শিল্পমন্ত্রী জনাব নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি বলেছেন, পাটখাত বিকাশের লক্ষ্যে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে প্রতিবছর জাতীয় পাট দিবস উদযাপিত হচ্ছে। প্রয়োজনীয় গবেষণা ও যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে সম্ভাবনাময় পাটখাতের যুগোপযোগীকরণ, সৃজনশীল প্রয়োগ এবং এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিতকরণের জন্য আমাদের সরকার নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
সোমবার (৬ মার্চ) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় পাট দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বীরপ্রতীক,এমপি। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বস্ত্র ও পাট সচিব মোঃ আব্দুর রউফ।
এসময় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান, নির্দেশনা ও পরামর্শে আমরা পাটখাতের প্রবৃদ্ধির ধারাকে বেগবান করতে পেরেছি। পরিবেশবান্ধব পাট জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
শিল্পমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা আমাদের ঐতিহ্যকে ধারণ করে বহুদূর এগিয়ে যেতে চাই।
বাংলাদেশের পাটপণ্য যাতে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয় সেলক্ষ্যে আমাদের কাজ করে যেতে হবে। এজন্য প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নিয়মিত গবেষণা ও উদ্ভাবন। পাটের উন্নত চাষাবাদ ও বহুমুখী ব্যবহারের জন্য আমাদের গবেষকরা কাজ করছেন। ভবিষ্যতে আরো ব্যাপক পরিসরে উন্নত গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা হবে। মেধা ও মননের সমন্বয়ে আমরা নিশ্চয়ই নিত্য নতুন বিশ্বমানের বহুমাত্রিক সামগ্রী তৈরি করতে সক্ষম হব।
সভাপতির বক্তব্যে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, বর্তমান টেকসই উন্নয়নের যুগে বিশ্বব্যাপী পরিবেশবান্ধব পাট ও পাটপণ্যের চাহিদাকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। পাটের মত পরিবেশবান্ধব পণ্য আর নেই। আমাদের বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে পাটের জীবন রহস্য উন্মোচনের ফলে পাট বিষয়ক গবেষণা ও উন্নয়নের পথ সুগম হয়েছে। আমার চাই, এখন গবেষণার মাধ্যমে পাটের আরো মূল্য সংযোজিত স্মার্ট পণ্য উৎপাদনের পথ সুগম হোক। এজন্য আমাদের পাটের গবেষকদের আরও আন্তরিক গবেষণা প্রত্যাশা করি।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী পাটপণ্যকে ‘বর্ষপণ্য ২০২৩ এবং পাটকে কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে। আমি, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, পাটচাষী, পাটপণ্যের উৎপাদনকারী ব্যবসায়ী, বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উদ্যোক্তা, পাটজাত পণ্যের ব্যবহারকারীগণ, ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আমি আশা করি, পাটখাত সংশ্লিষ্ট অংশীজনবৃন্দ এখাতের সমৃদ্ধিকে আরও বেগবান করতে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
তিনি বলেন, আমরা পাটের উৎপানের দিকে যেমন গুরুত্ব দিচ্ছি পাটপণ্য উৎপাদনে আরও জোর দিচ্ছি। জুট ভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) এর বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উদ্ভাবন, সম্প্রসারণে কাজ করেছে। জেডিসি পাটপণ্য উৎপাদনকারী, বিপণনকারী, ব্যবহারকারী এবং বিদেশিদের সাথে অধিক যোগাযোগ স্থাপনে সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে। ইতোমধ্য অনেকেই দৃষ্টিনন্দন, আধুনিক ও স্মার্ট বহুমুখী পাটপন্য উৎপাদন করছেন যার অধিকাংশই বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পাটখাতে সরকার অংশীজনদের নীতি সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। পাটখাতের আরেকটি সম্ভাবনাময় দিক উন্মোচন করেছে চারকোল। চারকোলের সম্ভবনা বিপুল। আমরা পাঠকাঠি দিয়ে চারকোল বানিয়ে তা রফতানি করে ডলার আয় করছি। পাটপণ্যের রপ্তানি বড়াতে নানা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাটের উৎপাদন বহুগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে।
পাটমন্ত্রী বলেন, সবার বক্তব্য শুনে মনে হলো আমি মন্ত্রী না হয়ে পাটচাষী হলে আরও ভালো হতো। প্রধানমন্ত্রী গত মাসে পাটপণ্যকে বর্ষপণ্য হিসাবে ঘোষণা করেছেন এবং পাটকে কৃষিপণ্য হিসাবে ঘোষণা দিয়েছেন। এজন্য আমর প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, দেশে পাটবীজের ঘাটতি রয়েছে। এজন্যে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। তবে সেটিও অপ্রতুল। পাটবীজের উৎপাদন বাড়াতে আমরা কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাথে যৌথভাবে কাজ করছি।
যে কোন প্রয়োজনে রফতানিকারকদের জন্যে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রণালয়ের দড়জা খোলা রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, রফতানিকারকদের জন্যে আমরা বসে আছি, আপনাদের সমস্যা দূর করার জন্যে। আমরা ১০০ ভাগ চেষ্টা করবো আপনাদের সমস্যা দূর করতে। তিনি আরও বলেন, পাটের ব্যাগের ব্যবহার ঠিকমতো হচ্ছেনা। পাটের ব্যাগ ব্যবহারে অভিযান আরও বেশি জোরদার করতে আমরা পাট অধিদফতরকে নির্দেশ দিয়েছি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী আরো বলেন, বিশ্বে পাটের জন্যে আমাদেরর বাজার অনেক বড়। পরিবেশ আন্দোলন আমাদের সহায়ক হিসাবে কাজ করছে। আন্তর্জাতিকভাবে পরিবেশ আন্দোলনে যেভাবে সহায়তা দিচ্ছে, সেখানে পাটকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আপনাদের (রফতানিকারকদের) যেতে হবে। পাটপণ্যের বহুমুখীকরণ করতে হবে।
এসময় ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী পাটকে কৃষিপণ্য হিসাবে ঘোষণা দিয়েছেন। আমি দাবি করতে চাই পাটকে বহুমুখী কৃষিপণ্য হিসাবে ঘোষণা করা হোক।
‘পাট শিল্পের অবদান, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ’ প্রতিপাদ্যে প্রতিবছরের মতো এবারও নানা আয়োজনের মাধ্য দিয়ে জাতীয় পাট দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ও পাটপণ্যের প্রর্দশনীর আয়োজন করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। পাট ও পাটজাত পণ্যের উৎপাদন ও রফতানি বৃদ্ধিতে অবদানের জন্য এ বছর ১১ ব্যবসায়ী, বিজ্ঞানী, চাষি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেওয়া হয়। একইসঙ্গে পাট সংশ্লিষ্ট ৯ সংগঠনকেও সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।
পাট দিবস উদযাপন ও পাটখাতে বিশেষ অবদানের জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ব্যাক্তি/প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দিতে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।