Search
Close this search box.

মাছের মেলায় জামাইদের প্রতিযোগিতা

মূলত এটা শীতকালীন ও জামাই মেলা। কিন্তু সবাই এটাকে বলে মাছের মেলা। গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বিনিরাইল গ্রামের মাছের মেলার কথা। এ মেলায় চলে জামাইদের মাছ কেনার প্রতিযোগিতা।

এই দিনটিকে ঘিরেই এখানে ভোর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত (দিনব্যাপী) চলে নানা রকম আনন্দ-উৎসব। দিনটির জন্য সারাটি বছর অপেক্ষায় থাকেন উপজেলাবাসী। এই মেলায় আছে একের ভেতর দুই। কারণ এটা জামাই মেলা হলেও, এখানে বসে মাছের বিরাট মেলা। বিনিরাইল এবং এর আশপাশে গ্রামে যারা বিয়ে করেছেন, সে সমস্ত জামাইরা হচ্ছেন ওই মেলার মূল ক্রেতা ও দর্শনার্থী।

এ ছাড়া এই মেলাকে ঘিরে এলাকার জামাইদের মধ্যে চলে এক নীরব প্রতিযোগিতা। আর এই প্রতিযোগিতা হচ্ছে কোন জামাই সবচেয়ে বড় মাছটি ক্রয় করে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যেতে পারে। একটা মাছকে ঘিরে ক্রেতা জামাইদের জটলা লেগে আছে। মাছের নাম বাঘাড়। বিক্রেতা দাম হেঁকেছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। ক্রেতাদের মধ্যে স্থানীয় ভাটিরা এলাকার জামাই আলমগির হোসেন ভূঁইয়া মাছটির দাম সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা বলছেন। কিন্তু বিক্রেতা আরও বেশি দাম পাবার আশায় মাছটি ছাড়ছেন না। চলছে দর কষাকষি। যত না ক্রেতা তার চেয়ে অনেক বেশি উৎসুক জনতা ভিড় জমিয়েছেন মাছটি দেখার জন্য।

পৌষ মাসের শেষে মাঘ মাসের দ্বিতীয় দিন সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে উপজেলার জামালপুর, বক্তারপুর ও জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের মধ্যে বিনিরাইল গ্রামে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলায় গিয়ে দেখা যায় এই দৃশ্য। উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন তো এসেছেনই। এর বাইরে থেকেও অনেকে এসেছেন উপজেলার সর্ববৃহৎ এই মাছের মেলায়। গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে অনেক মানুষ কেবল এই মেলা উপলক্ষেই কালীগঞ্জে এসেছেন। প্রতি বছর পৌষ-সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয় এ মেলা।

এবারের মেলায় প্রায় ৮ শতাধিক মাছ ব্যবসায়ী বাহারি মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। মেলায় মাছ ছাড়াও আসবাবপত্র, খেলনা, মিষ্টি ইত্যাদির পসরাও বসেছে। মাছের মেলায় সামুদ্রিক চিতল, বাঘাড়, আইড়, বোয়াল, ইলিশ, কালী বাউশ, পাবদা, গুলসা, গলদা চিংড়ি, বাইম, কাইকলা, রূপচাঁদা মাছের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে নানা রকমের দেশীয় মাছও।

বিনিরাইলের মাছের মেলার আয়োজকরা জানান, এই মেলাটি প্রথম অনুষ্ঠিত হতো খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে অগ্রহায়ণের ধান কাটা শেষে পৌষ-সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবে। প্রায় ২৫২ বছর ধরে মেলাটি আয়োজন হয়ে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ মেলাটি একটি সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে।

মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য খোরশেদ আলম ও আমিন দর্জি জানান, ব্রিটিশ শাসনামল থেকে শুরু হওয়া বিনিরাইলের মাছের মেলা এখন ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। এ মেলা গাজীপুরের সবচেয়ে বড় মাছের মেলা হিসেবে স্বীকৃত।

এলাকার জামাইরা বলেন, শ্বশুরবাড়িতে মাছ নিয়ে যাওয়া বলে কথা। তাই এলাকার সব জামাইদের নজর বিনিরাইলের মাছের মেলার বড় মাছটার দিকেই। তাই স্থানীয় বড় বড় মাছ ব্যবসায়ীরা সপ্তাহখানেক ধরে বড় বড় মাছ সংগ্রহ করে থাকেন। সেই অনুযায়ী মাছের দামও হাঁকানো হয়।

বিনিরাইলের মাছের মেলা নিয়ে কথা হয় বক্তারপুর গ্রামের, তৈয়বুর রহমান, আবুল কাশেম, সিজেন নন্দী ও রাজেন্দ্রপুরের জামান জানান, এবার ৪৫ হাজার টাকার বাঘাড়, ২৫ টাকার রুই, চিতল, আইড়সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কিনেছেন বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

মাছের মেলা সংলগ্ন জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের মেম্বার মো. শফিকুল ইসলাম দর্জি জানান, মাছের মেলাটি এ অঞ্চলের ঐতিহ্যের ধারক। মেলায় বেচাকেনা যতই হোক, এ মেলা আমাদের ঐতিহ্য আর কৃষ্টিকে বহন করছে এটাই সবচেয়ে বড় কথা। তিনি আরও জানান, শুরুতে এ মেলা শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য হলেও, বর্তমানে এটা সব ধর্মের মানুষের কাছে ঐতিহ্যর উৎসবে পরিণত হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ