স্মার্টফোন, কম্পিউটার এবং গাড়িসহ সব ধরনের যন্ত্রেই সেমিকন্ডাক্টর বা চিপ লাগে। বাংলাদেশে এই খাতের শুরু হয় উল্কাসেমির প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মোহাম্মদ এনায়েতুর রহমানের মাধ্যমে। তার আগে দুটো কোম্পানি থাকলেও সেগুলো সফল হয়নি। তিনি যখন চিপ বানানো শুরু করেন তখন বাংলাদেশে সেমিকন্ডাক্টর বিষয়ে কোনো জ্ঞান বা সচেতনতা ছিল না। পার্শ্ববর্তী ভারতসহ অন্যান্য দেশ এ সেক্টরে অনেক এগোলেও বাংলাদেশ এগোয়নি।
মাত্র চারজন দিয়ে শুরু করে এখন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ভারত ও বাংলাদেশ এই চার দেশে উল্কাসেমি ব্যবসা করছে। ২০০৭ সালে ব্যবসা শুরুর সময়টায় অর্থনৈতিক মন্দার জন্য তেমন উপার্জন না থাকায় বন্ধ হতে বসা প্রতিষ্ঠানটি নতুন উদ্যমে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০০৯-১০ সালের পর ব্যবসা ভালো হতে শুরু করে। এএমডি নামক আমেরিকার একটি কোম্পানি ভিয়েতনাম, ভারত, বাংলাদেশে এক্সপ্লোর করছিল। তখন বাংলাদেশে চিপ নিয়ে কাজ করার আইডিয়া এনায়েতের মাথায় আসে।
বর্তমানে সেমিকন্ডাক্টরের বৈশ্বিক বাজার ৬০০ বিলিয়ন ডলার। এ অবস্থায় আসতে ৭০ বছর লেগেছে। কিন্তু আগামী ছয় বছরে ১ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে। বাংলাদেশে খুব বেশি কোম্পানি নাই, মাত্র সাত-আটটি কোম্পানি এ খাতে কাজ করে। বাংলাদেশকে বৈশ্বিক বাজার ধরতে আরো কাজ করতে হবে।
সব ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইসে সেমিকন্ডাক্টর লাগে। ব্রেইনে পর্যন্ত চিপের ব্যবহার হচ্ছে। উল্কাসেমির সব ক্রেতা বিদেশি। প্রতিষ্টানটি মেডিকেল ইকুইপমেন্ট, কম্পিউটার, গাড়ি, অ্যাপলের মেমোরি, মেটা, গুগল, মাইক্রোসফটের চিপ সহ সবধরণের চিপ নিয়ে কাজ করে। তবে শুধু ডিজাইন করলেও প্রতিষ্ঠানটি এখনও উৎপাদন পর্যায়ে যেতে পারেনি।
আমেরিকান কোম্পানিগুলো চীন থেকে তাদের সব কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছে। আমেরিকান সরকারই তাদের উৎসাহ দিচ্ছে চীনে কারখানা না রাখার জন্য। চিপ প্যাকেজিং ও ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পটি সরিয়ে নেয়া হচ্ছে চায়না থেকে। এর পরবর্তী গন্তব্য হবে ভিয়েতনাম ও ভারত। প্রস্তুত হতে পারলে এই ব্যবসায় বাংলাদেশেরও উন্নতি করার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ এখনো প্রস্তুত নয় কারণ উল্কাসেমি এখনও উৎপাদনে যেতে পারেনি। শুধু ডিজাইন নিয়ে কাজ করে বেশিদূর যাওয়া যাবে না। উৎপাদনে যেতে পারলে সেটি দেশের জন্য বড় এক সুযোগ বয়ে আনবে।
এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সরকারের নীতিসহায়তা। প্রত্যেক দেশে সরকার এ খাতে ভর্তুকি দিচ্ছে, বিনিয়োগ করছে এবং নীতিমালার মাধ্যমে একটা কাঠামো দাঁড় করিয়েছে। সরকার যদি ওয়ার্কফোর্স ডেভেলপমেন্টের জন্য উল্কাসেমির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করে, সেটি অনেক বড় সুবিধা হবে। আরেকটি বিষয় হলো চিপ তৈরিতে যে সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয় সেগুলো খুবই ব্যয়বহুল। ম্যানপাওয়ারের চেয়ে সফটওয়্যারের দাম বেশি। ভারত, চীন সরকার নিজে কিনে ওসব কোম্পানিগুলোকে ভর্তুকি দেয়। এ কাজ সরকারের করা দরকার। এক্ষেত্রে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সহায়তা প্রয়োজন।