Search
Close this search box.

সৌদির নতুন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান

সৌদির নতুন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক – ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে সৌদি আরবের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। ২৭ সেপ্টেম্বর, এক রাজকীয় আদেশে তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ। আধুনিক সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা ও দেশটির প্রথম বাদশাহ আবদুল আজিজ আল সৌদের সময় থেকে দেশটিতে একজনের হাতে এতো বেশি ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হতে দেখা যায়নি। ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এখনো রাজা নন। কিন্তু ৩৭ বছর বয়সী রাজ পরিবারের এই সদস্য মূলত তার পিতার পরিবর্তে দেশ পরিচালনা করবেন। আবদুল আজিজ আল সৌদের বয়স এখন ৮৬। প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে তার বাবার স্থলাভিষিক্ত হলেন। প্রিন্স মোহাম্মদ সালমান এমন পদক্ষেপ নিচ্ছেন যা দেশটির মূল ভিতে নাড়া দিচ্ছে। সমাজ সংস্কার ও পরিবর্তন দেশটির ধর্মীয় বিধিনিষেধগুলো শিথিল করছে যা কয়েক দশক ধরে রক্ষণশীল ইসলামী সমাজকে ধারণ করে আসছিল।

২০২১ সালে জো বাইডেন যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন তিনি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে লেনদেন বা যে কোনো সম্পর্ক স্থাপন এড়িয়ে যান। ২০১৮ সালের অক্টোবরে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে জামাল খাশোগিকে হত্যা করা হয়। সৌদির একটি কিলিং স্কোয়াড টিম প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটায় বলে অভিযোগ ওঠে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার নির্বাচনী প্রচারে সৌদি আরবকে এর মূল্য চুকাতে বাধ্য করবেন এবং দেশটিকে একঘরে করে ছাড়বেন বলে প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেন। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অভিযোগ করে যে মোহাম্মদ বিন সালমান এই হত্যাকাণ্ডের অনুমোদন দিয়েছেন। তবে যুবরাজ সব সময় এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। সেই বিষয় উপেক্ষা করে এখন বাইডেন প্রশাসন সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে ‘সখ্যতা’ চাইছে।

তিনি অপরিশোধিত তেলের রপ্তানিকারকদের ওপর নির্ভরতা কমাতে এবং বিশ্বে তার স্থানকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করছেন। পর্যটনের মতো নতুন সেক্টরে উন্নয়নের জন্য জোর দেওয়াও তার গুরুত্বের তালিকায়। যদিও রাজনৈতিক দমন-পীড়নের অভিযোগও শোনা যায় তার বিরুদ্ধে। তার সমর্থকরা বলছেন যে, বিন সালমানের সাহসী উচ্চাকাক্সক্ষা এবং শক্ত মনোভাব একটি অস্থিতিশীল অর্থনীতিকে বাঁচাতে খুবই প্রয়োজন। অপরদিকে, তার সমালোচকরা বলছেন তিনি স্বৈরাচারী, ক্ষমতার জন্য ক্ষুধার্ত এবং বেপরোয়া।

২০২২ সালের মাঝামাঝি, তেলের ক্রমবর্ধমান দাম কমিয়ে আনার জন্য প্রেসিডেন্ট নিজ দেশে চাপের মধ্যে পড়েছিলেন। এইভাবে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করতে কাজে দেয় তেল রপ্তানির বিষয়টি। গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে, বাইডেন এমবিএস-এর সঙ্গে দেখা করেন। সৌদিতে দুই নেতার বৈঠকের আগে প্রিন্সের সঙ্গে বাইডেনকে ফিস্ট-বাম্পিং (করোনাবিধি মেনে মুষ্টিবদ্ধ হাতে করমর্দন সেরে নেওয়া) করতে দেখা যায়। এটাকে দুই দেশের মধ্যে উষ্ণ সম্পর্ক হিসেবেই দেখা হয়ে থাকে।

প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ১৯৮৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। এমবিএস নিজেকে ডিজিটাল যুগে বড় হওয়া প্রথম প্রজন্মের অংশ হিসাবে দেখেন। সৌদি রাজপরিবারের অনেক রাজকুমারের মধ্যে তিনি একজন, যিনি কিং সৌদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপরই কর্মজীবন শুরু হয় তার এবং বাবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন। ২০০৯ সালে পিতার বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন তিনি। রিয়াদ প্রদেশের গভর্নরও ছিলেন। এরপর প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হন। অবশেষে সৌদির ডি-ফ্যাক্টো নেতা হিসেবে পরিচিত হন।

এমবিএস অনেক সামাজিক বিধিনিষেধ শিথিল করেছেন দেশটিতে। নারী চালকদের ওপর নিষেধাজ্ঞার অবসান ঘটিয়েছেন। ধর্মীয় পুলিশের ক্ষমতা রোধ করেছেন এবং সামাজিক মেলামেশা ও পাবলিক কনসার্টের অনুমতি দিয়েছেন।
দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে ভিশন-২০৩০ ঘোষণা করেছেন। তবে, যুবরাজের নেতৃত্বে, সৌদি কর্তৃপক্ষ দেশটিতে ভিন্নমত দমন-পীড়ন করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০২০ সালে, কর্তৃপক্ষ সাবেক ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফকে আটক করে এবং তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে অবমূল্যায়ন করার অভিযোগ তোলে।

এমবিএস অন্যান্য সৌদি নেতাদের তুলনায় আরো দৃঢ় বৈদেশিক নীতি গ্রহণ করেছেন। প্রতিবেশী দেশ কাতারের সঙ্গে বিরোধের সমাধান করেছেন। তবে ২০১৫ সালে ইয়েমেনে বোমা হামলার কারণে যে মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে সেখানেও তার দায় আছে।

অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করছেন যে রাজপুত্র খুব অনভিজ্ঞ এবং স্বেচ্ছাচারী। কিন্তু তার কর্তৃত্ব পরীক্ষা করার বা তার পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন তোলার জন্য কেউ অবশিষ্ট নেই। তার ক্ষমতার এককেন্দ্রীকরণ এবং দমনমূলক প্রবণতার কিছু সমালোচনা এরই মধ্যে রয়েছে। বিন সালমানের বেশ কিছু পদক্ষেপের কারণে সামাজিক পরিবর্তন ঘটছে যা নিয়ে দেশটির অনেকেই উদ্বিগ্ন এবং জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে সংগ্রাম করছে অনেকে। তবুও অনেকে বিশেষ করে তার পরিকল্পনার উৎসাহী সমর্থকরা বলছেন যে তিনি তাদের দেশকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন। অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা উন্মোচন করেছেন এবং তাদের মৌলিক সামাজিক স্বাধীনতা দিয়েছেন যা তারা দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছিলেন।

সৌদির অর্ধেকেরও বেশি নাগরিকের বয়স ৩০ বছরের কম। নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যুবরাজকে বেশিরভাগ সৌদি নাগরিকই গ্রহন করেছেন বলে জানা যায়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ