ঢাকার শ্রম আদালতে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আত্মপক্ষ সমর্থন শেষ হয়েছে। আগামী ১৬ নভেম্বর এই মামলায় যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) ঢাকা তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা এই আদেশ দেন। আদালতের সেরেস্তা সহকারী মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন এ বিষয়ে এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যুক্তিতর্ক শুনানির পরে রায়ের তারিখ ঘোষণা করবেন আদালত।
এদিকে ড. ইউনূস তার আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে ২২ পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য দাখিল করেন।
লিখিত বক্তব্যে ড. ইউনূস ও তার প্রতিষ্ঠানের এই তিন সহযোগী উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাংকসহ ৫০টির অধিক সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। কোনো কোম্পানিতে তার নিজস্ব কোনো শেয়ার নেই। সুতরাং কোনো লভ্যাংশ বা লাভের টাকা ওনার পকেটে ঢোকে না। যখনই দেশের গরিবদের একটা সামাজিক সমস্যা দেখেছেন, সেটার মাধ্যমেই একটা বিজনেস মডেল বানিয়ে দিয়েছেন। শিক্ষা সমস্যার জন্য বানিয়েছেন গ্রামীণ শিক্ষা, স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য বানিয়েছেন গ্রামীণ কল্যাণ। এমন ব্যবসার ধারণা বা মডেল তৈরির জন্য যথেষ্ট সময় দেন। কিন্তু মালিকানায় কখনো নিজেকে জড়াননি। দেশে-বিদেশে কোথাও নিজের নামে কোনো জায়গা জমি গাড়ি-বাড়ি নেই তার।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দেখান যিনি এতোগুলো ইম্প্যাক্ট তৈরি করেছেন। এতোগুলো বিদেশি ব্র্যান্ড কোম্পানিকে জয়েন্ট ভেঞ্চারে বাংলাদেশে এনেছেন। এত এত মানবসম্পদ তৈরি করেছেন।
লিখিত বক্তব্যে কোম্পানি আইনসহ বিভিন্ন আইনের ব্যাখ্যাসহ এই মামলাটি কেন চলতে পারে না, তার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। তাই ড. ইউনূসসহ অন্যদের মামলা থেকে অব্যাহতিও প্রার্থনা করা হয়।
এদিকে মামলার শুরুর সময় আদালতের এজলাস কক্ষে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ গ্রামীণ টেলিকমের এমডি মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান কাঠগড়ায় দাঁড়ান। পরে বেলা ১টা ১৬ মিনিটে শারীরিক অসুস্থতা ও বয়স বিবেচনায় আইনজীবীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারক চার বিবাদীকেই কক্ষের ভেতরে বেঞ্চে বসে শুনানি কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেন।
এর আগে বেলা ১২টার পরে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ঢাকার শ্রম আদালতে এসে পৌঁছান ড. ইউনূস। আজ ৩৪২ ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন ধার্য করা আছে। তাই ড. মুহাম্মদ ইউনূস আদালতে হাজির হন। একইসঙ্গে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর এ মামলাটি প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি। এই মামলায় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সৈয়দ হাসান আলী ও মো. খুরশীদ আলম খান।
নথি থেকে জানা গেছে, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান ২০১১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে বাদী হয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেন। এতে ড. ইউনূস ছাড়াও গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম এবং মো. শাহজাহানকে বিবাদী করা হয়েছে। মামলায় শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করায় শ্রম আইন ৪ এর ৭, ৮, ১১৭ ও ২৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।