Search
Close this search box.

একমাস পর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেলেন আবু হেনা রনি

স্টাফ রিপোর্টার- সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন কৌতুক অভিনেতা আবু হেনা রনি। তিনি বলেছেন, আমি না পুড়লে বুঝতাম না, পোড়ার কত কষ্ট।

শনিবার দুপুরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এসময় তাকে দীর্ঘ একমাসের চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেন চিকিৎসকরা।

সংবাদ সম্মেলনে আবু হেনা রনি বলেন, সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর সবার আস্থা রাখা উচিত। আমাকে কষ্ট থেকে মুক্ত করার জন্য প্রথম দিন থেকে চিকিৎসক ও নার্সদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা পেয়েছি।

তিনি আরও বলেন, পুলিশ বাহিনীর প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তারা তাৎক্ষণিকভাবে আমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপির যুগ্ম-কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা

এদিকে হাসপাতাল ছাড়ার আগে আবু হেনা রনি বলেছেন নতুন জীবন পেয়েছি। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গ্যাস বেলুন বিস্ফোরণে দগ্ধ হন কৌতুক অভিনেতা আবু হেনা রনি। প্রায় এক মাসের চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন তিনিসহ দগ্ধ পুলিশ কনস্টেবল জিল্লুর রহমান। তাদের ঘটা করে বিদায় জানিয়েছে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। আয়োজন করা হয় অনুষ্ঠানের। সেখানে অভিব্যক্তি প্রকাশ করে আবু হেনা রনি বলেন, ‘আমি নতুন জীবন পেয়েছি। আর সেটা সম্ভব হয়েছে চিকিৎসকদের কল্যাণে।’ এসময় মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

আবু হেনা রনি এসময় আরও বলেন, ‘আমি যে দুর্ঘটনায় পড়েছিলাম, সেখান থেকে পরিবার, শুভাকাঙ্ক্ষী, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশবাসীর দোয়ায় আজ অনেকটাই সুস্থ। পুরোপুরি সুস্থ হতে আরও সময় লাগবে। আজ ছুটি হয়ে যাচ্ছে। এখন বাসায় গিয়ে ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী তাদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসায় থাকবো।‘

দুর্ঘটনার পর ‘দ্বিতীয় জীবন পেয়েছেন’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকদের পরিশ্রম এবং সেবার কারণেই আমি আজ আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।’

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আবু হেনা রনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বেলুনটি যখন আকাশে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল, তখন আকাশে না উড়ে মঞ্চের পাশে এসে পড়ে। আমি ঠিক পাশেই ছিলাম। এসময় বেলুনগুলো নিচে নেমে আসায় যদি সুতা কেটে দেওয়া হতো তাহলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতো না। সুতা না কেটে বেলুনে গ্যাস ভরা সেই ব্যক্তি গ্যাস লাইট জ্বালিয়ে দেয়। আর সঙ্গেসঙ্গেই বিস্ফোরণ হয়। আর তাতে বেশ কয়েকজন আহত হয়, এজন্য অবশ্যই সেই ব্যক্তি দায়ী।’

চিকিৎসাধীন রনি এবং পুলিশ কনস্টেবল জিল্লুরের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকরা যে একাগ্রতার সঙ্গে কাজ করেছেন, তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।

রনিকে উদ্দেশ করে আইজিপি বলেন, ‘তিনি আজ সুস্থ হয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পর তিনি আবারও মঞ্চে উঠে জনগণকে বিনোদন দেবেন। জনগণ আবারও তার কৌতুকের মাধ্যমে বিনোদিত হবেন।’

তিনি বলেন, যখন দুর্ঘটনা ঘটেছিল তখন পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। তিনি প্রস্তুত ছিলেন রনিকে সিঙ্গাপুর পাঠানোর জন্য। এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আনতে সময় লাগবে বলে জানিয়েছিলেন। তখন ইউএস-বাংলাকে বলা হয়েছিল তাদের দিয়ে দ্রুত সিঙ্গাপুরে বা যেখানে প্রয়োজন সেখানে যেন পাঠাতে পারি। পরবর্তী সময়ে শুনলাম আবু হেনা রনি ও জিল্লুর রহমান বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর আস্থা রেখেছেন। এ কারণে তাদের আর বাইরে নেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, এই হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা বিশ্ব মানের। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর আস্থা রাখায় তাদের আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

আইজিপি আরও বলেন, আবু হেনা রনি একজন জাতীয় কৌতুক অভিনেতা। সাধারণ মানুষও অনেক কষ্ট পেয়েছে তার এই আহত হওয়ার কারণে। আজকে সুস্থ হয়ে যাওয়ার খবর শুনে সাধারণ মানুষ উজ্জীবিত হবে। তিনি আবারও কৌতুক পরিবেশনার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে উজ্জীবিত করতে পারবেন। হাসপাতালের সব চিকিৎসক, নার্সদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

পার্বত্য চট্টগ্রামে জঙ্গিবিরোধী অভিযান নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, পত্র-পত্রিকায় এই অভিযান সম্পর্কে আপনারা দেখছেন। আমি মনে করি এই বিষয়ে এখন কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে আবু হেনা রনি এবং পুলিশ কনস্টেবল জিল্লুরের চিকিৎসার জন্য সর্বাত্মক নিয়োজিত ছিলাম। এ ছাড়া বার্ন ইউনিটের অন্যান্য যেসব রোগী ছিলেন, তাদের চিকিৎসার জন্য আমরা সবসময় নিয়োজিত ছিলাম এবং আছি।’

এসময় উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘বার্ন ইউনিটের এক চিকিৎসকের মায়ের শারীরিক অবস্থা খারাপ থাকার পরও তিনি শুধু নিজের পেশার দায়িত্বের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তিনি চিকিৎসা সেবা দিয়ে গেছেন।’ পাশাপাশি গ্যাস বেলুনের বিষয়ে নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি। অনেক বাচ্চা বেলুনে আগুন লাগার ঘটনায় পুড়ে এই হাসপাতালে ভর্তি হন বলে জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে রনি ও পুলিশ সদস্য জিল্লুর রহমানের হাতে ছাড়পত্র তুলে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রধান।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে জেলা পুলিশ লাইনস মাঠে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান ও নাগরিক সম্মেলনে গ্যাস বেলুন বিস্ফোরণে আবু হেনা রনিসহ ৫ জন দগ্ধ হন। দগ্ধ অন্যরা হলেন- মোশাররফ হোসেন, জিল্লুর রহমান, ইমরান হোসেন ও রুবেল হোসেন।তাদের মধ্যে কৌতুক অভিনেতা আবু হেনা রনি ও কনস্টেবল মো. জিল্লুর রহমানের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় শুক্রবার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ