Search
Close this search box.

জঙ্গি সংগঠন হিন্দাল শারক্বীয়ার নায়েবে আমির মহিবুল্লাহ গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার- নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার নায়েবে আমির মো. মহিবুল্লাহকে গ্রেফতার করেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বা সিটিটিসি। তিনি ভোলার শায়েখ নামে পরিচিত ছিলেন।

মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিন্যাল এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছে ডিএমপির সিটিটিসি বিভাগের সিটি ইনভেস্টিগেশন টিম।

বুধবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, মহিবুল্লাহ পুরাতন জঙ্গি সদস্য। ১৯৯২ সাল থেকেই নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের সঙ্গে জড়িত। তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে জামেয়াতুল আহেলিয়া দারুল উলুম মইনূল ইসলাম মাদ্রাসা ছাত্র থাকাকালে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদে জড়িয়ে পড়েন।

আসাদুজ্জামান বলেন, গত ২০২২ সালের জানুয়ারিতে সিটিটিসি গ্রেফতার করে শুরা সদস্য ডা. শাকের ওরফে শিশির, পলাতক জঙ্গি নেতা শামিন মাহফুজসহ গ্রেফতার শায়েখ মহিবুল্লাহ বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যাংছড়ি উপজেলার দূর্গম পাহাড়ে অবস্থিত জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে যান।

এ সময় প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে কুকি-চিনদের বিদ্রোহী সংগঠন কেএনএফ (কুকি-চিন ন্যশানাল ফ্রন্ট) এর তত্ত্বাবধানে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ চলতো। সেখানে তাদের সাথে কেএনএফ এর প্রধান নাথান বম ও অন্যান্য কুকি-চিন নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাত হয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামে সংগঠনটির নামকরণ করা হয় এবং শুরা কমিটি গঠন করে। গ্রেপ্তার মহিববুল্লাহকে সংগঠনটির নায়েবে আমির হিসেবে নির্বাচিত করা হয় বলে জানান সিটিটিসি প্রধান।

তার দাবি, গ্রেফতার মহিববুল্লাহ ক্যাম্পে অবস্থানের সময় সন্ধ্যার পর প্রশিক্ষণরত সদস্যদেরকে বয়ান দিতেন। তার বয়ানের মূল উদ্দেশ্য ছিল ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে জঙ্গি সদস্যদেরকে জিহাদের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করা।

আসাদুজ্জামান বলেন, শায়েখ মহিববুল্লাহ পাহাড়ে কিছুদিন অবস্থান করার পর ঢাকায় চলে আসেন এবং শুরা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে এনক্রিপ্টেড চ্যাটের মাধ্যমে সমন্বয় করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দাওয়াতের মাধ্যমে সংগঠনের কার্যক্রম বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন।

তিনি জানান, শুরা সদস্য ডা শাকেরকে দাওয়াতি কার্যক্রমের বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য শায়েখ মহিববুল্লাহকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সংগঠনের শুরা পর্যায়ের একাধিক সদস্যের সঙ্গে ঢাকা, সিলেট ও কিশোরগঞ্জে সংগঠনের কার্যক্রম জোরদার করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তিনি একাধিক বৈঠকে অংশ নেন। এছাড়া তিনি হাটহাজারীসহ বিভিন্ন মাদ্রাসাতে বিভিন্ন সময়ে আসা-যাওয়া করতেন এবং সেখান থেকে পেনড্রাইভে বিভিন্ন জিহাদি ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে তার ল্যাপটপে সংরক্ষণ করতেন।

সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান বলেন, ডা. শাকের সিটিটিসির হাতে গ্রেফতারের পর শায়েখ মহিববুল্লাহ নিজেকে আড়াল করতে তার ব্যবহৃত সিম ও মোবাইল ফোন নষ্ট করে ফেলেন। জিহাদ সংক্রান্ত বিষয়ে তার নিজস্ব লেখার খসড়া কপিও তার কাছে পাওয়া গেছে বলেও জানান সিটিটিসি প্রধান।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার শায়েখ মহিবুল্লাহ সিটিটিসিকে জানায়, তিনি উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার নায়েবে আমির হিসেবে কথিত শুরা বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং তিনি ভোলার শায়েখ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। প্রশিক্ষণ ক্যাম্পসহ জঙ্গি সংগঠনটির সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন শামীন মাহফুজ। তৎকালীন হুজির নেতা মুফতি আব্দুর রউফ আফগানিস্তানসহ অন্যান্য স্থানে জিহাদে যাওয়ার ব্যাপারে হাটহাজারি মাদ্রাসা ও আশে পাশের এলাকায় নিয়মিত বক্তব্য প্রদান করতেন এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতিত মুসলিমদের সাহায্য করার জন্য সশস্ত্র জিহাদের ডাক দিতেন। সে সময় হুজির অন্যান্য জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে শায়েখ মহিববুল্লাহ যুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি বিভিন্ন মাদ্রাসাতে শিক্ষকতা শুরু করেন।

প্রশাসনের নজরদারির কারণে হুজি-বি’র কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে পড়ায় মহিববুল্লাহ তৎকালীন হুজির সদস্যদের নতুন একটি প্লাটফর্মে জিহাদি কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা করেন। সেই লক্ষ্যে হুজির আরেক নেতা মাইনুল ইসলাম ওরফে রক্সি তার সঙ্গে ২০১৭ সালে ভোলায় গিয়ে সাক্ষাত করেন। এ সময় হুজির অন্যান্য নেতারাও তাদের সাথে যুক্ত হয়। এরপর থেকেই মাইনুল ইসলাম রক্সি ও মহিববুল্লাহর মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ শুরু হয়। ২০২১ সালে রক্সি গ্রেফতারের পর হুজির আরেকজন সদস্য রাকিবের সঙ্গে মহিববুল্লাহর যোগাযোগ তৈরি হয়। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জঙ্গি কার্যক্রমপরিচালনার কাজে সদস্য সংগ্রহ ও দাওয়াতি কার্যক্রম চালাতে থাকে বলে জানান আসাদুজ্জামান।

এক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, এই জঙ্গি সংগঠনের প্রধান ব্যত্তিত্ব শামীম মাহফুজ। তার নির্দেশে একটি কমিটি হয়। কমিটির প্রথম আমির ছিলেন রক্সি। রক্সি গ্রেপ্তারের পর আরেকজন আমির নিযুক্ত হোন। শুরা কমিটির ছয়জন সদস্য ছিলেন। এরমধ্যে আনিসুল ইসলাম তমালকে নতুন আমির নিযুক্ত ও শায়েখ মহিবুল্লাহকে নায়েবে আমির নিযুক্ত করা হয়।

মূল ব্যক্তিত্ব শামীম মাহফুজকে গ্রেফতার করা যাচ্ছে না কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। শামীম, তমাল ও রাকিব পলাতক। তাদের গ্রেফতারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।

তিনি বলেন, ‘রক্সিকে গ্রেফতারের সময় দায়ের করা মামলায় এজহার নামীয় আসামি ছিলেন র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার রনবীর। তাকে শ্যোন এরেস্ট দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার মাধ্যমে পলাতক শীর্ষ নেতাদের সম্পর্কে তথ্য পাবার আশা করা হচ্ছে।

শামীম মাহফুজ সম্পর্কে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ডিবি পুলিশের হাতে একবার গ্রেপ্তার হয়েছিল। শামীম মাহফুজ কুকি চিন প্রধার নাথাম বমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। পাহাড়ি অঞ্চলে যাতায়াত ছিল শামীমের। নাথাম বমের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছে শামীম। তিনি স্বপরিবারে নিখোঁজ। তার স্ত্রী এই সংগঠনের জড়িয়েছেন কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গ্রেফতার শায়েখ মহিবুল্লাহর বিরুদ্ধে ডেমরা থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান সিটিটিসির এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ