রাকিব হাসান- বাজারে চিনির দাম বেড়ে নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে। বাজারে খোলা চিনি এখন প্রতিকেজি ১১০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে, যা গত সপ্তাহেও বিক্রি করা হয়েছে ৯৫ টাকায়। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, এর আগে কখনো চিনির দাম ১০০ টাকার বেশি ওঠেনি। এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে পাঁচ টাকা।
সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩ শতাংশ। লিটারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৩.৭৫ শতাংশ, পাম তেলের (সুপার) দাম বেড়েছে ৩.১১ শতাংশ। পাশাপাশি ৭ দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩১.২৫ শতাংশ। আর ১৫.২২ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হয়েছে আদা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নয়াবাজার,ভাসাণটেক, মিরপুর, খিলক্ষেত, গুলশান ও রামপুরা বাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় পরিশোধনকারী মিলগুলোর উৎপাদন খরচ বিবেচনায় নিয়ে সরকার গত ৬ অক্টোবর কেজিতে দাম ছয় টাকা বাড়িয়ে খোলা চিনি ৯০ টাকা বেঁধে দেয়। তবে বাজারে এই দরে চিনি মিলছে না। খোলা চিনিই বিক্রি করা হচ্ছে ১১০ টাকা কেজি দরে। আর প্যাকেট চিনি প্রতি কেজি ৯৫ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়ার পর বাজারে এই চিনি সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রাজধানীর মিরপুর এলাকার ব্যবসায়ী সবুর মিয়া বলেন, বর্তমানে প্রতি কেজি চিনি কিনে আনতে খরচ হচ্ছে ১০৫ টাকা। সরকারের নির্ধারিত মূল্য ৯০ টাকায় কিভাবে বিক্রি করব?
তিনি জানান, চিনি উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো বাজারে চিনির সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এই কারণেই এখন চিনির দাম বাড়ছে।
মিরপুর ৬০ ফিটের মুদি দোকানদার হাসেম মিয়া জানান, বেশি দামে কিনে আনতে হচ্ছে বলেই বেশি দামে তিনি বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, এর আগে কখনোই প্রতি কেজি চিনির দাম ১০০ টাকা ছাড়ায়নি।
নয়াবাজারের মুদি বিক্রেতা তুহিন বলেন, পাইকারি বাজারে বিক্রেতারা চিনির সংকট বলে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। যার কারণে খুচরা বাজারে চিনির দাম বাড়তি। তবে মনে হচ্ছে, চিনি নিয়ে পাইকারি বিক্রেতারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ক্রেতাদের সঙ্গে আমাদের প্রতিদিনই দাম নিয়ে কথা কাটাকাটি হচ্ছে।
কাওরান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা মো. আলী হোসেন বলেন, আমাদের চাহিদা আছে ৩০ গাড়ি চিনির। কিন্তু আমাদের ১০ গাড়ি চিনি দেওয়া হচ্ছে। এতে পাইকারি বাজারে পণ্যটির সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। মিল পর্যায়ে দাম বাড়ায় পাইকারিতেও দাম বেড়েছে।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের প্রধান (বিপণন) মো. মাযহার উল হক খান জানিয়েছেন, গত বছর চিনির উৎপাদন খুবই কম হওয়ায় আমাদের সংগ্রহে অন্যান্য বছরের তুলনায় মজুদ কম ছিল। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই বাজারে নতুন চিনি আসবে।
সরকারি বাজার মনিটরিং প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, রাজধানীতে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি করা হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকায়।
এদিকে বাজারে পেঁয়াজ কেজিতে পাঁচ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে ৫৫ টাকায়। আমদানি করা আদা প্রতি কেজি ১৬০ টাকা এবং দেশি আদা ১৪০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আর আমদানি করা রসুন বিক্রি করা হচ্ছে ১২০ টাকা এবং দেশি রসুন ৮০ টাকা কেজি দরে। ডিম প্রতি ডজন ১৪৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, বাজারে পণ্যমূল্য সহনীয় রাখতে প্রতিদিন বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কোনো অনিয়ম পেলে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। অধিদপ্তরের প্রত্যেক সদস্য ভোক্তার স্বার্থে কাজ করছেন।