কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমরসহ ১৬টি নদ নদীর পানি কমে যাওয়ায় শুরু হয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। নদ নদীর অব্যাহত ভাঙনে ইতোমধ্যে ৪৫৮ বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন কবলিতরা আশ্রয়ের খোঁজে এদিক-সেদিক ছুটাছুটি করছে। কেউ কেউ টিনের চাল দিয়ে ঝুপড়ি তুলে কোন রকমে দিন পার করছে। নেই স্যানিটেশন ব্যবস্থা, খাদ্য সংকট নানা ঝুঁকি নিয়ে ভাঙন কবলিতরা ছটফট করছে।
এদিকে ভারতীয় সীমান্তে বাংলাদেশ অংশে ভাঙন কবলিত ১০টি পরিবার আশ্রয়ের জন্য অস্থায়ী ভাবে ঘর তুললেও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ তাদেরকে থাকতে দিচ্ছে না। বিএসএফ ভাঙন কবলিতদের সরে যাওয়ার জন্য তিনদিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে। সব মিলিয়ে ভাঙন কবলিতরা পড়েছে মহাবিপাকে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কুড়িগ্রাম সদরের ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন যাত্রাপুর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নে ৫২ হাজার লোকের বসবাস। তারমধ্যে চরে বসবাস করে ২২ হাজার। চরগুলোর মধ্যে ঝুনকারচর, রলাকাটা, পার্বতীপুর,ভগবতীপুর, বরুয়া, চর যাত্রাপুর অন্যতম।
কথা হয় যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুরের সাথে তিনি জানালেন, তার ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে প্রায় ২০০ পরিবারের বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে এর মধ্যে ভগবতী পুরে ৫৫টি, বরুয়ায় ৪০টি, রলাকাটায় ৫৫টি ঝুনকার চরে ২৬টি, পার্বতীপুরে ১১টি, চর যাত্রাপুরে ১৩টি বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে।
তিনি আরও জানান, বরুয়া চরের ১০টি পরিবার ভারতীয় সীমান্তে বাংলাদেশ অংশে অস্থায়ীভাবে ঘর তোলায় বিএসএফ সীমান্ত আইনের দোহাই দিয়ে তাদেরকে সরে যেতে তিনদিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন। তাদের আশ্রয়ে কোথাও জায়গা না থাকায় ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। বিষয়টি বিজিবিকে জানিয়েছি।
ইউপি চেয়ারম্যান আরও জানান, সম্প্রতি বন্যায় তার ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রতিদিন তার বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী, বাসস্থানসহ নানা সমস্যা নিয়ে শতাধিক অভাবী মানুষ ভিড় করছে। এ নিয়ে তিনি ভীষণ চিন্তিত। তিনি জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ হিসেবে সরকার থেকে ১৭টন চাল ১৭০০ পরিবারে বিতরণ করা হয়েছে। এখন তাদেরকে সহায়তা করার মত ইউনিয়ন পরিষদ ভান্ডারে কিছুই নেই। নদীভাঙন কবলিত ২০০ পরিবারের আশ্রয়ের জন্য তালিকা প্রস্তুত করেছি। শীঘ্রই সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দিব।
জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই সরকার জানান, নদী ভাঙনে ৪৫৮ বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়। বন্যায় জেলার ৯টি উপজেলার ৫৫টি ইউনিয়ন একটি পৌরসভার ১ লাখ ৬৩ হাজার লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের সাহায্যার্থে ৬০৯ মেট্রিক টন চাল, ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, নদী ভাঙনে শিকার পরিবারগুলোর তালিকা করা হচ্ছে। তাদেরকে শীঘ্রই সহায়তা করা হবে।