ডলার সংকটের পাশাপাশি রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। এর মধ্যে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের আমদানি বিল বাবদ ১২১ কোটি ডলার পরিশোধ করায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ১৯.৪৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) আকুর এ দায় পরিশোধ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আকুর আওতাধীন ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার দুই মাসের আমদানি বিল পরিশোধ করা রিজার্ভ কমেছে। বর্তমানে গ্রস রিজার্ভ ২৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু আইএমএফের পরামর্শে বিপিএম-৬ পদ্ধতির ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবের সঙ্গে ৫ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলারের পার্থক্য রয়েছে। সেই হিসাবে প্রকৃত রিজার্ভ ২০ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন। এখান থেকে আকুর বিল পরিশোধের পর দেশের রিজার্ভের অঙ্ক ১৯ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছে।
বিশ্বজুড়ে প্রচলিত ও বহুল ব্যবহৃত আইএমএফের ব্যালেন্স অব পেমেন্টস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম-৬) অনুযায়ী, রিজার্ভ গণনায় বাংলাদেশ ব্যাংক গঠিত বিভিন্ন তহবিলের পাশাপাশি বিমানের জন্য প্রদত্ত ঋণ গ্যারান্টি, পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষকে দেওয়া ঋণ, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকে আমানত এবং নির্দিষ্ট গ্রেডের নিচে থাকা সিকিউরিটিতে বিনিয়োগ রিজার্ভের অন্তর্ভুক্ত নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক এগুলোকেও রিজার্ভ হিসেবে দেখিয়ে আসছিল এতদিন। এসব হিসাব বাদ দেওয়ার কারণে রিজার্ভ থেকে ৫ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার কমে যায়।
আইএমএফ নির্দিষ্ট শর্ত দিয়ে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন দেয়। সেই ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার গত ফেব্রুয়ারিতে পায় বাংলাদেশ। এই শর্তের মধ্যে অন্যতম ছিল জুনে প্রকৃত রিজার্ভ ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বরে তা ২ হাজার ৫৩০ ডলার এবং ডিসেম্বরে ২ হাজার ৬৮০ ডলারে রাখতে হবে। তবে সম্প্রতি এসব শর্ত শিথিল করেছে সংস্থাটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর থেকে রিজার্ভ কমে এ পর্যায়ে নেমেছে। ১০ বছর আগে ২০১৩ সালের জুন মাস শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। পাঁচ বছর আগে তা ছিল ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর সেখান থেকে বেড়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে পৌঁছায়। ওই বছরের ৮ অক্টোবর ৪০ বিলিয়ন ডলারের নতুন মাইলফলক অতিক্রম করে।
এরপর করোনা মহামারির মধ্যেও ২০২১ সালের ২৪ আগস্টে রিজার্ভে রেকর্ড গড়ে। ওইদিন রিজার্ভ ৪৮ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার বা চার হাজার ৮০৪ কোটি ডলারে ওঠে। এরপর ডলার সংকটে গত বছর থেকে ধারাবাহিকভাবে কমছে রিজার্ভ।