স্টাফ রিপোর্টার- পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, মিয়ানমার সীমান্তের শূন্য রেখায় আর কোনো রোহিঙ্গা নেই। আর যারা ঢুকেছেন তাদের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। ইমদাদ হকের সার্বিয়া ভ্রমণবিষয়ক ‘সার্বিয়া: শুভ্র শহরের দেশে’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন ড. মোমেন।
অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অনেক বছর ধরে শূন্য রেখায় কিছু রোহিঙ্গা ছিল। এরা মাদকবিক্রেতার সঙ্গে জড়িত ছিল। তবে এখন রাখাইনে দুই পক্ষ যুদ্ধ করছে। তারাই এসব রোহিঙ্গাদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। আর এর মধ্যে কিছু রোহিঙ্গা আমাদের এখানে ঢুকে পড়েছে। যেসব ঢুকেছে, ঢুকেছে। তবে আমরা আর কোনো রোহিঙ্গাকে নেব না। তবে ভালো খবর হলো এই, সেখানে (শূন্য রেখায়) আর কোনো রোহিঙ্গা নেই। তবে আমাদের কিছু অসুবিধা হচ্ছে, দেখা যাক কী হয়।
তিনি বলেন, সেখানের কিছু লোক ঢুকে গেছেন। কী করবেন। সব লোককে ঢুকতে দেইনি। তবে যারা ঢুকেছেন তাদের আমরা নম্বর (রেজিস্ট্রেশন) দিচ্ছি। আবার এদের মধ্যে অনেকের ইউএনইচসিআর’র কার্ডও রয়েছে।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে ড. মোমেন বলেন, লাতিন আমেরিকা ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে আমরা সম্পর্ক বাড়াতে চাই। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।
এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। স্বপ্নের সোনার বাংলা অর্জনের জন্য আমাদের কূটনীতিকদের আগামী দিনগুলোতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। ২৮তম বিশেষায়িত কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ কোর্সের (এসডিটিসি) সার্টিফিকেট বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে পররাষ্ট্র সচিব রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন তার বক্তব্যে বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ফরেন সার্ভিস একাডেমির প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ভবিষ্যতের কূটনীতিকদের প্রস্তুত, সুসজ্জিত ও সুসংগঠিত করতে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের জন্য একটি অনন্য সংবিধান দিয়ে গেছেন, যা সবার জন্য মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা দেয়। বঙ্গবন্ধু আমাদের জন্য একটি সুন্দর স্বপ্ন রেখে গেছেন, আর তা হলো সোনার বাংলার স্বপ্ন, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন, যেখানে সব অধিকার সবার জন্য নিশ্চিত হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে অক্লান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আর শেখ হাসিনার কারণে আমরা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অনেকগুলো লক্ষ্য ইতোমধ্যে অর্জন করেছি। একইভাবে ২০৪১ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা অর্জনের পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তার বক্তব্যে আশা প্রকাশ করে বলেন, আমাদের তরুণ কূটনীতিকরা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের উপযুক্ত করে গড়ে তুলবেন এবং বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’- এই পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করতে সহায়তা করবেন।
দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ থাকার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে নবীন কূটনীতিকদের উদ্দেশ্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রশিক্ষণে আপনারা অনেক কিছু শিখেছেন, ভবিষ্যতে আরও অনেক প্রশিক্ষণে অংশ নেবেন এবং আপনাদের চাকরিকালেও অনেক কিছু নিশ্চয়ই শিখবেন। তবে একটি জিনিস যা আপনাকে সবসসময় অনুপ্রাণিত করবে, তা হলো- এই বাংলাদেশের প্রতি ভালবাসা। যদি আপনি নিজের প্রতি সৎ থাকেন, দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি আপনার অকৃত্রিম ভালবাসা থাকে, তাহলে আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে কোনকিছু বাধা হতে পারবে না।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন প্রশিক্ষণ কোর্সটি সফলভাবে শেষ করার জন্য ফরেন সার্ভিস একাডেমি এবং প্রশিক্ষণার্থী অফিসারদের অভিনন্দন জানান। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণে উদ্ভাবনী ও বাস্তব কৌশল অবলম্বন করে দায়িত্ব পালনের জন্য তরুণ কূটনীতিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
ফরেন সার্ভিস একাডেমির রেক্টর রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস স্বাগত বক্তব্যে স্মার্ট বাংলাদেশের রূপকল্প অনুযায়ী তরুণ কূটনীতিকদের প্রস্তুত করতে একাডেমির অব্যাহত প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে বলেন, আজকের তরুণ কর্মকর্তাদের হাত দিয়েই আগামীর সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ সম্ভব হবে।
ইন্সপেক্টর জেনারেল অব মিশনস রাষ্ট্রদূত আসাদ আলম সিয়াম নবীন কূটনীতিকদের জন্য একটি সমৃদ্ধ ও উপযুক্ত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ফরেন সার্ভিস একাডেমি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগের প্রশংসা করেন।
ফরেন সার্ভিসের নবীন কর্মকর্তাদের জন্য বিশেষায়িত কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ কোর্সটি প্রতি বছর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পরিচালিত হয়। ২৮তম বিশেষায়িত কূটনৈতিক কোর্সটি ২০২২ সালের মার্চ থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ৩৮তম বিসিএস (পররাষ্ট্র) ক্যাডারের ১২ জন তরুণ কর্মকর্তা অংশ নেন।
সার্টিফিকেট প্রদান অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজিমুদ্দিন খান এবং মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রদূত ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব প্রয়াত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলীর সহধর্মিণী তুহফা জামান আলী বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।