স্টাফ রিপোর্টার- নব্বইয়ের দশকে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত এক কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছিলেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম, মৃত্যুর ২৮ বছর পর সেই বিনিয়োগের অর্থ লভ্যাংশসহ ফেরত পাচ্ছেন তার সন্তান।
মঙ্গলবার জাহানারা ইমামের ছেলে সাইফ ইমাম জামীরের কাছে ওই অর্থ তুলে দেওয়া হয়েছে বলে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল তহবিল (সিএমএসএফ) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন।
জাহানারা ইমাম ১৯৯৩ সালে দ্য ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডে নামে একটি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছিলেন। এই কোম্পানি বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল বাজার থেকে তালিকাচ্যুত হয়ে ওটিসি (ওভার দ্যা কাউন্টার) বাজারে রয়েছে।
বিনিয়োগের সেই মূল অর্থ এবং ২০১৯ সাল পর্যন্ত লভ্যাংশ মিলিয়ে জাহানারা ইমামের প্রাপ্য অর্থ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার ৪১০ টাকা। ১৯৯৪ সালে জাহানারা ইমামের মৃত্যুর পর বিনিয়োগের অর্থ এবং লভ্যাংশ কেউ দাবি না করায় ২৮ বছর ধরে তা কোম্পানির কাছে ছিল।
সিএমএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন বলেন, “মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শহীদ জননী জাহানার ইমামের সন্তানের হাতে অর্থ তুলে দেওয়া হবে। এরকম মোট ৪২ জনের কাছে অর্থ তুলে দেওয়া হবে।”
বিনিয়োগকারীদের জন্য ঘোষিত লভ্যাংশ দাবি না করায় তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানির কাছে এরকম অদাবিকৃত অর্থ রয়েছে। সেই অর্থ সংগ্রহ করে বাজার উন্নয়নে ব্যবহার করতে গঠন করা হয়েছে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল তহবিল বা সিএমএসএফ।
ওই তহবিল পরিচালনায় একটি কমিটি ও নীতিমালা করে দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। অন্যান্য অনেক বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি জাহানারা ইমামের লভ্যাংশ ও বিনিয়োগকৃত অর্থও সংগ্রহ করেছে সিএমএসএফ।
ঢাকার একটি হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে জাহানারা ইমামসহ এরকম ৪২জন বিনিয়োগকারীর অর্থ বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক জাহানারা ইমাম ১৯২৯ সালের ৩ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন তার ছেলে শফি ইমাম রুমী, স্বামী শরীফ ইমামও ওই সময়ে মারা যান।
একাত্তরের দিনগুলি’র লেখক জাহানারা ইমাম ১৯৮৮ সালে ‘বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ সাহিত্য পুরস্কার’ ও ‘কমর মুষতারী সাহিত্য পুরস্কার’ পান। ১৯৯১ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান তিনি।
প্রথম জীবনে শিক্ষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত শহীদ জননী জাহানারা ইমাম যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ছিলেন সোচ্চার। তার নেতৃত্বে ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি ১০১ সদস্যের একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠিত হয়। তিনি ছিলেন এর আহ্বায়ক।
এই কমিটি ১৯৯২ সালে ২৬ মার্চ ‘গণআদালত’ এর মাধ্যমে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একাত্তরের ‘নরঘাতক’ গোলাম আযমের প্রতীকী বিচার শুরু করে। দীর্ঘদিন দুরারোগ্য ক্যান্সারে ভোগার পর ১৯৯৪ সালের ২৬ জুন মারা যান জাহানারা ইমাম।