স্টাফ রিপোর্টার – প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল আশা প্রকাশ করে বলেছেন, সব দল আলটিমেটলি ইলেকশনে আসবে বলে আমরা আশা করছি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে যেসব অন্তরায় হতে পারে তা সমাধানে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেছেন, অংশগ্রহণমূলক ও প্রত্যাশিত সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেসব অন্তরায় হতে পারে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে তা সমাধান করতে হবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ১১টি দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে একথা বলেন সিইসি। বুধবার দুপুরে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সিইসি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায়গুলো রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে বুঝতে হবে। তাহলেই গণতান্ত্রিক চেতনায় যে নির্বাচন হওয়ার কথা সেটা তখন সম্ভব হবে।
গত বছর জুলাই মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতেরা আগামী নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময় করেছিলেন। পুনরায় তারা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময় করলেন।
এ বিষয়ে সিইসি বলেন, মূলত আমাদের ইলেকশন প্রস্তুতিটা কেমন এ বিষয়ে অবগত হওয়ার জন্য তারা এসেছেন। আমাদের ইলেক্টোরাল রোলগুলো আমরা অবহিত করেছি। ইলেকশন পার্টিসেপটারি কনটেষ্টেট হবে এগুলো অবহিত করেছি। আমাদের উদ্যোগ আছে কি না এবং আমাদের বর্তমান অবস্থানটা আমরা পরিষ্কার করেছি। আমরা জানিয়েছি আমরা প্রস্তুত আছি। আমাদের রোড অনুযায়ী আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে এবং আমরা যথা সময়ে ইলেকশন করবো।
সিইসি জানান, কিছু কিছু বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতবিরোধ আছে বলে নির্বাচন কমিশন মতবিনিময়ে তুলে ধরেছে। তবে তা অচিরেই দূর হবে বলে আশা করছে নির্বাচন কমিশন।
আমরা জানিয়েছি সব দল আলটিমেটলি ইলেকশনে আসবে বলে আমরা আশা করছি। তবে নিশ্চিত করে কোনো কিছু বলতে পারিনি। আমরা বলেছি, ইলেকশন অংশগ্রহণমূলক হলে চমৎকার কন্টেস্ট হবে। সেই লক্ষে আমাদের পুরোপুরি প্রস্তুতি রয়েছে।
সিইসি বলেন, ওনারা (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে চায়। আমরা বলেছি, অতীতেও নির্বাচন গণমাধ্যম কর্মীরা কভার করেন এবং পর্যবেক্ষকরাও থাকেন। সামনের নির্বাচনের সময়েও আমাদের দিক থেকে সব ওপেন করে দেয়া হবে। আমরা কোনো অন্তরায় করবো না। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ব্যাপারে আমাদের একটা পলিসি অনুযায়ী তারা আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা সেগুলো পাঠিয়ে দিব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। বিষয়টি দ্বিপাক্ষিকভাবে সুরাহা করতে হয়।
পলিটিক্যাল ডায়লগের জন্য কোনো পক্ষকে নির্বাচন কমিশন বলেছে কি না প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আমি যেটা ওনাদেরকে বলেছি, আমরা ইলেকশন কমিশন থেকে একাধিকবার বলেছি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা প্রয়োজন। তাদের মধ্যে এগ্রিমেন্টের প্রয়োজন আছে। যেন ইলেকশনটা সুষ্ঠ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। এই আবেদনটা আমরা প্রথম থেকে করে আসছি। তারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে বলেছেন যে নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের এলাউ করবেন। তার সঙ্গে বিদেশি ডেলিগেট দেখা করার পর এমন আশ্বাস দেয়ায় তারা আনন্দিত। আমরাও আনন্দিত। বিদেশি পর্যবেক্ষকরা যদি ভোট দেখেন তাহলে বিদেশিরাও দেখবে আমাদের নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়েছে।
মতবিনিময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা ইভিএম সম্পর্কে জানতে চান জানিয়ে সিইসি বলেন, ইভিএম সম্পর্কেও উনারা প্রশ্ন করেছেন। ইভিএম নিয়ে আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারছি না। কারণ ইভিএম এভেলভেল হবে কি না এবং আমরা কি পরিমান ইভিএম নির্বাচনে ব্যবহার করতে পারবো এ বিষয়ে এখন নিশ্চিত হতে পারি নাই।
মতবিনিময়ে সিইসির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর ও নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান, ইসি সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অ্যাম্বাসেডর চার্লস হোয়াইটলির নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডেপুটি হেড অব মিশন ব্রেন্ড স্পাইনার, ডেনমার্কের অ্যাম্বাসেডর ইউনি স্ট্র্যাপ পিটারসন, সুইডেনের অ্যাম্বাসেডর আলেকজান্ডার বার্গ বন, জার্মানির অ্যাম্বাসেডর আচিম টোস্টার, কিংডম অব নেদ্যারল্যান্ডসের অ্যাম্বাসেডর এনি গিরার্ড ভ্যান লুইন, ফ্রান্সের ডেপুটি হেড অব মিশন গিলিয়াম এড্রেন ডে কের্ডেল, ইতালির ডেপুটি হেড অব মিশন মাটিয়া ভেনচুরা, স্পেনের হেড অব মিশন ইগনাসিয়ো সাইলস ফার্নান্দেজ, সুইজারল্যান্ডের অ্যাম্বাসেডর নাথালি চুয়ার্ড, নরওয়ের অ্যাম্বাসেডর এস্পেন রিক্টার সেভেন্ডসেন প্রমুখ বৈঠকে ছিলেন।