ধর্ম ডেস্ক: আমরা অনেকেই নিজের অজান্তে অনেক ধরনের গুনাহ করে ফেলি। আবার ভুলে এসব গুনাহ করে ফেললে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার অন্যতম উপায় হচ্ছে তওবা করা। আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। খাঁটি মনে তওবা করলে তিনি বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। এমনকি কারো গুনাহের বোঝা অনেক বেশি হলেও তিনি তার বান্দাকে নিরাশ করেন না।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন– হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ; আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা জুমার: ৫৩)
মানবজীবনে তওবার গুরুত্ব অপরিসীম। মহান আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তওবা কর, খাঁটি তওবা। (সুরা তাহরিম: ৮)
আরেক আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং পবিত্রতা অর্জনকারীকে ভালোবাসেন। (সুরা বাকারা: ২২২)
ভুল বুঝতে পারামাত্রই তওবা করতে হবে। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তার বান্দার তওবা গ্রহণ করেন, যতক্ষণ-না সে মৃত্যুযন্ত্রণায় গরগর করে। (তিরমিজি)
তওবা করার নিয়ম
১. অতীতের সব পাপ কাজ ও ভুলত্রুটি মহান আল্লাহর কাছে স্বীকার করে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হওয়া।
২. লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে মহান আল্লাহর কাছে সব গুনাহের জন্য মাফ চাইতে হবে।
৩. কারো হক নষ্ট করে থাকলে যথাযথ ব্যক্তিকে তার অধিকার সম্পূর্ণভাবে ফিরিয়ে দিতে হবে। যেভাবেই হোক, সামর্থ্য না থাকলে অনুরোধ করে কিংবা ক্ষমা চেয়ে তার কাছ থেকে মাফ নিতে হবে।
৪. তওবার পর পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে এবং সাধ্য অনুযায়ী বেশি বেশি নেক আমল করতে হবে।
৫. তওবার পর কোনো ভুলে বা কুপ্রবৃত্তির কারণে পাপ কাজের পুনরাবৃত্তি ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে আবারও তওবা করে ফিরে আসতে হবে।
তওবা করার পদ্ধতি
তওবা করার জন্য প্রথমে সুন্দর করে অজু করতে হবে। এরপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। গত জীবনের সব পাপ এবং আদেশ অমান্য করার অপরাধ থেকে মার্জনা চাইতে হবে। তবে এই নফল নামাজ তওবার জন্য আবশ্যক নয়। তওবা মৃত্যু যন্ত্রণার আগ পর্যন্ত কবুল হয়।
এ সম্পর্কে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার বান্দার তওবা কবুল করেন, যতক্ষণ না সে মৃত্যু যন্ত্রণায় গরগর করে। (তিরমিজি: ৩৫৩৭)
আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে, মৃত্যুর সময় কাছাকাছি এলে তওবা করা। অথচ আমরা কেউ জানি না ঠিক কখন আমাদের মৃত্যুসময় এসে পড়বে। তাই গুনাহে জড়ানোর সুযোগ নেই। সব সময় তওবা করা উচিত। নবীজি পুত:পবিত্র হওয়া সত্ত্বেও প্রতিদিন তওবা করতেন।
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে মানবজাতি! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো; কেননা আমি প্রতিদিনে শতবার তওবা করি। (মুসলিম: ৭০৩৪)
তওবা করার দোয়া
উচ্চারণ: আসতাগফিরুল্লাহাল আজিমাল্লাজি লা-ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।
অর্থ: মহান আল্লাহর কাছে আমি ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, যিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং আমি তার কাছে তওবা করি।
হজরত জায়দ (রা.) নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি এ দোয়া পড়ে, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়, যদিও সে রণক্ষেত্র থেকে পলায়ন করে থাকে। (তিরমিজি: ৩৫৭৭)
উচ্চারণ: আসতাগফিরুল্লাহা ওয়া আতূবু ইলাইহি।
অর্থ: আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাচ্ছি এবং তার নিকট তওবা করছি।
হজরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, আমি নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে আর কাউকে এটি অধিক পরিমাণে পড়তে দেখিনি। (ইবনু হিব্বান: ৯২৮)