দাঁত নেই সেটি এখন স্পষ্ট। ফাঁপা উন্নয়নের তাস দিয়ে যে মানুষের মন জেতা যাবে না, সেটি তিনি বোঝার চেষ্টা করেননি।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন যে জনপদের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাওয়া হয় সেটিই মনে হয় অন্ধকার গোরস্থান। পদ্মা সেতু উদ্বোধন নিয়ে যে কাণ্ড করা হলো তা আরব্য রজনীর আলিফ লায়লার কাহিনিকেও হার মানাবে। অধিকাংশ প্রিন্ট মিডিয়ার প্রথম পাতা জুড়ে শেখ হাসিনার গুণকীর্তনের কাহিনি ছাপা হয়েছে। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় হরদম প্রচার করা হয়েছে শেখ হাসিনার ‘লজ্জাহীন’ উচ্ছ্বাস। কিন্তু জাতি হিসেবে দেশবাসী লজ্জিত হয়েছে।’
রিজভী আরও বলেন, ‘দেশে প্রশাসনের ভয়াবহ কৈবল্য ঘটেছে। নাৎসীবাদের জয়জয়কার সবখানে। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ এক সুখরাজ্য নির্মাণ করেছে। তাদের রাজনীতির কারণে দেশে দুর্বৃত্তায়নের জয়জয়কার চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হলগুলোতে বরাদ্দপত্র দেয় ছাত্রলীগ। সাধারণ ছাত্রদের সিট পেতে হল প্রশাসনের কাছে নয়, ছাত্রলীগের নেতাদের কাছে যেতে হয়।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ নেই হলগুলো নিয়ন্ত্রণে নেয়ার। এভাবে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, শাহজালাল ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণ করছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে হলের সিট বিক্রি করছে ছাত্রলীগ। সাধারণ ছাত্রদের শঙ্কার মাঝে দিন যাপন করা ছাড়া উপায় নেই। আওয়ামী সরকারের মদদে ছাত্রলীগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিপজ্জনক জোনে পরিণত করেছে।’
তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুর জমকালো উদ্বোধনে শুধুমাত্র টয়লেট নির্মাণ করতেই শত শত কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। সম্প্রতি গণমাধ্যমের খবর- প্রবল বন্যায় বানভাসি মানুষের জন্য জনপ্রতি মাত্র ১৮ টাকা ও দেড় কেজি চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। এ যেন কর্মহীন অনাহারক্লিষ্ট মানুষের প্রতি নির্মম পরিহাস। এই পরিস্থিতি সরকারের অসৎ অনাচারের একটি সুনিশ্চিত ভঙ্গি। যা এই শতকে এক দুর্বিষহ দৃষ্টান্ত। সরকারের এমন আচরণ দুঃস্বপ্নের অতীত এক অভিঘাত। মানুষের দীর্ঘশ্বাস ঝরে পড়ছে কিন্তু তারা ক্ষমতার নেশায় আছন্ন হয়ে এ ধরনের একটি অপরাধপ্রবণ কর্মসূচি নিয়েছে।’ সরকারের কারণেই এই বন্যা মানবতার অস্তিত্বকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে বলে দাবি করেন তিনি।