ভিনিসিয়ুসকে খুঁচিয়ে সিটিরই ‘রক্ত’ ঝরল

ইতিহাদে দুই দলের খেলোয়াড়েরা তখন মাঠে। বাজছিল চ্যাম্পিয়নস লিগের সংগীত। কিন্তু ক্যামেরা চলে গেল দক্ষিণ দিকের গ্যালারিতে। বিশাল এক তিফোয় (এত ধরণের ব্যানার) চোখ সবার। কালো ব্যানারের ওপর ব্যালন ডি’অর ট্রফিতে রদ্রির চুমু খাওয়ার ছবি। পাশে গোটা গোটা হলুদ অক্ষরে লেখা, ‘স্টপ ক্রাইং ইউর হার্ট আউট।’ বাংলায় খুব কাছাকাছি অর্থ হতে পারে, কেঁদেকেটে বুক ভাসিও না!

গ্যালারিতে বসে রদ্রিও দৃশ্যটি উপভোগ করেছেন তাড়িয়ে তাড়িয়ে। স্মার্টফোন বের করে ছবিও তুলেছেন। ব্যালন ডি’অর নিয়ে যাঁর সঙ্গে ‘যুদ্ধ’ হলো, সেই ভিনির প্রতি নিজ দলের সমর্থকদের কাছ থেকে এমন বার্তা দেখতে কার না ভালো লাগে! আর বার্তাটিও কিন্তু ধার করা নয়। বলতে পারেন, সিটির ঘরোয়া আয়োজনই।

১৯৯১ সালে ম্যানচেস্টারেই জন্ম নেওয়া ব্যান্ড ‘ওয়েসিস’ এর বেশ বিখ্যাত গান এই ‘স্টপ ক্রাইং ইউর হার্ট আউট।’ ২০০২ সালে মুক্তি পাওয়া গানটি যাঁর লেখা, ওয়েসিস ব্যান্ডের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নোয়েল গ্যালাঘার নিজেও সিটির পাঁড়ভক্ত। ইতিহাদে কাল রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগ নকআউট প্লে–অফের প্রথম লেগ শুরুর আগে টকস্পোর্টে নোয়েল নিজেও এই ম্যাচ নিয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত দেন। তবে বাস্তববাদী নোয়েল কিন্তু পা মাটিতেই রেখেছিলেন। খুব বেশি আশা করেননি ব্যান্ডের এই গায়ক ও লিড গিটারিস্ট।

কিন্তু গ্যালারিতে সিটির সমর্থকেরা ওসব বাস্তবতার ধার ধারেননি। ভিনির পায়ে বল যাওয়া মানেই দুয়ো বের হয়েছে সিটির সমর্থকদের মুখ থেকে। আর ভিনি? কাটা ঘায়ে খোঁচা ও দুয়োর জবাবে তাঁর হৃদয় নিংড়ে বের হয়েছে ম্যাচ সেরার পারফরম্যান্স। ম্যাচের মধ্যে সিটির সমর্থকেরা তাঁকে তাক করে একবার সুর তুলেছিলেন ‘তোমার ব্যালন ডি’অর কই! তোমার ব্যালন ডি’অর কই!’। বেচারা ভিনির তো বর্ষসেরার এই ট্রফি নেই। কী আর করা, রিয়ালের জার্সির বাহুতে খোদাই করা ‘১৫’ সংখ্যাটি আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন। হয়তো বুঝিয়েছেন, ‘আমার ব্যালন ডি’অর না থাকতে পারে, কিন্তু আমার দলের ১৫ চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের গর্ব আছে।’

ইতিহাদে একটু নেচেও নিয়েছেন ভিনিসিয়ুস
গর্ব কিংবা আত্মসম্মানে ঘা লাগলে মানুষের মধ্যে অন্য কিছু ভর করে। ভিনির ভেতরে কিছু ভর করেছিল কি না, তা আসলে স্পষ্ট করে বোঝা যায়নি। তেতে ছিলেন সেটা পরিষ্কার। একে তো ব্যালন ডি’অর যাঁর কাছে হারিয়েছেন গ্যালারিতে তিনি বসে, পাশাপাশি বৈরী দর্শকদের খোঁচা এবং ম্যাচে দুবার পিছিয়ে পড়া। ভেতরে রিয়ালের ‘ডিএনএ’ থাকলে ঘুরে দাঁড়ানোর জ্বালানি পেতে আসলে আলাদা করে আর কোনো উপলক্ষ লাগে না।

ভিনির পারফরম্যান্সটা একবার দেখে নেওয়া যাক— ৪৪ বার বল স্পর্শ করে ৫টি সুযোগ তৈরি করেছেন, যা ম্যাচে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে দুটি ছিল পরিষ্কার গোলের সুযোগ। গোল করিয়েছেন একটি আর সফল ড্রিবলিং ৫ বার। পোস্টেও মেরেছেন বল, যেটা আরেকটু নিচে থাকলেই সিটি সমর্থকদের বুকটা এঁফোড়-ওফোঁড় করে দিত!

তবে ৯২ মিনিটে জুড বেলিংহামকে দিয়ে করানো গোলটিও তিরের ফলার চেয়ে কম কিছু না! এই গোলে চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউটে গোল করানোয় লিওনেল মেসিকে ছুঁয়ে ফেললেন ভিনি। ৭৭ ম্যাচে মেসি ১২ গোল বানিয়েছেন, ভিনি ১২ গোল বানালেন ৩০ ম্যাচে।

তবে সিটির সমর্থকদের দুঃখ আরও বাড়তে পারে ৩-২ গোলে হারের পর ভিনির কথা শুনে। তাঁরা ভাবতে পারেন, যাঁকে ডোবাতে এত আয়োজন করলাম, সেগুলোই কি না বুমেরাং হবে!

শুনুন ভিনির মুখেই। মুভিস্টারকে বলেছেন, ‘ব্যানারটি দেখেছি। প্রতিপক্ষ সমর্থকেরা এমন কিছু করলে, সেগুলো আমাকে ভালো খেলার জন্য আরও বেশি করে শক্তির জোগান দেয় এবং এখানে আমি সেটাই করেছি।’

রিয়াল কোচ আনচেলত্তির ভাবনাও আলাদা নয়, ‘জানি না ভিনি ওটা (ব্যানার) দেখেছে কি না। কিন্তু ম্যাচ দেখে মনে হচ্ছে, সে ওটা দেখে থাকলে সেটা বড় প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।’ সিটি কোচ পেপ গার্দিওলার অবশ্য দাবি করছেন ব্যানারটি তাঁর চোখে পড়েনি। তবে ভিনির খেলা চোখে পড়েছে, যে কারণে ম্যাচ শেষে তাঁকে ‘অসাধারণ খেলোয়াড়’ও বলেছেন গার্দিওলা।

ইতিহাদে রিয়ালের প্রথম জয়ে সেই অসাধারণ খেলোয়াড়কে নিয়ে তাঁর সতীর্থ দানি সেবায়োসের উক্তিটি রদ্রি ও সিটির সমর্থকদের বুকে শেল হয়ে বিঁধতে পারে, ‘তারা যা খুশি করতে পারে। আমাদের ভিনিসিয়ুস আছে। বিশ্বের সেরা ফুটবলার।’

আপনি কল্পনা করে নিতেই পারেন, সেবায়োসের এ কথা শুনে রিয়ালের কোনো সমর্থকের মুখ থেকে পাল্টা বের হচ্ছে, ‘প্রিয় সিটি, কেঁদেকেটে বুক ভাসিও না’—মানে ‘স্টপ ক্রায়িং ইয়োর হার্ট আউট।’ তবে শেষ পর্যন্ত কোন দলকে কেঁদেকেটে বুক ভাসাতে হয় তা এখনই নিশ্চিত হচ্ছে না। আগামী বুধবার রাতে রিয়ালের মাঠে ফিরতি লেগ। আপনি নিশ্চিত থাকুন, সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতেও সেদিন ব্যানার শোভা পাবে। কে জানে, প্রস্তুতি হয়তো এখনই শুরু হয়ে গেছে!

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ