স্টাফ রিপোর্টার : ডিজেল-পেট্রল ও অকটেনের দাম লিটারে ৫ টাকা কমানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। দ্রুতই এ নিয়ে প্রজ্ঞাপনও জারি হবে।
এরআগে দুপুরে সচিবালয়ে প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী দুই-একদিনের মধ্যেই জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। জ্বালানি তেলের ওপর ভ্যাট-ট্যাক্স কমেছে। এতে কী প্রভাব পড়বে সেই হিসাব-নিকাশ চলছে। তাতে বোঝা যাচ্ছিল দাম কমা নিয়ে শিগগিরই একটি সিদ্ধান্ত আসবে। সেই সিদ্ধান্ত দ্রুতই আসল।
তিনি বলেন, অগ্রিম আয়কর কমেছে, ৫ শতাংশ ট্যাক্স কমেছে। জ্বালানির দাম আমরা কতটুকু কমাতে পারব তা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম আবার ঊর্ধ্বমুখী। পরিশোধিত ডিজেলের ব্যারেলপ্রতি দাম উঠেছে ১৫০ ডলারে। তাই কতটুকু সমন্বয় হবে তার বিচার-বিশ্লেষণ চলছে।
দাম কত টাকা কমবে? জানা গিয়েছিল, ২ টাকা কমতে পারে। প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, যতটুকু কর কমেছে, তাতে লিটারে দুই টাকা কমতে পারে। এতে বাজারে তেমন প্রভাব পড়বে না। তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পদক্ষেপটি স্থায়ী নয়। বিপিসিকে দেউলিয়াত্বের হাত থেকে বাঁচাতে এটা করতে হয়েছে। অবশ্যই এটা সমন্বয় করা হবে। সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে। রাতেই জানা গেল, ৫ টাকা কমেছে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। এরপর বিশ্ব অর্থনীতি সংকটের মধ্যে কীভাবে এই দাম কমানো যায় সেই পথ খুঁজতে শুরু করে সংশ্লিষ্টরা।
অবশেষে ডিজেলের আগাম কর মওকুফ এবং আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর ফলে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ও অন্য ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান হ্রাসকৃত শুল্ক হারে ডিজেল আমদানি করতে পারবে। তবে যতটা শুল্ক কমানো হয়েছে তাতে লিটারে দুই টাকা দাম কমতে পারে। তবে বাজারে এখনই জ্বালানির দাম কমছে না। সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কেনা তেলে শুল্ক কমায় তখন দাম কমানো হবে।
এদিকে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বলছে, সব ধরনের কর প্রত্যাহার করলে প্রতি লিটার ডিজেলের মূল্য কম করে হলেও ৩৬ টাকা কমানো সম্ভব। কারণে, বর্তমানে লিটারপ্রতি ১১৪ টাকার ডিজেল থেকে ৩৬ টাকা কর আদায় করছে সরকার। গত ৫ আগস্ট রাতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা করে। অকটেন ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ এবং পেট্রোল ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা লিটার করা হয়।
এদিকে দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হবে কিনা সে সিদ্ধান্ত সরকার নেবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ (এনডিসি)। বিপিসি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, তেলের দামের ওপর ভ্যাট-ট্যাক্স কমানোর ফলে খরচ কতটা কমবে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে খুচরা বাজারে দাম কমানো হবে কিনা সে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
রবিবার ডিজেলের ওপর থেকে সব ধরনের আগাম কর মওকুফ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। পাশাপাশি আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়।
এ অবস্থায় ডিজেলের দাম কমবে কিনা জানতে চাইলে বিপিসি চেয়ারম্যান বলেন, এখনও ডিজেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১৩২ ডলার পড়ছে, যেটা আমাদের বিক্রয় মূল্যের চেয়ে লিটারে সাড়ে ৯ থেকে ১০ টাকা বেশি।
রাশিয়া থেকে আনা জ্বালানি তেলের নমুনা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে বিপিসি চেয়ারম্যান জানান, শুধু ল্যাবে পরীক্ষার জন্য রাশিয়া থেকে খুবই অল্প পরিমাণ তেল আনা হয়েছে। এর সঙ্গে আমদানির কোনো সম্পর্ক নেই।
এদিকে, পেট্রোল পাম্প মালিকদের আগামী ৩১ আগস্টের কর্মবিরতি স্থগিত হয়েছে বলেও জানান তিনি। এ সময় উপস্থিত পেট্রোল পাম্প মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ নাজমুল হক অভিযোগ করেন, নিয়ম না জেনেই পেট্রোল পাম্পগুলোতে অভিযান পরিচালনা করে হয়রানি করছে ভোক্তা অধিকার। এ বিষয়ে প্রমাণসহ বিপিসিতে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।