স্টাফ রিপোর্টার- বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ৭ জন এবং পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী বিভিন্ন সংগঠন এর ৩ জনসহ মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এসময় সেখান থেকে বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে র্যাব সদস্যরা।
গত কয়েকদিন যাবৎ বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চলে চিরুনী অভিযানে নামে র্যাব। গোয়েন্দা নজরদারীর মাধ্যমে বৃহস্পতিবার রাতে রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ির সাইজামপাড়া ও বান্দরবানের রোয়াংছড়ি বাজার এলাকায় র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার নেতৃত্বে র্যাব-৭ ও র্যাব-১৫ অভিযান পরিচালনা করে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সৈয়দ মারুফ আহমদ ওরফে মানিক (৩১), ইমরান হোসাইন ওরফে সাওন (৩১), কাওসার ওরফে শিশির (৪৬), জাহাঙ্গীর আহম্মেদ ওরফে জনু (২৭), মোঃ ইব্রাহিম ওরফে আলী (১৯), আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে বাপ্পি (২৩), রুফু মিয়া (২৬), এবং পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের জৌথান স্যাং বম (১৯), স্টিফেন বম (১৯), মাল সম বম (২০)দেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
এসময় তাদের হেফাজত থেকে ৯টি বন্দুক, ৫০ রাউন্ড বন্দুকের গুলি, কার্তুজ কেইস (বন্দুক) ৬২টি, হাত বোম্ব ৬টি, কার্তুজ কেইস ১টি, কার্তুজ বেল্ট ২টি, দেশীয় পিস্তল ১টি, বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র, ওয়াকিটকি ১টি, ওয়াকিটকি চার্জার ৩টি, ১০টি মানচিত্র ও অন্যান্য ব্যবহার্য সরঞ্জামাদি উদ্ধার করে র্যাব।
বান্দরবন র্যাব ক্যাম্পে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন র্যাব লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লা থেকে বেশ কয়েকজন তরুণ উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়। এলিট ফোর্স র্যাব এ বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে র্যাব ফোর্সেস জানতে পারে আরও বেশ কয়েকজন তরুণ ঘর ছেড়ে উগ্রবাদের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। র্যাবের গোয়েন্দা শাখার একটি টীম বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়া এরকম ৪ তরুণকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে তাদেরকে ডি-র্যাডিক্যালাইজড করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়।
এছাড়াও, ইতোমধ্যে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ এক তরুণ নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। বিভিন্ন সূত্রের প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ৬ অক্টোবর মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কুমিল্লাসহ অন্যান্য অঞ্চল থেকে নিখোঁজ ৪ জন তরুণ ও উগ্রবাদী সংগঠনের দাওয়াতী, তত্তাবধান, প্রশিক্ষণ, আশ্রয় প্রদান ও অন্যান্য কার্যক্রমের সাথে জড়িত ৩ জনসহ মোট ৭ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব। তাদের নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ১০ অক্টোবর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও কেরাণীগঞ্জ থেকে উগ্রবাদী সংগঠনটির দাওয়াতী ও অন্যতম অর্থসরবরাহকারী হাবিবুল্লাহ ও নিরুদ্দেশ ৩ তরুণসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব। বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতারকৃতরা উগ্রবাদী এই সংগঠন সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।
তিনি আরও বলেন, ইতোপূর্বে গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, হরকাতুল জিহাদ, জেএমবি এবং আনসার আল ইসলামের বেশ কিছু সদস্য ২০১৭ সালে নতুন একটি উগ্রবাদী সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে ‘‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া” (পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দের জামাতুল আনসার) নামে নামকরণ করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। হুজিবি, জেএমবি ও আনসার আল ইসলাম নিষিদ্ধ হওয়ায় নিষিদ্ধ সংগঠন থেকে সদস্য সংগ্রহ ও অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা দুরূহ হয়ে পড়েছিল বিধায় তারা সংগঠন হতে বের হয়ে নতুন এই উগ্রবাদী সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করে।
প্রাথমিকভাবে উগ্রবাদী এই সংগঠনের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কোমলমতি তরুণদেরকে টার্গেট করত। তাদেরকে বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ ভিডিও এবং ধর্মীয় অপব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ করা হত। অতপর উক্ত তরুণদেরকে সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিতে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়ে উৎসাহী করে তুলতে বিভিন্নভাবে মোটিভেশনাল কার্যক্রম পরিচালনা করা হত। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া নিখোঁজ তরুণদের সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতির জন্য প্রশিক্ষণ নিতে পটুয়াখালী ও ভোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রেরণ করা হয়। এ সময় নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণদেরকে বিভিন্ন সেইফ হাউজে রেখে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হত। প্রশিক্ষণকালীন বিভিন্ন ব্যক্তির তত্তাবধানে রেখে পটুয়াখালী ও ভোলার বিভিন্ন চর এলাকায় শারীরিক কসরত ও জঙ্গিবাদ বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষন প্রদান করা হত। এছাড়াও, আত্মগোপনে থাকার কৌশল হিসেবে তাদেরকে রাজমিস্ত্রী, রং মিস্ত্রী, ইলেকট্রিশিয়ানসহ বিভিন্ন পেশার কারিগরী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হত।
কমান্ডার মঈন জানান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণের সংখ্যা ৫০ এর অধিক। যার মধ্যে ৩৮ জনের নাম ঠিকানা র্যাব ইতোমধ্যে উপস্থাপন করেছে। নিরুদ্দেশ সদস্যরা প্রায় দেড় মাস থেকে দুই বছরের অধিক সময় ধরে নিরুদ্দেশ বা নিখোঁজ ছিল বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে কয়েকজনের পরিবার জানত যে তারা চাকুরীর জন্য বিদেশে অবস্থান করছে এবং বিভিন্ন সময় পরিবারের নিকট অর্থ প্রেরণ করত। আরও জানা যায় যে, নিখোঁজ ব্যক্তিদের অনেকেই বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের ছত্রছায়ায় দুর্গম অঞ্চলে আত্মগোপনে থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ, বিভিন্ন নাশকতা ও সশস্ত্র হামলার পরিকল্পনাসহ সংগঠনটির বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
তিনি আরও জানান, গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামক উগ্রবাদী সংগঠনে জড়িত হয়ে তারা দেড় মাস হতে দুই বছরের বেশি সময় ধরে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। তাদের মধ্যে কেউ নিকটাত্মীয়, কেউ বন্ধু, কেউ স্থানীয় ব্যক্তি ও পরিচিত জনদের মাধ্যমে উগ্রবাদী এই সংগঠনে জড়িত হয়। জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামক উগ্রবাদি জঙ্গি সংগঠনে যোগদান করে কথিত হিজরতের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ধাপের কর্মকেন্দ্রিক স্তর অতিক্রম করে উত্তীর্ণ হওয়া সাপেক্ষে নিখোঁজ হওয়া যুবকরা প্রশিক্ষণের জন্য আসে বলে জানা যায়।
সংগঠনের সদস্যরা তাদেরকে উগ্রবাদে উৎসাহী করে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে বিভিন্ন এলাকায় শারীরিক প্রশিক্ষণ ও তাত্তিক জ্ঞান প্রদানের জন্য পটুয়াখালী, ভোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় জ্যেষ্ঠ সদস্যদের তত্তাবধানে বিভিন্ন সেইফ হাউজে রাখত। পরবর্তীতে প্রশিক্ষণে উত্তীর্ণ তরুণদেরকে বান্দরবানের দুর্গম পার্বত্য এলাকায় পরবর্তী ধাপের প্রশিক্ষণের জন্য প্রেরণ করা হত। বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ছত্রছায়ায় তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হত।
কমান্ডার মঈন বলেন, বান্দরবানের দুর্গম এলাকায় পরবর্তী ধাপের প্রশিক্ষণে তাদেরকে আগ্নেয়াস্ত্র চালানো, আইইডিসহ বিভিন্ন ধরণের বোমা তৈরি, চোরাগুপ্তা হামলা, প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকার বিভিন্ন কৌশলসহ বিভিন্ন ধরণের শারীরিক ও তাত্তিক জ্ঞান বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হত ।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা গেছে, পার্বত্য অঞ্চলের প্রশিক্ষণ শিবিরে মোট প্রশিক্ষণার্থী ৫০ এর অধিক। ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া সংগঠনটির আমির মোঃ আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ নামক ব্যক্তি যার নেতৃত্বে উগ্রবাদী সংগঠনটি পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়াও, উগ্রবাদী এই সংগঠনে ৬ জন শূরা সদস্য রয়েছে যারা দাওয়াতী, সামরিক, অর্থ, মিডিয়া ও উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছে। শূরা সদস্য আবদুল্লাহ মাইমুন দাওয়াতী শাখার প্রধান, মাসকুর রহমান সামরিক শাখার প্রধান, মারুফ আহমেদ সামরিক শাখার ২য় ব্যক্তি, মোশারফ হোসেন অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান, শামীম মাহফুজ প্রধান উপদেষ্টা ও প্রশিক্ষণের সার্বিক তত্তাবধায়ক এবং ভোলার শায়েখ আলেম বিভাগের প্রধান হিসেবে সংগঠনটিতে দায়িত্ব পালন করছে।
তারা অস্ত্র চালনাসহ সশস্ত্র সংগ্রামের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গোপনে পরিচালনার জন্য তারা বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির দুর্গম এলাকাকে বেছে নেয়। এজন্য তারা স্থানীয় একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সহায়তা গ্রহণ করে। তারা পার্বত্য অঞ্চলের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন হতে তাদের খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি অর্থের বিনিময়ে সংগ্রহ করত। তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের সদস্যদের সাথে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যোগাযোগ করত।
পার্বত্য অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের গ্রেফতারকৃত ৩ জন সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা কেএনএফ (কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট) এর সামরিক শাখা কেএনএ এর সদস্য। জানা যায় যে ‘কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট নামক সশস্ত্র সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা নাথাং বম এর সাথে ২০২১ সালে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া এর আমীর এর সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং পার্বত্য অঞ্চলের কেএনএফ এর ছত্রছায়ায় জামাতুল আনসার এর সদস্যদের আগামী ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে তিন লক্ষ টাকা এবং কেএনএফ এর সকল সদস্যের খাবার খরচ বহন করা হত।
র্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃত মারুফ আহমেদ ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর গ্রেনেড হামলা ও কিবরিয়া হত্যা মামলার আসামী হাফেজ নাঈমের ছোট ভাই (সহোদর)। সে স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে পড়ালেখা শেষ করে হাঁস, মুরগী, গবাদি পশু ও মাছের খামার পরিচালনা করত। গ্রেফতারকৃত মারুফ তাঁর বড় ভাই এর পরামর্শে জামাতুল আনসারের শূরা সদস্য মাসুকুর রহমানের মাধ্যমে উগ্রবাদী এই সংগঠনে যুক্ত হয়। সে সিলেট অঞ্চলে দাওয়াতী কার্যক্রম পরিচালনাসহ সিলেট অঞ্চল থেকে নিরুদ্দেশ ব্যক্তিদের তাত্তিক জ্ঞান প্রদান ও অন্যান্য মোটিভেশন প্রদান করত। সে জামাতুল আনসারের শূরা সদস্য এবং সামরিক শাখার ২য় প্রধান ব্যক্তি। সে পার্বত্য অঞ্চলে দীর্ঘদিন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। সে বিভিন্ন সময় ১-২ মাস পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থান করত এবং শূরা কমিটির সভায় অংশগ্রহন করত। সে সমতলে এসে সংগঠনে নতুন সদস্য যুক্ত করাসহ জড়িত অন্যান্য সদস্যদের তত্তাবধান ও প্রশিক্ষনে প্রেরণের কার্যক্রম পরিচালনা করত। এছাড়াও সে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিভিন্ন ধরণের অস্ত্র প্রশিক্ষণ প্রদানসহ ওয়ান শুটার গান/এসবিবিএল এর কার্তুজ সরবরাহ করত বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত ইমরান হোসাইন শাওন ২০১০ সালে বরিশালের স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান থেকে হেলথ টেকনোলজি বিষয়ে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে বরিশাল সদরের একটি প্যাথলজি প্রতিষ্ঠানে কাজ করত। সে বরিশালের কাউনিয়া এলাকায় এক ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হয় এবং জংঙ্গিবাদী এই সংগঠনে জড়িত হয়। সে নিয়মিত সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য চাঁদা প্রদান করত। শাওনের মূল কাজ ছিল বরিশাল অঞ্চলের কোমলমতি তরুণদের খুজে বের করে তাদেরকে সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের মাধ্যমে ব্রেইন ওয়াশ করে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ও নিরুদ্দেশ হতে উৎসাহী করে তোলা। এছাড়াও সে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তরুনদের মোটিভেশন দেয়ার পাশাপাশি নিরুদ্দেশ তরুনদের প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন অঞ্চলে প্রেরণের কাজ করত। সর্বশেষ নিখোঁজ ১২ জনের দলকে শাওন ঢাকায় একত্রিত করে সংগঠনের শূরা সদস্য মোশারফ হোসেন এর নিকট হস্তান্তর করে।
গ্রেফতারকৃত কাওসার ওরফে শিশির পূর্বে টেইলার এর দোকানে কাজ করত। সে ২০০০ সালে ঝিনাইদহের এক ব্যক্তির মাধ্যমে হুজিতে যোগ দেয় ও নাইক্ষ্যংছড়িতে ৬ মাসের সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। সে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সে হুজির সাথে যুক্ত ছিল। হুজি বিলুপ্ত হলে সে রাজধানী ঢাকায় হকারি ও গার্মেন্টেস এ চাকুরী করত বলে জানায়। পরবর্তীতে সে ২০১৭ সালে ঝিনাইদহের এক ব্যক্তির মাধ্যমে এই সংগঠনে যোগদান করে। সে বিভিন্ন সময় সংগঠনটির যোগাযোগকে তরান্বিত করার লক্ষ্যে পার্বত্য অঞ্চলে গমন করত।
গ্রেফতারকৃত জাহাংগীর আলম সিলেটের স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত ছিল এবং পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সেবা অফিসে কাজ করত। সে অনলাইনে বিভিন্ন ধরণের ভিডিও দেখে ও স্থানীয় এক ব্যক্তির এর মাধ্যমে উগ্রবাদী এই সংগঠনে জড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন মাধ্যমে সংগঠনের জন্য উত্তোলিত অর্থ সে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের নিকট পৌছে দিত বলে জানায়। এছাড়াও, সে সিলেট অঞ্চলে অনুষ্ঠিত শূরা কমিটির মিটিং এ খাদেম এর দায়িত্ব পালন করত। নিরুদ্দেশ তরুনদের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেয়ার জন্য সংগঠন থেকে তাকে একটি মোটরসাইকেল কিনে দেয়া হয়েছিল। সে মাঝে মধ্যে পার্বত্য অঞ্চলে গিয়ে খুব অল্প সময় থেকে পুনরায় চলে আসতো।
গ্রেফতারকৃত ইব্রাহীম স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত ছিল। পটুয়াখালীর যে নিখোঁজ তালিকা রয়েছে সে তার মধ্যে একজন। ২০২০ সালে বরিশালে গ্রেফতারকৃত হোসাইন এর সাথে তার পরিচয় হয় এবং উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হয়। পরবর্তীতে ২-৩ মাস পূর্বে হোসাইন এর নির্দেশনায় ১ম ধাপের প্রশিক্ষণের জন্য ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর এলাকায় গমন করে। পরবর্তীতে, সে সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য পার্বত্য অঞ্চলে চলে আসে।
গ্রেফতারকৃত আবু বক্কর সিদ্দিক সিলেটে একটি মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত ছিল। সে শূরা সদস্য মাসুকুর রহমান এর মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে সংগঠনটিতে জড়ায়। পরবর্তীতে নিরুদ্দেশ হয়ে বিভিন্ন এলাকায় তাত্তিক ও শারীরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চলে সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য আসে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত রুফু মিয়া শূরা সদস্য মাসুকুর রহমান এর মাধ্যমে উগ্রবাদী এই সংগঠনে জড়িত হয় এবং এক মাসের বেশি সময় ধরে সে নিরুদ্দেশ হয়ে বিভিন্ন এলাকায় তাত্তি¡ক ও শারীরিক প্রশিক্ষণ শেষে পার্বত্য অঞ্চলে পরবর্তী ধাপের প্রশিক্ষণের জন্য আসে।
গ্রেফতারকৃত জৌথান স্যাং বম, স্টিফেন বম ও মাল সম বম সকলেই কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট নামক সংগঠনের সদস্য। যারা জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া সদস্যদের প্রশিক্ষণ প্রদানের সাথে সম্পৃক্ত ছিল।