স্টাফ রিপোর্টার- নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক মহান মুক্তিযুদ্ধে রক্তদানের মাধ্যমে। ৫০ বছর ধরে এ সম্পর্ক বিদ্যামান আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়ে এ সম্পর্ক অন্যম রকম উচ্চতায় পৌঁছেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও কয়েকবার বাংলাদেশে এসেছেন। করোনা মহামারির সময়েও তিনি বাংলাদেশে এসেছেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ভারতের মধ্যো ব্য্বসা-বাণিজ্যা, শিক্ষা ও সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভালো সম্পর্ক রয়েছে। গঙ্গা বিলাসের এই সফরের মধ্য্ দিয়ে তা পশ্চিমা দেশে পৌঁছে গেছে। তাদের মাধ্যনমে সমগ্র পৃথিবীতে চলে গেছে। গঙ্গা বিলাস জাহাজটি যখন বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে যাবে, তখন বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বকে ছড়িয়ে দিয়ে আরও রঙিন করে দিয়ে যাবে।
মোংলা বন্দরে ভারতীয় ক্রুজ ভেসেল এমভি গঙ্গা বিলাস -এর আগমন উপলক্ষে পর্যটকদের অভ্যর্থনা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
মোংলা বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মীর এরশাদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা, সুইজারল্যাখন্ডের পর্যটক হ্যান্স কাফম্যান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল,বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক।
উল্লেখ্য, ভারতের পর্যটকবাহী নৌযান এমভি গঙ্গা বিলাস গতকাল ৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের জলসীমানায় প্রবেশ করে। ‘গঙ্গা বিলাস’ এর পর্যটকদের বাংলাদেশের খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার আংটিহারায় অনবোর্ড ইমিগ্রেশন করা হয়েছে। আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি ‘গঙ্গা বিলাস’ বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করবে।
যে পথে বাংলাদেশ পাড়ি দেবে গঙ্গা বিলাস
বাংলাদেশে প্রবেশের পর সুন্দরবন এলাকা পরিদর্শন করে এই জাহাজের বিদেশি পর্যটকরা মোংলা বন্দর ঘুরে দেখবেন। তারপর যাবেন বাগেরহাটের ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদে। সেখান থেকে বরিশাল ঘুরে চলে যাবেন মেঘনা ঘাটে। সেখানে নোঙর করার পর দুই দিন সোনারগাঁ ও ঢাকায় ঘুরবেন তারা।
পরে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ হয়ে যাত্রীরা কুড়িগ্রামের চিলমারীতে যাবেন। সেখানে রংপুরের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণ করবেন তারা। এরপর চিলমারী থেকে ভারতের আসামে প্রবেশ করবে গঙ্গা বিলাস।
এমভি গঙ্গা বিলাস বাংলাদেশে আগমন উপলক্ষে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বাংলাদেশের জলসীমায় সার্বিক সহযোগিতা দেবে। স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) অনুযায়ী প্রটোকল রুটের নাব্য রক্ষা, বার্দিং সুবিধা নিশ্চিতকরণ ও নৌপথ ব্যবহারের জন্য ভয়েজ পারমিশন প্রদান এবং ভয়েজ পারমিশনের সার্বিক মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকবে বিআইডব্লিউটিএ।
আংটিহারায় অনবোর্ড কাস্টমস এবং ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এবং এনবিআর। চিলমারীতে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ও এনবিআর। বাংলাদেশের নৌপথ অতিক্রমকালে জাহাজটিকে যথাযথ নিরাপত্তা বিধান করার পদক্ষেপ নেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এন্ট্রি পয়েন্ট আংটিহারাতে সব যাত্রী ও নাবিকের কোভিড-১৯ সনদ পরীক্ষা করার ব্যবস্থা নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে।
নৌযানটির ভয়েজ পরিচালনাকালে সার্বক্ষণিক মনিটর করবে জাহাজ অপারেটিং কোম্পানি মেসার্স গালফ ওরিয়েন্ট সীওয়েজ; দর্শনীয় স্থানগুলো পরিদর্শনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় সাধন করবে ট্যুর অপারেটর কোম্পানি জার্নিপ্লাস।
এর আগে বিলাসবহুল গঙ্গা বিলাস’ ভারতের উত্তর প্রদেশের বারাণসী থেকে ১৩ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করেছে। সেদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভার্চুয়ালি ‘গঙ্গা বিলাস’-এর যাত্রা উদ্বোধন করেন।
১৯৭২ সালের প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেডের (পিআইডব্লিউটিটি) অধীনে বাংলাদেশ-ভারত নৌপথে বাণিজ্য শুরু হয়েছিল; যা এখনও কার্যকর আছে। প্রটোকলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যাত্রী ও পর্যটকবাহী নৌযান চলাচলে ২০১৫ সালে বাংলাশ-ভারতের মধ্যে কোস্টাল ও প্রটোকল রুটে যাত্রী ও ক্রুজ সার্ভিস চালুর লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। সেই আলোকে ২০১৮ সিলে এসওপি সই হয়। এর আওতায় ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ অভ্যন্তরীণ নৌপথে যাত্রী ও ক্রুজ সার্ভিস চালুর পর থেকে তিনটি ভারতীয় ও একটি বাংলাদেশি নৌযান চলাচল করেছে।