মুক্তিযোদ্ধাদের অবমানকারী সেই শিক্ষক বর্তমান উপাচার্যের প্যানেলে
ক্ষুব্ধ শিক্ষক শিক্ষার্থীরা
স্টাফ রিপোর্টার \ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে মুক্তিযোদ্ধাদের লুততরাজ ও নারী নিপীড়নকারী বলে মন্তব্য করে বিতর্কের সম্মুখীন হওয়া পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জাবির বর্তমান আওয়ামীপন্থী উপাচার্যের প্যানেল থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তিনি। এতে ক্যাম্পাসের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে শুক্রবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের বিশেষ অধিবেশনে তিন সদস্যের উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এদের মধ্য থেকে একজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর।
অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের নেতৃত্বাধীন প্যানেলের হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্যানেলও ঘোষণা করেছেন।
এই প্যানেলের অন্য সদস্য হলেন- শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ।
গত ২৪ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মো. আমির হোসেনের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বাড়তি একবছর চাকরির সুবিধা বাতিলের আলোচনায় মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে করা মুক্তিযোদ্ধাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার।
সেসময় সিনেট সভায় অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার বলেন, ‘আমার বয়স যখন ১৪-১৫ তখন মুক্তিযুদ্ধ হয়, মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী কালও দেখেছি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছি। অনেক কিছুই দেখেছি। আজ এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে যে ইমোশন (আবেগ) তৈরি হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধাদের অবশ্যই আমি সম্মান করি। আবার এই মুক্তিযোদ্ধারাই কীভাবে নিপীড়ন করেছে নারীদের, আমি দুয়েকটা নামও বলতে পারি।’
এ বক্তব্যের কারণে সমালোচনার মুখে পড়েন অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার। তার বিরুদ্ধে নানা সংগঠন থেকে বিবৃতি ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়। পরে নিজের বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করে বলেন, বর্তমান আওয়ামী পন্থী উপাচার্য মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননাকারী শিক্ষককে প্যানেলভুক্ত করে তার মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। জাবি ক্যাম্পাসের উপাচার্য থাকার নৈতিক অবস্থান হারিয়েছেন তিনি।
আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান জাবি শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইমন রহমান বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের অবমাননাকরী একজন শিক্ষক কিভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নির্বাচনে অংশ নেয়। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
এমন বিতর্কিত ব্যক্তিকে প্যানেলে রাখায় সরকারের উচ্চ মহলেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে সাবেক উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মো. আমির হোসেনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এই পক্ষের অন্য দুই সদস্য হলেন- প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক পৃথ্বিলা নাজনীন নীলিমা।
এ ছাড়া ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’-এর আরেকটি অংশের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফি, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক তপন কুমার সাহা এবং শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ-জেইউ) অধ্যাপক মো. মোতাহার হোসেনকে প্রার্থী করে আরেকটি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে।