শনিবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শাপলা বড়ুয়ার ভ্রমণ কাহিনী ‘মহানন্দার পাড়ে দেখেছিলাম তারে’

কুয়াশার পথ মাড়িয়ে, আড়মোড়া ভেঙে ধীর লয়ে ডিপো ছাড়ছে এক একটি বাস। আবছা হয়ে আছে চারদিক। হঠাৎ হঠাৎ কুয়াশা ফুঁড়ে বেরিয়ে আসতে দেখা গেল একজন-দু’জন করে পথচারীদের। তবে এই শীত ভোরে পথঘাট এখনো তেমন জমেনি।

গন্তব্য আমাদের তেঁতুলিয়া। বোদা থেকে রওনা দিয়েছিলাম আমরা। বোদা থেকে বাসে দুই-আড়াই ঘন্টার পথ। সবে একটু একটু করে কুয়াশা সরতে শুরু করেছে। রাস্তার দু’পাশে বিস্তীর্ণ চা বাগান। সবুজের মেলা বসেছে যেনো প্রকৃতিজুড়ে। অবশেষে গন্তব্যে এসে থামলো বাস। অপূর্ব সুন্দর রহস্য নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হলো তেঁতুলিয়া। যতই গ্রামে ঢুকছি বিস্ময়ের দুয়ার মেলে অপেক্ষা করে আছে যেন প্রকৃতি। মনে হচ্ছিল, এতদিন কেন অধরা থেকে গিয়েছিল এর অপরূপ সৌন্দর্য! আমার দেখা বাংলাদেশের সব চাইতে সুন্দর জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া। তবে বাংলাদেশের অনেক জেলা দেখার সৌভাগ্য আমার এখনো হয়নি। এরপরও তেঁতুলিয়া আমার কাছে অনন্য! এর ধার ঘেঁষে বয়ে চলেছে মহানন্দা। সুদীর্ঘ এই নদী দুই ভাগ করেছে দু’দেশকে। এপারে বাংলাদেশ, ওপারে ভারত। কী টলটলে, স্বচ্ছ জল মহানন্দার‌! নদীর পাড়ে দাঁড়াতেই সুশীতল, স্নিগ্ধ আমেজ মোহাবিষ্ট করে ফেললো আমাদের। এপার থেকে অবাক বিস্ময়ে ভারতের সীমান্ত দেখছিলাম আমরা। আবছা আবছা গরুর পাল দেখা যাচ্ছিল এপার থেকে। মনে হচ্ছিল, রাখালেরা গরুদের নিয়ে  সরু পাহাড়ি পথ বেয়ে, লাইন ধরে হেঁটে চলেছে কোন অজানার উদ্দেশ্যে।

সবুজ প্রকৃতির মতোই সরল ও সুন্দর এদিকের মানুষগুলো। এখানকার মতো এতো আদর-আপ্যায়ন আমি এর আগে কোথাও দেখিনি। তাই ফিরে আসতে গিয়েও, মন বাদ সাদছিলো বারবার। এরপরও ফিরে তো আসতেই হয়। তবে ফিরতি পথে একটা বাজে অভিজ্ঞতা নিয়ে আসতে হয়েছিল আমাকে। দেখলাম, সেনাবাহিনী এক একটি বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রীদের সার্চ করছে। তবে ওদের নজর, মহিলা সিট ও তার পাশে লাগোয়া জায়গাটিতে ঘেঁষাঘেঁষি করে বসা মহিলাদের ওপর। নানান জেরা করছে সেই মহিলাদের। আর মহিলারা আড়ষ্ট হয়ে ভয়াতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। হঠাৎ দেখি, সেনাবাহিনীর এক কর্মী বাস থেকে নেমে, আমার মুখ বরাবর রাস্তায় দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখছে আমাকে আর কিছুদূর গিয়ে; নিজেদের মধ্যে কী যেনো বলাবলি করছে। আমাদের মধ্যে যিনি সিনিয়র, তিনি ঘটনাটা হয়তো খেয়াল করেছিলেন। উনি সঙ্গে সঙ্গে নেমে গিয়ে, কী যেন বললেন ওনাদের! এর পর পরই আমাদের বাসটাকে ছেড়ে দিলেন তারা।

বুঝলাম, এখানে নারী ও শিশু পাচারের মতো ঘটনা ঘটে। আমার ট্রাইবাল চেহারা। আর এই চেহারাই ছিলো ওদের কৌতুহলের কারণ! যে আনন্দ কুড়িয়ে নিয়ে এসেছিলাম পথে-প্রান্তর থেকে, মুহূর্তেই সেই খোশ মেজাজে জল ঢেলে দিলো যেন এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি!

এরপরও তেঁতুলিয়া আমার কাছে অনন্য ও অসাধারণ! এর অপরূপ সৌন্দর্য কখনোও মন থেকে মুছে ফেলার নয়!।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ