ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, এক সপ্তাহে রাজধানীর কোনো ওয়ার্ডে ১০ জনের বেশি ডেঙ্গুরোগী পাওয়া গেলে, সেই ওয়ার্ডকে ‘লাল চিহ্নিত’ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হবে। এরপর ওই ওয়ার্ডে বিশেষ চিরুনি অভিযান চালাবে। বুধবার (২৩ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার সংলগ্ন এলাকায় এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসের কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান ।
মেয়র বলেন, আগামী শনিবার থেকে আমরা বিশেষ অভিযান শুরু করবো। যেটা ওয়ার্ডভিত্তিক। যে ওয়ার্ডে এক সপ্তাহে আমরা ১০ জনের অধিক ডেঙ্গুরোগী পাবো, সে ওয়ার্ডকে বিশেষ লাল চিহ্নিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করবো। সে ওয়ার্ডের এলাকাবাসী, সব হোল্ডিং-স্থাপনার মালিককে আমরা আহ্বান করছি, তারা যেন নিজ নিজ বাসাবাড়ি, স্থাপনা, আঙিনা নিজেরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন। আমরা এলাকাবাসীর দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রার্থনা করছি। সেদিন কেউ কাজে যাবেন না। এটাই সবচেয়ে বড় কাজ হবে।
মেয়র বলেন, নিজেদের জীবন যদি সুরক্ষিত রাখতে চাই, তাহলে এটাই হবে আমাদের গুরুদায়িত্ব। আমাদের এই কর্মসূচিতে আপনারা অংশ নেবেন। আমাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মী, মশককর্মী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা থাকবে। আমরা দিনব্যাপী চিরুনি অভিযান পরিচালনা করে এডিস মশার উৎসস্থলগুলোকে ধ্বংস করবো। যার মাধ্যমে আমরা ডেঙ্গুরোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবো।
এখন থেকে প্রতি শনিবার করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী, মশককর্মীসহ সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সব স্তরের জনগণকে নিয়ে মশা নিধনে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান ডিএসসিসি মেয়র।
এরমধ্যে ডিএসসিসির ৫, ২২, ৫৩ ও ৬০ নম্বর ওয়ার্ডে শনিবার বিশেষ অভিযান পরিচালনার কথা জানান শেখ তাপস।
তিনি বলেন, এই চারটি ওয়ার্ডে গত এক সপ্তাহে আমরা ১০ জনেরও বেশি রোগী পেয়েছি। এই চারটি ওয়ার্ডে শনিবার অভিযান পরিচালনা করবো। এরপর যদি আমরা দেখি যে, অন্য কোনো ওয়ার্ডে বা একাধিক ওয়ার্ডে এক সপ্তাহে ১০ জনের বেশি রোগী আসছে, তাহলে আমরা সে ওয়ার্ডগুলোতেও (পরের শনিবার বিশেষ অভিযান পরিচালনা) করবো।
ঢাকায় ডেঙ্গু কমানোর পরিকল্পনা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র শেখ তাপস বলেন, এখন ডেঙ্গুরোগের ভরা মৌসুম। এসময় তা ঊর্ধ্বগামী হওয়ার কথা। কিন্তু আপনারা লক্ষ্য করেছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও বলছে ঢাকা শহরে ডেঙ্গুরোগ এখন স্থিতিশীল। রোগীর সংখ্যা আমরা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পেরেছি। গতকালও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা ১০০ নিচে ছিল। ভরা মৌসুমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত দুরূহ হলেও আমরা কাজটি করে চলেছি। এজন্য ঢাকাবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতা ও সহায়তা আমাদের একান্তই কাম্য।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ঢালাওভাবে বলা যে, এটা কাজ করছে না, ওটা কাজ করছে না! ফলাফলই তো বলে দিচ্ছে কোনটা কাজ করছে। কীটনাশক যদি কাজ না করত তাহলে এই ভরা মৌসুমে ১০০ এর নিচে রোগী রাখা, কোনো দেশই তো পারছে না। যারা এ কথাগুলো বলছেন ওনারা কীটতত্ত্ববিদ নন। ওনারা আসলে বিভিন্ন (ধরনের) কীটনাশক বিক্রি করে ঢাকা সিটি করপোরেশনে চক্র সৃষ্টি করেছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভুঁইয়া বলেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা ঈমানের অঙ্গ। তাই আমি শিক্ষার্থীদের বলবো, তোমরা সবসময় তোমাদের আঙিনা পরিষ্কার রাখবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকার, সিটি করপোরেশন যেসব দিকনির্দেশনা দিচ্ছে, সেগুলো যদি তোমরা সবাই অনুসরণ করো তাহলে এই ক্যাম্পাসে কেউ ডেঙ্গুরোগে আক্রান্ত হবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানবীর হাসান সৈকত বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস ও ডেঙ্গুরোগ নিয়ন্ত্রণে সচেতন করছি। এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমের প্রতি সংহতি পোষণ করে ইতোমধ্যে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ডেঙ্গুরোগ নিয়ন্ত্রণে কার্যক্রম চালু করেছি।