স্টাফ রিপোর্টার \ সৃষ্টির আবাসিক ভবনে ৫ম শ্রেনীর ছাত্র শিহাব (১২) নিহতের ঘটনায় এ পর্যন্ত নয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী । গতকাল ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশের পর সৃষ্টি ভবনে ঝটিকা অভিযান চালায় র্যাব ও পুলিশের যৌথ বাহিনী। এসময় সৃষ্টির অধ্যক্ষ সহ নয় শিক্ষককে আটক করে নিয়ে যায় তারা। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাত জনকে ছেড়ে দেয়া হলেও বাকী দুইজন এখনো পুলিশি হেফাজতে রয়েছে। এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের এসপির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে সোমবার সকালে শিহাব হত্যাকাণ্ড ইস্যুতে উত্তাল হয়ে উঠে টাঙ্গাইল শহর। হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এসময় টাঙ্গাইল শহরে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুরে সৃষ্টির বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিন করে ডিসি অফিসের সামনে গিয়ে উপস্খিত হয়। পরে ডিসি ড. মো: আতাউল গনির কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীরা সৃষ্টি স্কুলের ৫ম শ্রেনির ছাত্র শিহাব হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন সহ জড়িতদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানায়। শিক্ষার্থীরা হুশিয়ারী উচ্চারন করে বলেন, আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রকৃত আসামী খুজে বের করতে না পারলে এই আন্দোলন আরো কঠোর হবে।
এর আগে শিহাব নিহতের ঘটনায় টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের আরএমও সহ ৩ চিকিৎসকের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। ওই ৩ সদস্যদের মেডিকেল বোর্ড ময়নাতদন্তের কাজ সম্পন্ন করেন। গতকাল ২৬শে জুন ময়নাতদন্তের রিপোর্টে গামছা জাতীয় কোন কিছু পেছিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার আলামত পাওয়া যায় বলে জানায় জেলা সিভিল সার্জেন আফিস। এর পর পরই উত্তাল হয়ে উঠে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষাথীরা।
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশের পর তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় শিহাবের বাবা ইলিয়াস জানান, তারা সৃষ্টির চেয়ারম্যানসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ময়নাতেদন্তের রিপোর্ট আনুষ্ঠানিক ভাবে পাওয়ার পর তার যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্যাবস্থা নিবেন। তিনি টাঙ্গাইলের সর্ব স্তরের অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা আপনাদের সন্তানকে যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আগে অবশ্যই দেখে নিবেন “সেই প্রতিষ্ঠান জঙ্গিরা চালায় কিনা”। সে সময় তিনি তার ছেলে হত্যার বিচারের জন্য টাঙ্গালের সর্ব স্তরের মানুষের সহযোগীতা চান।
উল্লেখ্য গত ২০শে জুন সৃষ্টি ভবনের আবাসিকের টয়লেটে গলায় গামছা পেচানো ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় শিহাবের লাশ। শিক্ষকরা দ্রুত শিহাবকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষনা করেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রথমে তার পরিবার কে জানায় শিহাব সিএনজি দূর্ঘটনায় আহত হয়েছে। এর পর আবার ফোন দিয়ে জানানো হয় শিহাব মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে। শিহাবের আত্বীয় স্বজনরা দ্রুত সেখানে গেলে তাদেরকে গেট থেকেই ফেরত পাঠানো হয় । এসব ঘটনা নিয়েই ধুম্রজালের সৃষ্টি হয় । শিক্ষক আটকের বিষয়ে সৃষ্টির চেয়ারম্যন ড. শরিফুল ইসলাম রিপনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।
বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও সচেতন মহল ভুক্তভোগী পরিবারের পাশে থাকায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শিহাবের বাবা-মা।