এ পাইপলাইন দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়ক হবে – শেখ হাসিনা
বাংলাদেশের উন্নয়নকে আরও গতিশীল করবে এ পাইপলাইন – নরেন্দ্র মোদি
স্টাফ রিপোর্টার – বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইনের উদ্বোধন করা হয়েছে। শনিবার ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এটি উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ১৩২ কিলোমিটার পাইপলাইনে ভারতের শিলিগুড়ি থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুরে আসবে ডিজেল। শেখ হাসিনা বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এ পাইপলাইন দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়ক হবে। ডিজেল আমদানিতে সময় ও ব্যয় কমবে। নরেন্দ্র মোদি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নকে আরও গতিশীল করবে এ পাইপলাইন।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রথম আন্তঃসীমান্ত জ্বালানি তেলের পাইপলাইন নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ৩৭৭ কোটি রুপি। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে ব্যয় প্রায় ২৮৫ কোটি রুপি। ভারত সরকার এ অর্থ বহন করেছে। ভারতের অভ্যন্তরে ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত পাইপলাইনটি বিস্তৃত। সেখানে খরচ হয়েছে বাকি অর্থ।
বার্ষিক ১ মিলিয়ন টন হাই-স্পিড ডিজেল (এইচএসডি) পরিবহনের সক্ষমতা রয়েছে এ পাইপলাইনের। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের সাত জেলায় প্রাথমিকভাবে উচ্চগতির ডিজেল সরবরাহ করবে এটি।
এরআগে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে বাংলাদেশে হাই স্পিড ডিজেল (এইচএসডি) পরিবহনের একটি টেকসই, নির্ভরযোগ্য, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা গড়ে উঠবে বলে জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় অনুসারে, এর ফলে দু’দেশের মধ্যে জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরো বৃদ্ধি পাবে।
দুই দেশের মধ্যে জ্বালানি পরিবহনে দক্ষিণ এশিয়াতে এই উদ্যোগ প্রথম গ্রহণ করল বাংলাদেশ এবং ভারত। ভবিষ্যতে এ উদ্যোগ আন্ত:দেশীয় জ্বালানি সহায়তা বৃদ্ধিতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য বড় উদাহরণ হিসেবে কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ভারতের নুমালিগড় শোধনাগার থেকে বছরে ১০ লাখ টন ডিজেল সরবরাহের জন্য চুক্তি করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। রেলওয়ে ওয়াগনে করে ডিজেল পরিবহন শুরু হলেও শনিবার থেকে পাইপলাইনে আসবে। ইতোমধ্যে পানি প্রবাহিত করে পাইপলাইনটির টেস্টিং শেষ হয়েছে।
বিপিসির তরফ থেকে বলা হচ্ছে প্রকল্পটির জন্য উত্তরের ১৬ জেলাতে ডিজেল সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। বিশেষ করে দেশের কৃষি বা ধান উৎপাদনের বড় হাব এই জেলাগুলো। যেখানে বোরো মৌসুমে ডিজেল পৌছানে অনেক ক্ষেত্রে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এজন্য পদ্মা এবং যমুনা খনন করে তেলবাহি জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হয়। এখন পাইপলাইনে ডিজেল আসাতে সেই সংকট দূর হবে। পাইপলাইনটির সঙ্গে সরসারি সৈয়দপুর ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এর আগে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশিয়াতে নতুন উদ্যোগের পথ দেখিয়েছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে অনুসরণ করে নেপাল সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে গ্রিড লাইন নির্মাণ করেছে। পাইপলাইন নির্মাণের জন্য ৩০৬ কোটি ২৩ লাখের পুরোটাই ভারত সরকার বাংলাদেশকে অনুদান হিসেবে দিয়েছে। শুরুতে ভারত ঋণ দিতে চাইলেও বিপিসি ভারতের প্রস্তাবে সম্মত না হওয়াতে অনুদান হিসেবে পাইপলাইন নির্মাণের অর্থ দেওয়া হয়েছে।
ভারত বাংলাদেশ মিলিয়ে ১৩১ দশমিক ৫০ কিলোমিটার পাইপলাইনে বাংলাদেশে ১২৬ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার এবং ভারতের অংশে পাঁচ কিলোমিটার। ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারী লিমিটেড এর শিলিগুড়ির মার্কেটিং টার্মিণালের সঙ্গে পাইপ লাইনটিকে সংযুক্ত করা হয়েছে।
২০১২ সালের ৬ ডিসেম্বর পাইপলাইনে তেল আমদানি করতে ভারতের কাছ থেকে প্রস্তাব পায় বাংলাদেশ। বর্তমানে ক্রুড ও পরিশোধিত তেল সামুদ্রিক জাহাজ, নৌজাহাজ, ওয়াগন ট্রেন এবং ট্যাংক লরিতে পরিবহন করা হচ্ছে। দীর্ঘকাল ধরে এ চার উপায়ে বিদেশ থেকে আমদানি থেকে শুরু করে প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু এতে সিস্টেম ও খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়তে থাকার যুক্তি এনে তেল পরিবহনে পাইপলাইন ব্যবহারের পরিকল্পনা করে সরকার।
এরই অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বরে ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন’ নির্মাণে ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করা হয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এটি চালু করার লক্ষ্য থাকলেও তা সম্ভব হয়নি।