Search
Close this search box.

আয়ারল্যান্ডকে উড়িয়ে রেকর্ড গড়ে জিতল বাংলাদেশ

আয়ারল্যান্ডকে উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ – তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ডকে উড়িয়ে রেকর্ড গড়ে জিতল বাংলাদেশ। ১৮৩ রানের বিশাল জয় পেল টাইগাররা। বাংলাদেশ নিজেদের ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে রানের দিক দিয়ে সবচেয়ে বড় জয়টি পায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, ২০২০ সালে সিলেটেই। ১৬৯ রানে জিতে। এবার সেই জয়কেও হার মানায় বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও অভিষেক ওয়ানডে খেলতে নেমে দেশের হয়ে ইতিহাস গড়া ম্যাচ সেরা তৌহিদ হৃদয় অসাধারণ ব্যাটিং করেন। চতুর্থ উইকেটে সাকিব ও হৃদয়ের ১৩৫ রানের জুটিতে ৩৩৮ রানও করে বাংলাদেশ। ৮ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে এই রান করে বাংলাদেশ। সাকিব ৯৩ ও হৃদয় ৯২ রান করেন। পেসার গ্রাহাম হিউম ৪ উইকেট শিকার করেন। জবাব দিতে নেমে ৩০.৫ ওভারে ১৫৫ রান করতে পারে আয়ারল্যান্ড। অল আউট হয়ে যায়। ব্যাট হাতে স্টিফেন ডোহেনি ৩৪, পল স্টারলিং ২২ ও শেষে জর্জ ডকরেল ৪৫ রান করেন। বল হাতে পেসার ইবাদত হোসেন ৪টি ও নাসুম আহমেদ ৩টি  উইকেট নেন। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে জিতে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ।

আয়ারল্যান্ডের দুই ওপেনার স্টিফেন ডোহেনি ও পল স্টারলিং মিলে ভালোই এগিয়ে যান। ৬০ রান পর্যন্ত দুইজন এগিয়ে যান। এমন সময়ে সাকিব বল করতে এসে স্টিফেনকে (৩৪) আউট করে দেন। আয়ারল্যান্ডের বিপদ যেন এসে পড়ে। কিছুক্ষন যেতেই আবার স্টারলিংকে (২২) আউট করে দেন ইবাদত হোসেন। ২ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় আয়ারল্যান্ড। ৬৮ রান যখন হয়, তখন হ্যারি টেকটরকে (৩) আউট করে দেন ইবাদত। যেখানে ৫৯ রান পর্যন্ত কোন উইকেট হারায়নি আয়ারল্যান্ড। সেখানে ৬০ রান হতেই যেই সাকিব উইকেট শিকার করেন টপাটপ ৬৮ রানের মধ্যে ৩ উইকেটের পতন ঘটে যায়।

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে রানের দিক দিয়ে ২০০৮ সালের মার্চে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় ৮৪ রানে জিতেছিল। যেভাবে উইকেট পড়তে থাকে, মনে হচ্ছিল, এবার আরও বড় জয় মিলবে। তাই মিলল।

৭৩ রান হতেই অ্যান্ডি বালবির্নিকে (৫) আউট করে দেন পেসার তাসকিন আহমেদ। আর ৩ রান যোগ হতেই আবারও তাসকিন উইকেট শিকার করেন। এবার লরকান টাকারকে (৬) আউট করে দেন। ৫ উইকেট এত অল্প রানে হারিয়ে খাদের কিনারায় পড়ে যায় আয়ারল্যান্ড।

নাসুম আহমেদ তো মহা ঝলক দেখান। আইরিশরা ১১৮ রান করতেই আরও ৩ উইকেট হারায়। ৩টি উইকেটই শিকার করেন নাসুম। শেষে ইবাদত আরও ২ উইকেট শিকার করে নেন। ১৫৫ রানের বেশি করতে পারেনি আয়ারল্যান্ড।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৫৩তম হাফসেঞ্চুরি করেন সাকিব। ৬৫ বলে ২ চারে ৫০ রান করেন। দশম সেঞ্চুরির কাছেও চলে যান। কিন্তু দলের যখন ২১৬ রান, তখন ৮৯ বলে ৯ চারে ৯৩ রান করে আউট হয়ে যান। চতুর্থবারের মতো নার্ভাস নাইনটিসে গিয়ে আউট হলেন সাকিব। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম ওয়ানডেতে ৫৫ বলে ৫ চারে ৫০ রান করে অভিষেক ওয়ানডেতেই হাফসেঞ্চুরি করে দেখিয়েছেন তৌহিদ হৃদয়। যখন ৬৪ রান করেন, তখনই বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি রান করে ইতিহাস গড়েন হৃদয়। এরআগে ২০১১ সালে ওয়ানডে অভিষেকে ৬৩ রান করেছিলেন নাসির হোসেন।

আয়ারল্যান্ড টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতে বিপদে পড়ে। ৮১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বসে। সেখান থেকে যে চতুর্থ উইকেট জুটিতে নিজেদের ক্যারিশমা দেখানো শুরু করেন সাকিব ও হৃদয়, তা চলতে থাকে। দুইজন মিলে দলকে ১০০ রানে নিয়ে যান। ১৫০ রানে নিয়ে যান। এমনকি দুর্দান্ত ব্যাটিং করে ২০০ রানেও নিয়ে যান। ২০০ রান হওয়ার আগেই যখন ১৮১ রান হয়, তখন ১০০ রানের জুটিও হয়ে যায়। যখন দুইজন মিলে ১৩১ রানের জুটি গড়েন, তখনই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের জুটি হয়ে যায়।

অধিনায়ক তামিম ইকবাল (৩), ওপেনার লিটন কুমার দাস (২৬) ও নাজমুল হোসেন শান্ত (২৫) আউট হওয়ার পর সাকিব ও হৃদয় মিলে জুটি গড়া শুরু করেন। সেই জুটি দলকে ২০০ রানের উপরে নিয়ে গিয়ে থামেন। এরপর পঞ্চম উইকেটে হৃদয় ও মুশফিকুর রহিম মিলেও ৫০ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। যখন দলের ২৯৬ রান হয় ২৬ বলে ৩ ছক্কা ও ৩ চারে ৪৪ রান করে আউট হয়ে যান মুশফিক। ততক্ষনে হৃদয় ও মুশফিক মিলে ৮০ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রানের স্কোরও গড়া হয়ে যায় বাংলাদেশের। এরআগে ২০১৯ সালে ডাবলিনে ৪ উইকেটে ২৯৪ রান করেছিল বাংলাদেশ।

এক রান যোগ হতেই হৃদয়ও আউট হয়ে যান। আর ৩ রান হলেই দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে ওয়ানডেতে অভিষেকেই প্রথম সেঞ্চুরি গড়ার ইতিহাস গড়তে পারতেন হৃদয়। কিন্তু ৮৫ বলে অসাধারণ ব্যাটিং করে ৮ চার ও ২ ছক্কায় ৯২ রান করে বোল্ড হয়ে যান হৃদয়। ইয়াসির আলী রাব্বি ব্যাট হাতে নেমে ছক্কা চার হাকিয়ে ১৭ রান করে রান আউট হয়ে যান। তবে দলকে ৩৩১ রানে রেখে যান। ইনিংস শেষ হতে ৪ বল থাকে। নাসুম আহমেদ অপরাজিত ১১ ও মুস্তাফিজুর রহমান অপরাজিত ১ রান করেন। পেসার গ্রাহাম হিউম ৪ উইকেট শিকার করেন। বাংলাদেশ ৩৩৮ রান করে। আয়ারল্যান্ডের সামনে জিততে ৩৩৯ রানের টার্গেট দাড় হয়। এই টার্গেট নিয়ে যে জিততে পারবেনা আয়ারল্যান্ড, তা আগেই বোঝা গেছে। তাই হয়। রেকর্ড গড়ে জিতল বাংলাদেশ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ