পথে প্রান্তরে ডেস্ক: ডেঙ্গু জ্বরের প্রভাব ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। কারণ, বছরের নির্দিষ্ট কিছু সময় রোগটির প্রকোপ আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পায়। তাই জনসচেতনতা ও বিভিন্ন মিডিয়ার প্রচারের মাধ্যমে ডেঙ্গুকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। ডেঙ্গু একটি ভাইরাসঘটিত রোগ। এডিস মশা এ রোগের বাহক। কোনো মানুষকে ডেঙ্গু আক্রান্ত মশা কামড়ানোর ৩ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে সাধারণত ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ শুরু হয়। অর্থাৎ মানুষের শরীরের জীবাণু প্রবেশের পর সাধারণত ৩ থেকে ১৪ দিন পরে রোগের লক্ষণ দেখা দেয়।
ডেঙ্গু জ্বর হলে শরীরে যে সমস্যা হয়
প্রথমত
ডেঙ্গু ভাইরাসে সংক্রমণের ফলে মানবদেহে রক্তবাহী শিরা ও ধমনিগুলো ভেতরের প্রলেপ বা পর্দাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে রক্তবাহী নালি থেকে রক্ত রস বেরিয়ে যায়। ফলে ব্লাড প্রেসার কমে যায় এবং আস্তে আস্তে শরীরে রক্ত প্রবাহের বিঘ্ন ঘটে, যেটাকে মেডিকেলের ভাষায় শক বলা হয়।
দ্বিতীয়ত
প্লাটিলেট এবং শরীরের রক্ত জমাট বাধার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উপাদানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রক্তক্ষরণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অর্থাৎ এ রোগের মূল সমস্যা দুইটি। যথা-
১. শরীরের রক্ত রস কমে গিয়ে ব্লাড প্রেসার কমে যাওয়া।
২. প্লাটিলেট ও রক্ত জমাট বাধার উপকরণগুলো কমে গিয়ে রক্তক্ষরণ হওয়া।
আবার রোগের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গু জ্বরকে বেশ কয়েক ভাগে ভাগ করা হয়-
সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর : জ্বর, শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা ও চোখের পিছনে ব্যথা এ রোগের অন্যতম লক্ষণ।
ডেঙ্গু হেমারেজিক ফিভার : এ অবস্থায় রোগীর রক্তরস রক্তনালী থেকে বের হয়ে যায়। ফলে উপরোক্ত লক্ষণের সঙ্গে রোগীর ব্লাড প্রেসার কমে যায়।
ডেঙ্গু শক সিনড্রোম : এ অবস্থাটি ডেঙ্গু হামরিজিক ফিভারের একটি ভয়াবহ রূপ। এখানে রোগীর ব্লাড প্রেসার এতটাই কমে যায় যে রোগীর শরীরের কোষগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ বিঘ্ন ঘটে।
এক্সপান্ডেড ডেঙ্গু সিনড্রোম : এটি ডেঙ্গু জ্বরের এর সবচেয়ে ভয়ংকর রূপ। এখানে মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ড, লিভার, কিডনি সবকিছুই ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে।
ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ধাপ রয়েছে
ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত দুই থেকে সাত দিন স্থায়ী হয়। এ সময় শরীরে লাল লাল দাগ, শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা থাকে।
ক্রিটিক্যাল ফেজ
এই ফেজটি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। এই ফেজটি সাধারণত শুরু হয় জ্বরের চতুর্থ অথবা পঞ্চমতম দিন থেকে এবং জ্বর ভালো হয়ে যাওয়ার পরবর্তী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
রিকভারি ফেজ
ক্রিটিক্যাল ফেজ শেষ হওয়ার দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই রোগী আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে যায় এই সময়কে রিকভারি ফেজ বলে।
লেখক : ডা. মো কামরুজ্জামান কামরুল, সহযোগী অধ্যাপক পালমনোলজি বিভাগ; বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউট।