স্টাফ রিপোর্টার – দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেছেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয়নি। কারণ ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল ছিল। শুধু বৃষ্টি আর বাতাস বেশি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে সারাদেশে ৪১৯টি ইউনিয়নে আনুমানিক ১০ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ছয় হাজার হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, প্রায় সাত হাজার আশ্রয়কেন্দ্রে ১০ লাখ মানুষকে নিয়ে আসা হয়েছিল। ঘূর্ণিঝড় শেষে মধ্যরাত থেকে মানুষ বাড়ি ফিরতে শুরু করে। সকালের মধ্যে সবাই আশ্রয়কেন্দ্র ত্যাগ করেছেন। মঙ্গলবার সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
ডিসেম্বরে আরেকটি ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রণালয়কে প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এনামুর রহমান বলেন, সিত্রাংয়ে ৪১৯টি ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া, ৬ হাজার হেক্টর কৃষিজমি ও ১ হাজার চিংড়ির খামারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চিংড়ি চাষিদের সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া হবে। এ ছাড়া, ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের জন্য টিন ও নির্মাণশ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হবে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রতিমন্ত্রী জানান, ঝুঁকিপূর্ণ সব জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মানবিক সহায়তার আওতায় ১৯টি জেলায় ৪৭৫ মেট্রিক টন চাল, ৯৫ লাখ টাকা, ১৯ হাজার শুকনা ও অন্যান্য খাবারের বস্তা/প্যাকেট, ৬ হাজার ৪১১ কার্টন ড্রাইকেক (প্রতি কার্টুন ১.৫৬ কেজি), ৭ হাজার ৫৭৬ কার্টন বিস্কুট (প্রতি কার্টুন ১.৩২ কেজি) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলাগুলো হচ্ছে – খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, নড়াইল, যশোর, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, চাঁদপুর, নেয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে উপকূলীয় ১৫ জেলায় ৬ লাখ ৩৭ হাজারের বেশি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে এক লাখ ১৯ হাজারের বেশি গবাদি পশুকেও নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার কথা জানিয়েছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় উপকূলীয় এসব জেলায় ৬ হাজার ৯২৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছিল, যেখানে ৩৯ লাখ ৭৭ হাজারের বেশি মানুষকে আশ্রয় দেয়া সম্ভব। এদিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবেলায় উপকূলীয় জেলাগুলোর ৭ হাজার ৩০টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা ছিল, যেখানে ২৫ লাখ মানুষ ঠাঁই নিতে পারবে বলে জানিয়েছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান। দুর্যোগপ্রবণ জেলাগুলোয় ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়ার পাশাপাশি শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডকে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, জলোচ্ছ্বাসের যে আশঙ্কা করা হয়েছিল, ভাটার সময় ঘূর্ণিঝড়টা অতিক্রম করতে শুরু করায় সেই জলোচ্ছ্বাস হয়নি। ফলে উপকূলীয় এলাকায় তেমন বড় কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ঘূর্ণিঝড় শুরুর আগে আগে যেসব বড় জাহাজ বর্হিনোঙ্গরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল, সেগুলো আবার বন্দরে ফিরতে শুরু করেছে। সোমবার ঝড়ের কারণে সাতটি আন্তর্জাতিক আর একটি অভ্যন্তরীণ বিমান যাত্রী নিয়ে ঢাকার পরিবর্তে সিলেটে অবতরণ করতে বাধ্য হয়েছিল। সেগুলোও ঢাকায় ফিরে এসেছে।
ঢাকার নিউমার্কেট, আজিমপুর, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, ধানমণ্ডি, গ্রীনরোড, বাসাবোসহ অনেক এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতার তৈরি হয়। অনেক সড়কে যানবাহনে পানি ঢুকে বন্ধ হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। যদি কোন নিম্নচাপ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার গতিবেগ অর্জন করে, তখন সেটি আঞ্চলিক ঝড় বলে মনে করা হয় এবং তখন সেটির নাম দেয়া হয়। কিন্তু সেটি যদি ঘণ্টায় ১১৯ কিলোমিটার (৭৪ মাইল) গতিবেগ অর্জন করে, তখন সেটি হারিকেন, টাইফুন বা সাইক্লোন বলে ডাকা হয়।