শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে ফিরে এই প্রথম গানে ফিরছেন কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমীন। জীবনের কঠিন লড়াইয়ে যুদ্ধ শেষে গানের জগতে ফিরছেন তিনি। আগামী ৩১ জানুয়ারি ও ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় দুটি বড় অনুষ্ঠানে গান গাইবেন এ সংগীতশিল্পী। এরপর চট্টগ্রামেও স্টেজ শো করবেন সাবিনা ইয়াসমীন।
তিনি বলেন, কয়েকজন সংগীত পরিচালক নতুন গানের রেকর্ডিংয়ের ব্যাপারে যোগাযোগ করেছেন। স্টেজ শোর ফাঁকে নতুন গানের রেকর্ডিংও করবেন। স্টেজ শোর প্রস্তুতি হিসেবে ২৬, ২৭ ও ২৮ জানুয়ারি টানা তিন দিন যন্ত্রশিল্পীদের নিয়ে মহড়ায় অংশ নেবেন তিনি। যাকে বলে— মঞ্চে ওঠার আগে নিজেকে ঝালিয়ে নেওয়া।
এর আগে ২০২৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, মেলবোর্ন ও ব্রিসবেনে একাধিক স্টেজ শো করেন প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমীন। এরপর আর তাকে মঞ্চে দেখা যায়নি। একসময় তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়লেও একপর্যায়ে অডিও বার্তা দিতে বাধ্য হন বরেণ্য এই কণ্ঠশিল্পী। একটি গণমাধ্যমে এ জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী জানিয়েছেন সম্প্রতি তার জীবনে ঘটে যাওয়া কঠিন যুদ্ধের কথা। জীবনযুদ্ধে যে লড়াই তিনি করেছেন, সেই অজানা ঘটনাই তার শুভাকাঙ্ক্ষীদের জানাচ্ছেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমীন।
গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি তার অস্ত্রোপচার হয়। এরপর চার মাসে ৩০টি রেডিওথেরাপি নিয়েছেন তিনি। কেবল কাছের মানুষেরাই শুধু জানতেন তার এসব তথ্য। সাবিনা বলেন, ‘এটা ছিল কঠিন এক যুদ্ধ, তবে মনোবল ছিল শক্ত।’
গত মে মাসে চিকিৎসা শেষে ঢাকায় ফেরেন সাবিনা ইয়াসমীন। এরপর চেকআপ করাতে একাধিকবার সিঙ্গাপুর যেতে হয়েছে তাকে। আপাতত যাওয়ার আর দরকার পড়ছে না বলে জানান এ সংগীতশিল্পী।
সাবিনা ইয়াসমীন বলেন, চিকিৎসাটা ছিল একটা কঠিন পরীক্ষা। একে জীবনযুদ্ধও বলা যায়। মনে হয়েছিল— আল্লাহতায়ালা যেটাই চাইবেন, সেটাই হবে। আল্লাহর অশেষ রহমত ও দেশবাসীর দোয়া। তিনি বলেন, আমার মনে জোর ছিল— আমি এ বিপদ কাটিয়ে উঠতে পারব। কারণ ভালো মানের ট্রিটমেন্ট পাচ্ছিলাম। সেই চারটা মাস জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়।
সাবিনা বলেন, এই সময়ে আমার বন্ধু, ছোট বোন, যেটাই বলি না কেন, সে হচ্ছে মিলিয়া সাবেদ। সিঙ্গাপুরে রেডিওথেরাপির পুরোটা সময় ওর বাসায় ছিলাম। ওর আন্তরিক ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ। মানসিক সাপোর্ট, সাহস ও অনুপ্রেরণা দিয়েছে। আমার জন্য যা করেছে, এখনো যা করে যাচ্ছে, এই জীবনে তার ঋণ শোধ করতে পারব না।
ভক্তদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এই কণ্ঠশিল্পী বলেন, শুনেছি— অনেকেই আমাকে নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। তাদের ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাই না। তাদের দোয়া আর ভালোবাসা আমি মাথায় তুলে রাখছি। আমি যেন তাদের আশা পূরণ করতে পারি। তারাই আমার আসল শক্তি, সাহস ও প্রেরণা।
উল্লেখ্য, ১৯৬২ সালে রবীন ঘোষের সুরে প্রথম ছোটদের গানে কণ্ঠ দেন কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমীন। আর মাত্র ১৩ বছর বয়সে ১৯৬৭ সালে ‘আগুন নিয়ে খেলা’ সিনেমায় প্রথমবার গান করেন তিনি। এরপর তাকে আর সংগ্রাম করতে হয়নি। একের পর এক সিনেমায় প্লেব্যাক করেছেন এবং অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন।
নিজেকে বাংলা গানের অপরিহার্য শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তবে সংগীতজীবনে কখনো রেওয়াজ করা ছাড়েননি তিনি। সাবিনা ইয়াসমীন বলেন, ‘আমার রেওয়াজ সবসময় চলে। যখন সিঙ্গাপুরে ছিলাম, মিলিয়ার বাসাতেও নিয়মিত রেওয়াজ করেছি। রেওয়াজ আমার একটা অভ্যাস বলা যায়। এখনো প্রতিদিন এক-দেড় ঘণ্টা রেওয়াজ করি। সাধারণত সকালে করি, কাজকর্ম থাকলে অন্য সময়ে করি।’
সর্বশেষ ২০২০ সালে কবরী পরিচালিত ‘এই তুমি সেই তুমি’ ছবিতে কণ্ঠ দিয়েছেন সাবিনা ইয়াসমীন। শুধু তা-ই নয়, প্রথমবার সুরকার হিসেবে ছবির চারটি গানের সুরও করেছেন তিনি। দীর্ঘ সংগীতজীবনে এটিই তার একমাত্র সুর ও সংগীত পরিচালনা ছিল। যদিও ছবিটি নিয়ে আফসোস রয়ে গেছে শিল্পীর— ‘কবরী বেঁচে থাকলে এতদিনে ছবিটি মুক্তি পেয়ে যেত। একটু খারাপ লাগছে। ছবিটি এত দূর হয়ে গেছে, আরেকটু কাজ হলে পুরো কাজ শেষ হয়ে যেত। জানি না এখন কীভাবে শেষ হবে। তিনি বলেন, আমার সুর-সংগীতে কোনাল ও ইমরানকে দিয়ে গান করিয়েছিলাম। দুজনই চ্যানেল আইয়ের সেরাকণ্ঠ দিয়ে এসেছে। আমি তখন বিচারক ছিলাম। এটা আমার জন্য খুব আনন্দের বিষয় ছিল।