আবদুল মান্নান
এ’ বছর ২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুকন্যা ৭৬ বছরে পা রাখবেন। তাঁকে জন্মদিনের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আল্লাহর কাছে দোয়া করি আপনি আরও অনেক দিন আমাদের মাঝে বেঁচে থাকুন । দেশের প্রয়োজনে তা আপনাকে থাকতেই হবে । বঙ্গবন্ধুকন্যার সঙ্গে একাধিক সময়ে কাজ করার সুবাদে এটা বলতে পারি, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর জেনারেল জিয়া যখন দেশটাকে খাদের কিনারায় নিয়ে গিয়ে তাকে একটি মিনি পাকিস্তানে রূপান্তরের সব ব্যবস্থা সেরে ফেলেছিলেন, তখন শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মতো ঐতিহাসিক ঘটনাটি না ঘটলে ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ আজ আবার একটি মিনি পাকিস্তানে রূপ নিতো। তবে সেই চেষ্টা বিএনপি এখনও করে যাচ্ছে । আজকে সে মানুষটি, শেখ হাসিনার জন্মদিন। তাঁর কাছে তো জাতি হিসেবে আমাদের কৃতজ্ঞ হওয়ার অনেক কারণ আছে। বলতে পারি, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি ছিয়াত্তরে পা দিলেন কিন্তু আপনি বৃদ্ধ হননি। আপনাকে দেখেই এই দেশের লাখো জনতা এখনও বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে । আপনার কর্মে তারা জাতির পিতাকে খোঁজার চেষ্টা করে । পিতার হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ ছয় বছর প্রবাসে কাটিয়ে ১৯৮১ সালের মে মাসে দেশে ফিরে আপনার কর্ম আর পরিশ্রম দ্বারা এই সময়ে আপনি দেশকে নিয়ে গিয়েছেন এক নতুন উচ্চতায় । তবে আপনার কথা মতো এখনও আপনাকে অনেক দূর যেতে হবে। এই দেশের কোটি মানুষ মনে করেন, শেখ হাসিনার হাত দিয়ে পিতার আরাধ্য কাজ শেষ হবে ।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর দীর্ঘ ছয় বছর শেখ হাসিনা প্রবাসে কাটিয়েছেন। ১৯৮১ সালের মে মাসে এক অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে রিক্ত হাতে তিনি দেশে ফিরেছেন। ১৯৭৫ সালের জুলাই মাসে স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার কাছে জার্মানিতে যাওয়ার আগে তাঁর সব ছিল। দেশে ফিরলেন যেদিন তখন তাঁর পরিবারের কোনও সদস্য জীবিত নেই। ক্ষমতায় বাংলাদেশের প্রথম সেনা শাসক জেনারেল জিয়া, যিনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন বলে এখন যা প্রমাণিত এবং এই হত্যাকাণ্ডের একজন বড় বেনিফিশিয়ারি। সব বিচারে জিয়া ছিলেন একজন নিষ্ঠুর সেনা শাসক। শেখ হাসিনা দেশে ফিরে যেতে চেয়েছিলেন ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বরের পারিবারিক বাড়িতে, যেতে চেয়েছিলেন প্রয়াত পিতা, মা আর পরিবারের সদস্যদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করতে। জিয়া তাঁকে সেই সুযোগ দেননি। শেখ হাসিনা দেশে যখন ফেরেন তখন বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অবস্থা অনেকটা ছত্রভঙ্গ, যদিও শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদের স্ত্রী বেগম জোহরা তাজউদ্দীনের নেতৃত্বে কিছু তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা ও কর্মী দলটিকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছিলেন।
শেখ হাসিনা ছোটবেলায় স্কুল শিক্ষকের পেশা বেছে নিতে চেয়েছিলেন; কিন্তু নিয়তি তাঁকে শুধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বানায়নি, তিনি এই মুহূর্তে একজন বিশ্বনন্দিত রাষ্ট্রনায়ক। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এটি তাঁর তৃতীয় লাগাতার মেয়াদ, সব মিলিয়ে চতুর্থবার। প্রথমবার তিনি সরকার গঠন করেছিলেন ১৯৯৬ সালে, যখন তাঁর বয়স ছিল ৪৯ বছর। তাঁর পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি শপথ নেন, তখন তাঁর বয়স ছিল ৫২ বছর। বয়সের বিচারে শেখ হাসিনা তাঁর পিতাকেও ছাড়িয়ে গেছেন। বাংলাদেশের জনগণ মনে করেন, এই মুহূর্তে শেখ হাসিনার হাতে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিহিত।
পিতা শেখ মুজিবকে যখন সপরিবারে ঘাতকরা হত্যা করে তখন শেখ হাসিনা একজন গৃহবধূ বৈ অন্য কিছু নন। সে সময় তিনি বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার স্ত্রী, যাঁর প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে তাঁর দুই সন্তানকে মানুষ করা আর ঘর-সংসার সামলানো। আর সেই শেখ হাসিনার দূরদর্শিতার কারণে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বদরবারে উন্নয়নের একটি সফল রোল মডেল, যা জাতিসংঘ থেকে বিশ্বব্যাংক সবাই স্বীকার করে। একজন আদর্শ নেতা হওয়ার জন্য কিছু গুণাবলি আবশ্যক, যার মধ্যে সাহস, দৃঢ়তা, সততা, দূরদৃষ্টি আর সহনশীলতা অন্যতম। যারা রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেন তাঁদের জন্য এসব গুণ থাকাটা জরুরি। যুক্তরাষ্ট্রের থমাস জেফারসেন, আব্রাহাম লিংকন, ড. মার্টিন লুথার কিং, ব্রিটেনের মার্গারেট থ্যাচার, দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা, চিলির সালভাদও আলেন্দে, ভিয়েতনামের হো চি মিন, মিসরের জামাল আবদুন নাসের, ভারতের নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধী, সোভিয়েত ইউনিয়নের ভ্লাদিমির লেনিন, চীনের মাও সে তুং, কিউবার ফিদেল ক্যাস্ত্রো আর বাংলাদেশের শেখ মুজিবুর রহমান এ’সব গুণাবলির কারণেই নেতা হতে পেরেছিলেন। পরবর্তীকালে এঁরা অনেকেই নেতা থেকে পরিণত হয়েছিলেন রাষ্ট্রনায়কে। সমাজ বা রাষ্ট্র পরিচালনায় এঁরা সবাই মানুষের আস্থা অর্জন করেছিলেন, বদলে দিতে পেরেছিলেন মানুষের চিন্তাধারা আর সমাজকে। বিশ্বস্বীকৃত এই নেতারা কেউ নেতা হয়ে জন্মগ্রহণ করেননি। পরিস্থিতি তাঁদের নেতা বানিয়েছে। শেখ হাসিনার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচন ছিল দলকে কার্যকরভাবে টিকিয়ে রাখার একটি চেষ্টা। তখন শেখ হাসিনা দিল্লিতে প্রবাস জীবনযাপন করছেন। সেখানে নিরাপত্তার খাতিরে তিনি মিসেস তালুকদার এবং একজন গৃহবধূ। শেখ হাসিনা এক মারাত্মক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরেছিলেন। ফিলিপাইনের স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট ফ্রেডিনান্ড মার্কোসের বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলনের মাঝে ফিলিপাইনের নির্বাসিত রাজনৈতিক নেতা বেনিগনো আকিনো জুনিয়র ১৯৮৩ সালের ২১ আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরেছিলেন। মার্কোসের সেনাবাহিনী আকিনোকে ম্যানিলা বিমানবন্দরে বিমানের সিঁড়িতে গুলি করে হত্যা করেছিল। শেখ হাসিনার দেশে ফেরাটাও তেমন একটা নিরাপদ ছিল না। ছিল অনেক অনিশ্চয়তা। তারপরও তিনি দেশে ফিরেছিলেন স্রেফ মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা আর তাঁর পিতার প্রতি বাংলাদেশের জনগণের ভালোবাসার পুঁজিকে কেন্দ্র করে। দেশে ফেরার পর শেখ হাসিনা দেশের ও দলের রাজনীতিতে যে অসামান্য অবদান রেখেছেন তা একমাত্র সম্ভব হয়েছে দেশের প্রতি তাঁর ভালোবাসা, সাহস আর দূরদৃষ্টির কারণে। যে এরশাদবিরোধী আন্দোলন শুরু করেছিল এই দেশের ছাত্রসমাজ তাতে পরবর্তীকালে যোগ দিয়েছিল খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সাতদলীয় ঐক্যজোট। কিন্তু শত চেষ্টা করেও সেই আন্দোলনে হাওয়া লাগছিল না যতক্ষণ পর্যন্ত শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৫-দলীয় ঐক্যজোট এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলনের বেলায়ও একই চিত্র দেখেছি। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে এই আন্দোলন শুরু হলেও তা বেগবান হয়েছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ যোগ দেওয়ার পর।
শেখ হাসিনার সাহস দেশের মানুষ নানা সময়ে দেখেছে, যার অন্যতম ছিল মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে একাত্তরের ঘাতকদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাদের বিচার শুরু করা আর নানা ধরনের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কারণে যখন পদ্মা সেতু প্রকল্প ভেস্তে যাচ্ছিল তখন। একাত্তরের ঘাতকদের ও বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের বিচার বন্ধ করার জন্য অনেক আন্তর্জাতিক চাপ ছিল। শেখ হাসিনার সাহসের কারণে এই বিচার হয়েছে। পদ্মা সেতু ষড়যন্ত্রে তাঁকে যখন সবাই বিপর্যস্ত করতে চেয়েছে তখন তিনি সাহস করে বলেছিলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের বা অন্য কারও সহায়তা চাই না। আমাদের অর্থেই এই সেতু নির্মিত হবে।’ সেই সেতু এখন বাস্তব । ঠিক যেমনভাবে পিতা বঙ্গবন্ধু অমর হয়ে থাকবেন তাঁর সৃষ্ট বাংলাদেশে, ঠিক কন্যা শেখ হাসিনা বেঁচে থাকবেন পদ্মা সেতুতে ।
২০১৯ সালে কোভিড-১৯ মহামারিতে সারা বিশ্ব তছনছ হয়ে গেলো । আবারও বাংলাদেশের এই কঠিন সময় মোকাবিলা করার জন্য এগিয়ে আসেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । তখন একশ্রেণির মানুষ সব শেষ হয়ে গেলো বলে সেই কি আহাজারি । সরকার যে কত অকর্মণ্য তা বলতে বলতে তারা মুখে ফেনা তুলে ফেললেন । ওই শেখ হাসিনাই অভয় দিয়ে বললেন ‘ঘাবড়াবেন না । আমি আছি তো’। এই মহামারিকালে শেখ হাসিনা শুধু মহামারি মোকাবিলাই করেননি, তিনি এটি নিশ্চিত করেছেন যেন দেশের কোনও মানুষ খাদ্যাভাবে কষ্ট না পায়। বিনা খরচে দেশের মানুষকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করে শেখ হাসিনা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। শুধু দেশে নয়, তিনি করোনার টিকা দিতে সহায়তা করেছেন বন্ধু প্রতিম দেশ মালদ্বীপকে। করোনা মহামারি মোকাবিলায় বিশ্বে যে ২৩টি দেশ জাতিসংঘসহ অন্যান্য বিশ্ব সংস্থা কর্তৃক নন্দিত হয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ তৃতীয় আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রথম । এসব কৃতিত্বের দাবিদার শুধু শেখ হাসিনা আর তাঁর প্রশাসন । ২০১৭ সালে বাংলাদেশ আর এক সংকটের সম্মুখীন হলো। মিয়ানমার তাদের দেশের প্রায় দশ লক্ষ মানুষকে নিজ দেশ হতে বাংলাদেশে জোরপূর্বক ঠেলে দিলো। শত শত বছরের ইতিহাসকে পিছনে ঠেলে দিয়ে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা জানিয়ে দিলো এসব মানুষ মিয়ানমারের নাগরিক নন, তারা সকলে বাংলাদেশের নাগরিক । তারা অবৈধভাবে মিয়ানমারে বসবাস করছিল । এই ভাগ্যাহত মানুষগুলোকে অন্য কোনও দেশ আশ্রয় দিতে রাজি নয় । এগিয়ে এলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা । বললেন, এই মানুষগুলোর কঠিন সময়ে আমরা তাদের পাশে দাঁড়াবো। আমরা আমাদের নিজের খাওয়া তাদের সাথে ভাগাভাগি করে নেবো। মানবতার এই অনন্য নজির বিশ্বের আর কোনও দেশে কি আছে? তিনি আন্তর্জাতিক মহল হতে ‘মাদার অব হিউমিনিটি’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন ।
বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয় তখন দেশটির ভবিষ্যৎ কোনও অর্থনীতিবিদ বা বিশ্লেষক দেখতে পাননি। সকলেই প্রায় একবাক্যে বলেন ‘যদি বাংলাদেশ টিকে থাকে তাহলে বিশ্বের যেকোনও দেশ টিকে থাকবে। বঙ্গবন্ধু তাঁর সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে দেশটিকে একটি অনুন্নত অর্থনীতির দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর দেশে অনেক সামরিক বেসামরিক সরকার এসেছে গেছে কিন্তু বাংলাদেশ এই তালিকা হতে উপরে উঠতে পারেনি। বাস্তবে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশকে এই তকমা নিয়ে থাকতে হয়েছে। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করে দেশের প্রায় ভঙ্গুর অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করার দিকে নজর দেন । বর্তমানে বাংলাদেশকে জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা একটি উন্নয়নশীল দেশের তালিকাভুক্ত করেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ৪১তম অর্থনীতির দেশ আর বিশ্বে যে পাঁচটি দেশ দ্রুততম বিকাশমান অর্থনীতি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে তার মধ্যে একটি। এটি সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব আর দূরদর্শিতার কারণে। সব ঠিক থাকলে ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার কথা রয়েছে । এই শেখ হাসিনার শাসনামলেই বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে করোনা মহামারির কারণে কিছু মানুষ আবার নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। শেখ হাসিনার শাসনকালেই দেশের সাক্ষরতার হার চুয়াত্তর শতাংশ ছুঁয়েছে, দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়ে দাঁড়িয়েছে বাহাত্তর বছরে। আর নারীর ক্ষমতায়নের দিক দিয়ে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে একটি রোল মডেল ।
২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য খালেদা জিয়া দেশের মানুষের বিরুদ্ধে যে অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছিল, তখন আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতাই এই নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। একমাত্র শেখ হাসিনাই বলতে পেরেছিলেন সংবিধান সমুন্নত রাখতে এই নির্বাচন যথাসময়ে হবে। তাই তো তিনি ক্রান্তিকালের নেত্রী। ২০২৩ সালের শেষের দিকে অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচন বানচাল করার আবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে । এবারও জনগণ মনে করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই দেশের জনগণ এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করবে। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের সবাইকে কেনা গেলেও একমাত্র শেখ হাসিনাকে কেনা যায় না। এমন একটা বাক্য উচ্চারণ করতে সৎসাহস লাগে, যেটা শেখ হাসিনার আছে।
সব নেতার যেমন শক্তির অনেক উৎস থাকে, ঠিক তেমন দুর্বলতাও থাকে। বঙ্গবন্ধুরও ছিল। তিনি তাঁর দেশের মানুষকে বেশি ভালোবাসতেন, যা ছিল তাঁর ভাষায় নিজের দুর্বলতা। এটি তাঁর নিজের কথা। শেখ হাসিনার শক্তির উৎস তাঁর প্রতি মানুষের, বিশেষ করে তৃণমূল কর্মীদের ভালোবাসা। ভিয়েনাপ্রবাসী সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি এম নজরুল ইসলাম ২০১০ সালে শেখ হাসিনাকে নিয়ে ‘উদার অভ্যুদয়ের নেত্রী’ নামে অসাধারণ একটি গ্রন্থ সম্পাদনা করেছিলেন। তাতে অনেকের লেখা আছে। সেখানে প্রকাশিত আমার লেখায় আমি শেখ হাসিনার দুর্বলতা সম্পর্কে যে মন্তব্যটি করেছিলাম তা পুনরুক্তি করে লেখাটি শেষ করতে চাই। ২০১০ সালে লিখেছিলাম, ‘তিনি সব মানুষকে সহজেই বিশ্বাস করেন এবং এই বিশ্বাস কখনও কখনও ভুলভাবে করেন। ফলত অনেকে তাঁকে ভুল পথে পরিচালিত করতে চেষ্টা করেন।’ এটি শেখ হাসিনার বড় দুর্বলতা। এর সুযোগ নিয়ে বর্তমান সময়ে তাঁর অনেক আস্থাভাজন মানুষ নিরলসভাবে তাঁর ক্ষতি করে যাচ্ছেন, যা অনেক সময় তিনি হয়তো বুঝতে পারেন না। নিজের ‘ভুলে’র জন্য বঙ্গবন্ধু অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন, বাংলাদেশ হয়েছিল অভিভাবকহারা। বঙ্গবন্ধুকে শতায়ু হতে দেখার সৌভাগ্য আমাদের হয়নি। তাঁর কন্যা শতায়ু হোন এই প্রত্যাশা করি। শুভ জন্মদিন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
লেখক: বিশ্লেষক ও গবেষক