Search
Close this search box.

মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে খুন করে ডাকাতির নাটক সাজায় মাসুদ

স্টাফ রিপোর্টার- অঢেল সম্পত্তির অংশ দুই মেয়েকে দিতে পারেন এমন আশঙ্কায় মুক্তিযোদ্ধা বাবা আ. হালিম (৭২) কে খুন করেন তারই একমাত্র ছেলে এইচ এম মাসুদ। পূর্বপরিচিত এক অটোরিকশাচালকের সহযোগিতায় বাবাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন মাসুদ ।

মৃত্যু নিশ্চিত হতে ডিজিটাল প্রেশার মাপার মেশিন দিয়ে যাচাইও করেন। এরপর ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সাজান ডাকাতির নাটক। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই)  তদন্তে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

গত ৩১ জানুয়ারি দিবাগত রাতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. হালিম নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় তার নিজ বাসায় খুন হন। এ ঘটনায় ১ ফেব্রুয়ারি নিহতের জামাতা জাহের আলী ফতুল্লা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

শুক্রবার মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় পিবিআই’র এসআই মাজহারুল ইসলামকে। তদন্তভার গ্রহণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অটোরিকশাচালক রুবেলকে গ্রেফতার করে পিবিআই।

মামলার তদন্তকারী এ সংস্থা জানায়, পাঁচ লাখ টাকার চুক্তিতে বৃদ্ধ হালিমকে খুনের মিশনে অংশ নেয় অটোরিকশাচালক রুবেল। আর অটোচালকের গ্রেফতারের পর পরই খুনি মাসুদ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।  তাকে দেশে ফেরাতে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, একমাত্র ছেলে এইচএম মাসুদ (৪২) এবং ছেলের স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ফতুল্লার ধর্মগঞ্জ মাওলা বাজারে নিজ বাড়ির ২য় তলার ফ্ল্যাটে বসবাস করে আসছিলেন আ. হালিম। ৩১ জানুয়ারি দিনগত রাত আড়াইটার দিকে বাদী জানতে পারেন, তার শ্বশুরবাড়িতে ডাকাতি হয়েছে।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পান, শ্বশুর শয়নকক্ষের খাটে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন। তখন হালিমের ছেলে মাসুদ জানায়, তার স্ত্রী-সন্তান বেড়াতে গেছে। রাত আনুমানিত ১০টার দিকে বাসার গেট বন্ধ করে হালিম ও মাসুদ খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়েন।

এরমধ্যে ৩ জন তাদের ঘরে ঢুকে মাসুদের হাত-পা ও মুখ বেঁধে ৩২ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় হালিম তাদের বাধা দিলে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ডাকাতরা। একপযার্য়ে মাসুদের চিৎকারে ভাড়াটিয়ারা এসে তার বাঁধন খুলে দেয়।

তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ জানতে পারে , নিহতের পরিবারের পূর্বপরিচিত অটোরিকশাচালক মো. রুবেল নিয়মিত তাদের বাজার করাসহ অন্যান্য কাজকর্ম করে দিতেন। ঘটনার দিন রুবেলের অবস্থান নিহতের বাড়ির আশপাশে ছিল।

এমনকি রুবেলকে ঘটনার ২ দিন পর থেকে ওই এলাকায় আর দেখা যায়নি। সন্দেহ থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে বোনের বাসা থেকে রুবেলকে গ্রেফতার করা হয় এবং ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

রুবেলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পিবিআই জানায়, সম্পত্তি ভাগাভাগি এবং বাসায় রাখা নগদ টাকা একাই ভোগ করার হীন উদ্দেশ্যে বাবাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন মাসুদ। এজন্য সহতায়তা করতে রুবেলকে ৫ লাখ টাকা দেওয়ার চুক্তি করেন তিনি।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঘটনার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে মাসুদ ফোন করে অটোচালক রুবেলকে ডেকে নেন। রুবেল বাসায় ঢুকে মাসুদের ঘরে অবস্থান নেন। রাত ১১টার দিকে বৃদ্ধ হালিম ঘুমিয়ে পড়লে তারা দুজনেই তার রুমে যান। মাসুদ তার বাবার বুকের উপর উঠে হাত-পা চেপে ধরে এবং রুবেল হালিমের গলা চেপে ধরে।

হালিম চিৎকার করতে চাইলে রুবেল বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। মৃত্যু নিশ্চিত হতে মাসুদ ঘরে থাকা ডিজিটাল ব্লাড প্রেসার মাপার যন্ত্র দিয়ে বাবার প্রেসার মেপে নেন। পরে কথা অনুযায়ী রুবেলকে ৫ লাখ টাকা ও সিসিটিভির ডিবিআর বক্স দিয়ে ঘর থেকে চলে যেতে বলেন।

তবে যাওয়ার আগে ডাকাতির নাটক সাজাতে কাপড় শুকানোর দড়ি দিয়ে মাসুদের হাত-পা ও মুখ বেঁধে রুবেল বের হয়ে যান। পরে মাসুদের চিৎকারে তাদের অন্য ভাড়াটিয়ারা এসে মাসুদের বাঁধন খুলে দেন এবং সবার মধ্যে ডাকাতির ঘটনা হিসেবেই জানাজানি হয়।

পিবিআই নারায়নগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, চলে যাওয়ার সময় রুবেল ডিবিআর বক্সটি ভিকটিমের বাড়ির পেছনে ময়লার স্তুপে ফেলে দেন। যেটি রুবেলের দেখানোমতে সেটি উদ্ধার করা হয়। তার বাসা থেকে মাসুদের দেওয়া ৫ লাখ টাকার মধ্যে ৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, হালিম প্রায় ২০টি ঘর থেকে প্রতিমাসে ভাড়া পেতেন। এছাড়া, তিন তলার ভবনের দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটে তারা থাকতেন এবং বাকি দুই তলার ফ্ল্যাটেও ভাড়াটিয়া ছিল। এসব সম্পত্তির একাই ভোগ করতে মাসুদ তার বাবাকে হত্যা করেন।

ঘটনার প্রথমে এটি ডাকাতি হিসেবেই মনে হয়েছে, কারণ তাদের ঘরে ডাকাতির মতো সকল আলামতই ছিল। পরবর্তী তদন্তে সন্দেহভাজন হিসেবে রুবেলকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই আসল ঘটনা বেরিয়ে আসে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাসুদ নিজে কিছু করতেন না, বাবার সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত ভাড়া দিয়েই তারা চলতেন। মাসুদ মাদকাসক্তও ছিলেন না। বরং নিয়মিত তবলিগে যেতেন। সম্পত্তির একক নিয়ন্ত্রণ নিতে এবং সাংসারিক ছোটখাট বিষয় নিয়ে মনোমালিন্যের জেরে বাবাকে খুন করেন মাসুদ।

মাসুদ পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে গেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তাকে গ্রেফতার করতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে যোগাযোগসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ