Search
Close this search box.

সাড়ে ৫ বছর পর রোহিঙ্গামুক্ত হলো তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখা

স্টাফ রিপোর্টার- সাড়ে পাঁচ বছর পর রোহিঙ্গামুক্ত হলো বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ড। চার দফায় ৪২৯ পরিবারের এক হাজার ৮৯৭ রোহিঙ্গাকে উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরসংলগ্ন বালুখালী ট্রানজিট ক্যাম্পে সরিয়ে আনা হয়েছে। এতদিন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু এলাকার শূন্যরেখায় অবস্থান করেছিল এসব রোহিঙ্গা। গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শূন্যরেখার রোহিঙ্গাদের সরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছিল লাখ লাখ রোহিঙ্গা। ওই সময় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে আটকা পড়ে সাড়ে পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা। পরে সেখানে বসতি গড়ে সাড়ে পাঁচ বছর ধরে বসবাস করেছিল তারা।

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জানুয়ারি শূন্যরেখায় মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সঙ্গে মিয়ানমারের আরেকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় এক রোহিঙ্গা নিহত ও দুই শিশু আহত হয়। ঘটনার পর শূন্যরেখার ৬৩০টির বেশি ঘর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে রোহিঙ্গারা গৃহহীন হয়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আশ্রয় নেয়।

শূন্যরেখার বাসিন্দারা বলেছেন, ঘরবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে কেউ কেউ মিয়ানমারে আবার বেশিরভাগ বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। যাদের খোঁজ পাওয়া গেছে, তাদেরকে উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরসংলগ্ন বালুখালী ট্রানজিট ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে শূন্যরেখা রোহিঙ্গামুক্ত।

ঘুমধুম ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত তুমব্রু পশ্চিমকুল গ্রাম। গ্রামের দক্ষিণ দিকে ১০০ গজ দূরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তুমব্রুরাইট পাহাড়। সেখানে দেশটির বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সীমান্তচৌকি রয়েছে। একটি ছোট খাল মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তকে ভাগ করেছে। দুই দেশের মাঝামাঝি স্থানটি শূন্যরেখা হিসেবে পরিচিতি। সেটি এখন খালি পড়ে আছে। বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে শূন্যরেখার বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার চিহ্ন দেখা গেছে। আগুনে সেখানের গাছপালাও পুড়ে গেছে।

বাংলাদেশ-মিয়ানমারকে আলাদা করা শূন্যরেখা জিরো পয়েন্ট নামেও পরিচিত। দুই দেশের আওতার বাইরে থাকায় এখানে অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। এটিকে ‘সেফজোন’ হিসেবে ব্যবহার করেছিল তারা।

গত সেপ্টেম্বর মাসে রাখাইন রাজ্যের তুমব্রুরাইট পাহাড় থেকে গুলি, আর্টিলারি ও মর্টারের গোলা ছুড়েছিল বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। গোলার বিকট শব্দে কেঁপেছিল এপারের তুমব্রুর পশ্চিমকুল, ক্যাম্পপাড়া, বাজারপাড়া, কোনারপাড়া, খিজারিঘোনা ও ভূমিহীন পাড়াসহ অন্তত ১৫ গ্রাম। আতঙ্কে ছিলেন এসব গ্রামের মানুষজন।

এরপর গত নভেম্বরে শূন্যরেখায় অবস্থান নেওয়া আরসা ও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। সেসময়ে মাদক চোরাচালানিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় র‌্যাব। । শেষ পর্যন্ত শূন্যরেখার রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়ার মধ্য দিয়ে আতঙ্কমুক্ত হন সীমান্তের বাসিন্দারা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ