ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, বরখাস্ত হওয়া ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহমেদ ভূঁইয়া নিরাপত্তা শঙ্কার কথা জানিয়ে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে আশ্রয় নেন। কিন্তু তিনি ইনসিকিউরড (নিরাপত্তা শঙ্কা) ফিল করছে এমন কোনো তথ্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) কিংবা পুলিশকে জানাননি। এছাড়া আমাদের কাছেও তিনি আসেননি।
শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
ডিবিপ্রধান বলেন, উনি (এমরান আহমেদ) নিরাপত্তা শঙ্কায় আছেন এমন তথ্য আমাদের কাছে নেই। মার্কিন দূতাবাসে উনি কেন গিয়েছে তা আমি জানি না। যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয় অনেকেই সেখানে যান। এরমধ্যে অনেকেই মিথ্যা তথ্য দিয়ে সেখানে (দূতাবাসে) যান। অনেকেই পলিটিক্যাল এসাইলাম পাওয়া জন্য সেখানে যান। তার নিরাপত্তার কোনো শঙ্কা থাকলে থানা পুলিশ কিংবা ডিবির কাছে আসতে পারেন।
এর আগে গতকাল শুক্রবার পুরো পরিবার নিয়ে মার্কিন দূতাবাসে আশ্রয় নেওয়ার কথা জানান এমরান আহমেদ। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আজ আমি বরখাস্ত হয়েছি। গেল চার-পাঁচ দিনে ফেসবুক মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে আমাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। সরকার কারাদণ্ড দিয়ে ভালোবাসার প্রতিদান দিয়েছে। আমার কাছে মার্কিন ভিসা নেই।’
শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে বিবৃতি সংক্রান্ত বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আসেন এমরান আহমেদ। শুক্রবার সকালে এমরান আহমেদকে বরখাস্তের বিষয়টি জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর অনুবিভাগের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দ্য বাংলাদেশ ল অফিসার্স অর্ডার, ১৯৭২–এর ৪ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহমেদ ভূঁইয়ার নিয়োগ আদেশ জনস্বার্থে বাতিলক্রমে তাকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন ও দুর্নীতির মামলা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি (বিবৃতি) পাঠিয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্বস্থানীয় দেড় শতাধিক ব্যক্তি। তাদের মধ্যে শতাধিক নোবেলজয়ী রয়েছেন।
এ বিষয়ে গত সোমবার হাইকোর্টের বর্ধিত ভবনের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এমরান। তিনি বলেন, আমি মনে করি, ড. ইউনূস একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তার সম্মানহানি করা হচ্ছে এবং এটি বিচারিক হয়রানি।
নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনসহ ১৬০ বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া খোলাচিঠির পক্ষে অবস্থান নেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহমেদ ভূঁইয়া। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পক্ষ থেকে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে পাল্টা বিবৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তাতে তিনি সই করবেন না বলে জানিয়ে দেন।
সাংবাদিকদের এমরান আহমেদ বলেন, ‘আমি মনে করি ড. ইউনূসের বিষয়ে যে বিবৃতি ও পাল্টা বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে সেটির প্রয়োজন নেই। ওনার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো চলছে তা অন্যভাবে ডিল করা যেতো। এটা ওনাকে চাপে রাখার জন্যই করা হচ্ছে বলে মনে হয়েছে। উনি বাংলাদেশের জন্যই যে শুধু সম্মান বয়ে এনেছেন তা কিন্তু নয়, উনি সারাবিশ্বের সম্পদ।’