স্টাফ রির্পোটার- সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতিমা বিসর্জন, সাপ্তাহিক ছুটি এবং ঈদে মিলাদুন্নবী মিলে টানা ৫ দিনের ছুটিতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে লাখো মানুষের ঢল নেমেছে।
বুধবার সকাল থেকে পর্যটকের ঢল নামে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে। কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সৈকতজুড়ে পর্যটক দেখা গেছে। শহরের রাস্তাতেও ভিড় দেখা যায়। এতে দেখা দিয়েছে পরিবহন সংকট।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা কয়েক দিনের ছুটিতে কয়েকশ কোটি টাকার ব্যবসা হতে পারে বলে আশা করছি।
হোটেল মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে শতভাগ হোটেল-মোটেলের বুকিং সম্পূর্ণ হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে পর্যটকের সমাগম দেখা যাচ্ছে। অন্য দিনের চেয়ে পর্যটকের চাপ বেশি। আশা করি এই চাপ আগামী রবিবার পর্যন্ত থাকবে।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, টানা কয়েক দিনের ছুটিতে ৩ লাখ পর্যটকের সমাগম হবে। পৌরসভার পক্ষ থেকে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতিমা বিসর্জন এবং সাপ্তাহিক ছুটি মিলে মোট ৫ দিনের ছুটি উপলক্ষে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে লাখো মানুষের ঢল নামছে। প্রতিমা বিসর্জন ও পর্যটক নিরাপত্তার জন্য সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি জেলা প্রশাসকের কর্মকর্তারাও কাজ করছে।
কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য টুরিস্ট পুলিশ সব সময় প্রস্তুত। প্রতিটি পয়েন্টে সাদা পোশাকে কাজ করছে টুরিস্ট পুলিশ। পর্যটকদের সুবিধার জন্য সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে টুরিস্ট পুলিশের হেল্প ডেক্স বসানো হয়েছে।
এদিকে টানা ছুটিতে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকতে মিলিত হয়েছেন হাজারো পর্যটক। পাঁচ দিনের ছুটিতে নানা বয়সী পর্যটকদের পদভারে মুখর সাগরকন্যা কুয়াকাটা। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের কুয়াকাটার সৌন্দর্য দেখতে বছরের বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে।
বুধবার সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ঘুরে দেখা যায়, কুয়াকাটা সৈকতে আনন্দ উল্লাসে মেতেছে নানা বয়সের মানুষ। শিশুরা বালুর চরে পানিতে গা মিশিয়ে আনন্দ করছে, মধ্যে বয়সীরা গভীর সমুদ্রে গোসলে মেতেছেন আর বৃদ্ধরা ছাতার নিচে ব্রেঞ্চে বসে উপভোগ করছেন বিশাল সমুদ্রের নীল জলরাশি ও ঢেউয়ের গর্জন।
টানা পাঁচ দিনের ছুটিতে অনেক আগেই বুকিং হয়ে গেছে কুয়াকাটার বেশিরভাগ হোটেল-মোটেল।
সৈকতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইসমাইল বলেন, বুধবার কুয়াকাটায় বিপুল সংখ্যক পর্যটক এসেছে। আমাদের বিক্রি অনেক ভালো হয়েছে। তবে বিদেশি কোনো পর্যটক আমার চোখে পড়েনি।
কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, ছুটি উপলক্ষে কুয়াকাটায় অনেক পর্যটক এসেছে। ইতোমধ্যে আমি ট্যুরিস্ট পুলিশ, হোটেল-মোটেল অ্যাসোসিয়েশন, খাবার হোটেলসহ সকল পর্যটন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। যাতে পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দে ঘুরতে পারেন এবং কোনো প্রকার প্রতারণার শিকার না হন। এজন্য কুয়াকাটা পৌরসভার পক্ষ থেকে একটি টিম সার্বক্ষণিক তদারকি করছে।
টানা চারদিনের ছুটিতে পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতেও ছুটে আসছে পর্যটকরা। ইতোমধ্যে হোটেল-মোটেলগুলোর প্রায় শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে।
শারদীয় দুর্গাপূজা, সাপ্তাহিক ছুটি ও ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে বুধবার সরকারি ছুটি। এছাড়া বৃহস্পতিবার একদিন ছুটি নিতে পারলেই পরের আরও তিন দিন ছুটি কাটানো সম্ভব। সব মিলে প্রায় পাঁচ দিনের ছুটি। তাইতো সারাদেশ থেকে পর্যটকরা ইতোমধ্যে রাঙ্গামাটিতে আসতে শুরু করেছে।
রাঙ্গামাটির হোটেল নাদিশা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী শাহিন আহম্মেদ বলেন, ৩ তারিখ থেকে আমাদের শতভাগ বুকিং শেষ। আর এ টানা ছুটিতে আরও বেশি বুকিং বেড়েছে। আমাদের ৯ তারিখ পর্যন্ত কোনো রুম খালি নেই। আশা করছি যারা ইতোমধ্যে এসেছেন বা যারা আসবে সবাইকে ভালো সার্ভিস দিতে পারবো।
রাঙ্গামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের ম্যানেজার সৃজন বিকাশ জানান, ছুটিতে আমাদের প্রায় ৯০ শতাংশ বুকিং হয়েছে। আশা করছি কালকের মধ্যে শতভাগ শেষ হবে। কারণ পরে আরও তিনদিন ছুটি রয়েছে। এ ছুটিকে কাজে লাগিয়ে পরিবার-পরিজন ও বন্ধু-বান্ধবদেরকে সঙ্গে নিয়ে পর্যটকরা ছুটে আসছেন।