কুমিল্লায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের বিক্ষোভ মিছিলে হামলার ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
রোববার (১৫ অক্টোবর) রাতে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ তাপস কুমার বকসী বাদী হয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
মামলা এবং দুজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আহাম্মদ সাঞ্জুর মোর্শেদ।
গ্রেপ্তার দুজন হলেন কুমিল্লা নগরীর রাজগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা মহসিন আহমেদ শিপন (৩৫) এবং মোগলটুলি এলাকার নূর মোহাম্মদ স্বপন (৪০)। তারা দুজনই যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
জানতে চাইলে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ তাপস কুমার বকসী বলেন, রোববার রাতে আমরা কুমিল্লার কান্দিরপাড় ফাঁড়ির ইনচার্জের মাধ্যমে কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাত ৪০০-৫০০ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করি। পরে সেটি মামলা আকারে গৃহীত হয়েছে। আমরা হামলায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।
কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) আহাম্মদ সনজুর মোর্শেদ বলেন, অভিযোগ দায়েরের পর রোববার রাতেই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত বাকিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৪ অক্টোবর কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে শারদীয় দুর্গাপূজার প্রস্তুতি উপলক্ষে আয়োজিত এক সভায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদেরকে ‘মদ খেয়ে মণ্ডপে নাচানাচি না করে মাদকমুক্ত পূজা’ আয়োজনের আহ্বান করেন সদর আসনের এমপি ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বাহাউদ্দিন বাহার। এ সময় তিনি বলেন, ‘সারারাত মদ খেয়ে নাচানাচি করে সকালে ঘুমিয়ে থাকলে চলবে না। মণ্ডপে লিখে দিবেন ‘মাদকমুক্ত পূজা’। মদমুক্ত পূজা করলে পূজার সংখ্যা কমবে, কুমিল্লায় এত মণ্ডপ হবে না।’
‘মদমুক্ত পূজা’ উদযাপন নিয়ে এমপি বাহারের মন্তব্য, সম্প্রতি সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাসকে নিয়ে মুন্সিগঞ্জের মেয়র ফয়সাল বিপ্লবের ‘সাম্প্রদায়িক গালিগালাজ’, কুড়িগ্রামের চারণ কবি রাধাপদ রায়ের ওপর হামলা ও বিভিন্ন স্থানে পূজার প্রাক্কালে মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৩ অক্টোবর কুমিল্লায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে নগরের নজরুল অ্যাভিনিউয়ের রাজস্থলী মন্দির এলাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়। মিছিল সমাবেশে বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ ছাত্র ঐক্য পরিষদের নেতাকর্মীরাও অংশগ্রহণ করেন।
সমাবেশ শেষে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অংশগ্রহণকারীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগরের কান্দিরপাড় পুবালী চত্বরে যাচ্ছিল। এ সময় নগরের কান্দিরপাড় পুবালী চত্বর থেকে মহানগর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের অন্তত পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী মিছিলকারীদের ধাওয়া করে। এতে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর মিছিলকারীরা রানীর বাজার ও মহানগর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কান্দিরপাড় পুবালী চত্বরে অবস্থান নেন। এ হামলায় ঐক্য পরিষদের ব্যানারে মিছিলে অংশ নেওয়া ৫/৬ জন আহত হন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে এবং বিচার দাবিতে রোববার কুমিল্লায় এসেছিলেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। রোববার বিকেলে ঢাকা থেকে আসা ৮ সদস্যের দলটি শুরুতেই কুমিল্লার পুলিশ সুপার আবদুল মান্নানসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এসময় এ ঘটনার বিচার দাবি করে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান নেতৃবৃন্দ।
পরে পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে চলে যান ঠাকুরপাড়া শশ্মানকালিবাড়ি মন্দিরে। সেখানে গিয়ে হামলায় আহতদের খোঁজ-খবর নেন এবং ঐক্য পরিষদের স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলেন।