স্টাফ রিপোর্টার: দেশের পোশাক শিল্পমালিকরা কঠিন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন । ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর সবার প্রত্যাশা ছিল দেশের অর্থনীতি ভালোদিকে যাবে। কিন্তু বর্তমান সারাদেশের পোশাক কারখানাতে অস্থিরতা শুরু হয়েছে।
সাভার আশুলিয়া ও ধামরাইয়ের বিভিন্ন তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর মধ্যে অন্তত ৩০টি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, হাজিরা বোনাসসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে সকাল থেকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন।
গতকাল সোমবার সকাল ৮টার দিকে সাভারের আশুলিয়ার পলাশবাড়ি-বাইপাইল এলাকায় যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রমোশন, চাকরিতে ১০ বছরের নিশ্চয়তা এবং আন্দোলনে যারা যোগ দিয়েছে তাদের ছাঁটাই না করাসহ গিল্ডান নামে কানাডিয়ান মালিকানাধীন একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনে নামেছে রোববার থেকে।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সড়ক অবরোধের ফলে এ সময় নবীনগর চন্দ্রা মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে সড়কে চলাচলরত যাত্রীরা। এ সময় স্কুল ফেরত শিক্ষার্থী, রোগী ও বয়স্কদের ভোগান্তি পৌঁছেছিল চরমে।
জানা গেছে, বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা হাজিরা বোনাস ৩০০ টাকার পরিবর্তে ৮০০ টাকাসহ ১০টি দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এ ছাড়াও নারী ও পুরুষকে সমতার ভিত্তিতে চাকরিতে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ডিইপিজেড সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন চাকরিপ্রত্যাশাীরা।
অন্যদিকে সকাল থেকে দুপুর আনুমানিক ২টা পর্যন্ত বাইপাইল আব্দুল্লাহপুর সড়কের মাঝামাঝি এলাকার নরসিংহপুর জামগড়া ইউনিকসহ কয়েকটি স্পটে বিক্ষোভ করতে থাকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেন। দুপুর আড়াইটার দিকে বাইপাইল আব্দুল্লাহপুর সড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
তবে পলাশবাড়ির তৈরি পোশাক কারখানা গিল্ডান এবং আশুলিয়ার ডিইপিজেড এর সামনের নবীনগর-চন্দ্রা সড়কটি রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অবরোধ করে রেখেছেন চাকরিপ্রত্যাশী ও সাধারণ শ্রমিকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছক গিল্ডান পোশাক কারখানার একজন নারী শ্রমিক বলেন, আমরা যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করছি। আমরা কাজ করতে চাই। আমাদের কোম্পানির মালিক আমাদের সুযোগ সুবিধার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ দিলেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যারা রয়েছেন তারা সেগুলো লুটেপুটে খাচ্ছেন। আমরা আমাদের অধিকার ফেরত চাই। পাশাপাশি দ্রুত কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছক এক আরো একজন শ্রমিক বলেন বলেন, সকালে বেশ কিছু লোক লাঠিসোটা নিয়ে জামগড়া এলাকার দ্য রোজ কারখানায় ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। পরে তারা আইডিএস কারখানায় ইটপাটকেল ছুড়ে চলে যায়। তারা আসলে শ্রমিক কিনা তা বোঝা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে তারা চাকরিপ্রত্যাশী হতে পারেন।
শিল্প পুলিশের একজন সদস্য জানায়, সকাল ১০টার পর আন্দোলনরত শ্রমিকরা নবীনগর-চন্দ্রা ও বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ব্যারিকেড তৈরি করে অবরোধ করে বিভিন্ন কারখানা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এতে করে শিল্পাঞ্চলে উত্তেজনা শুরু হলে পরি¯ি’তি সামাল দিতে বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের বাইপাইল থেকে জিরাবো পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের অন্তত ৩০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। একপর্যায়ে শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনা¯’লে উপ¯ি’ত হয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কের ব্যারিকেড তুলে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে সমর্থ হয়। তবে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের ডিইপিজেড সামনের এলাকার চাকরিপ্রত্যাশীরা এখনো অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন।
আশুলিয়ায় শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। ডিইপিজেডের সামনে চাকরির দাবিতেও বিক্ষোভ করছেন কিছু চাকরিপ্রত্যাশী। এ ছাড়াও গিল্ডান বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি কারখানায় আন্দোলন করছে শ্রমিকরা। বিক্ষোভের কারণে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নিআশুলিয়ায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ, ৩০ কারখানা ছুটি ঘোষণা
এব্যাপারে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘শ্রমিকরা এখন কি জন্য আন্দোলন করছেন এটা বুঝতে পারছি না। এখন তো তাদের কোন দাবী-দাওয়া থাকার কথা না। শ্রমিকদেও এখন কাজ করা কথা।’ তবে তিনি মনে করছেন এই শ্রমিকদের আন্দোলনের পিছনে কোনো ইন্ধানদাতা রয়েছে। ইন্ধানদাতা ছাড়া এখন শ্রমিকদের এই আন্দোলন করার কোন অর্থ নেই। তাদের যে দাবি-দাওয়া চাওয়া হচ্ছে, এগুলো এভাবে আন্দোলন করে চাওয়া মনে হচ্ছে কোন ষড়যন্ত্র। শ্রমিকরা যেভাবে কারখানায় সহিংসতা চালাচ্ছে। এতে শিল্পমালিকরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।
এদিকে সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) এবং বিকেএমইএর সঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠক থেকে বের হয়ে বিজিএমইএ’র সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম জানান, পোশাক শিল্পের নিরাপত্তায় সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুরে আজ রাতেই সেনাবাহিনী, পুলিশ ও শিল্প পুলিশের যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে। প্রয়োজনে পরবর্তীতে যৌথ অভিযানে যোগ দেবে র্যাব ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
রফিকুল ইসলাম বলেন, কারখানাগুলোতে যাতে করে শ্রম অসন্তোষের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যারা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় তারা কেউ পোশাক শ্রমিক না। প্রয়োজনে পরিস্থিতি বিবেচনায় আরও কঠোর সিদ্ধান্ত নেবে প্রশাসন। এছাড়া অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে আগামীকাল (৩ সেপ্টেম্বর) থেকে সকল কারখানা চালু রাখতে মালিকদেরকে অনুরোধ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
জানা যায়, শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুরে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন কারখানায় চলছে উৎপাদন, বিভিন্ন ইউনিটে কাজ করছেন শ্রমিকরা। কারফিউসহ নানা আন্দোলন সংগ্রামের কারণে কিছুদিন কারখানায় উৎপাদন বিঘ্নিত হলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে পোশাক শিল্প। শুরুতে মালিকরা নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় নিরাপত্তা দিয়ে কারখানা চালু করেন। তবে সার্বিক নিরাপত্তায় কিছুদিন ধরে সেনাবাহিনীও সাহায্য করেছে।
কারখানা মালিকরা বলছেন, গাজীপুরসহ অন্যান্য শিল্প এলাকায় শতভাগ কারখানা চালু করা হয়েছে। এতে শ্রমিকদের উপস্থিতি প্রায় শতভাগ।
শুধু গাজীপুরেই ২ হাজারের বেশি তৈরি পোশাক কারখানা রয়েছে। এতে কাজ করেন অন্তত ২২ লাখ শ্রমিক।