Search
Close this search box.
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

বই কেনার তালিকা থেকে বাদ ১৪৭৭টি বই

বই কেনার তালিকা থেকে বাদ ১৪৭৭টি বই

স্টাফ রিপোর্টার : সরকারি কর্মকর্তাদের জ্ঞানচর্চা ও পাঠাভ্যাস বাড়ানোর জন্য বই কেনার তালিকায় অতিরিক্ত সচিব মো. নবীরুল ইসলামেরই ২৯টি বই। তা কিভাবে এল, এ নিয়ে খতিয়ে দেখেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনাও হয়েছে। অবশেষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বই কেনার তালিকা থেকে ১৪৭৭টি বই বাদ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী অর্থবছর থেকে লেখকের নামে না কিনে বিষয়ভিত্তিক বই কেনা হবে।

সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে ‘জ্ঞানচর্চা ও পাঠাভ্যাস’ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরই প্রেক্ষিতে জেলা-উপজেলায় বই কিনতে ৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে পাঠানো হয়েছে ১ হাজার ৪৭৭টি বইয়ের তালিকা। সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, এ বিষয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। পরবর্তী অর্থবছর থেকে লেখকের নামে না কিনে বিষয়ভিত্তিক বই কেনা হবে বলে জানান আলী আজম।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের ২৯টি বই থাকা নিয়ে সচেতন নাগরিক সমাজের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। শুধু তাই নয়, তালিকার ১ হাজার ৪৭৭টি বইয়ের মধ্যে শতাধিক বই অন্তত ২৫ জন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার লেখা। যার মধ্যে অনেক বইয়ের প্রসঙ্গ একই। তালিকায় আছে আইনকানুন, দাপ্তরিক বিভিন্ন জরুরি প্রসঙ্গ, ইতিহাস ও দর্শনের প্রয়োজনীয় অনেক বই। তবে এ তালিকায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ লেখকের বই স্থান না পাওয়ায় নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বই কেনার এই উদ্যোগ নিয়ে কোনো কমিটিও গঠিত হয়নি। এমনকি বৈঠকে ডাকা হয়নি বই বা পাঠাগারসংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তিকে। জনপ্রশাসন সচিব বললেন, একজনের ২৯টি বই কেনার তালিকায় এসেছে, তা তার জানাই ছিল না। প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, এটা ‘অসম্ভব’।

সম্প্রতি সোশাল মিডিয়া এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তাদের জ্ঞানচর্চা ও পাঠাভ্যাস বাড়ানোর জন্য বই কেনার তালিকায় সরকারি আমলাদের লেখা বইয়ের আধিক্য নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে রবিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে তালিকা খতিয়ে দেখার কথা জানান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন এবং মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কে এম আলী আজম।
আলী আজম সাংবাদিকদের বলেন, সোমবার এ বিষয়টি নিয়ে আমরা বৈঠকে বসব। বৈঠকে বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। এরপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিবছর অল্প অল্প করে কর্মকর্তাদের বই কেনার এই টাকা ৪ বছর ধরে বরাদ্দ দেওয়া হবে। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন বলেছিলেন, তালিকা কি চূড়ান্ত হয়েছে? চূড়ান্ত তো হয়নি মনে হয়। লিস্টে আছে নাম। এটা চূড়ান্ত হবে না। এটা আমরা চূড়ান্ত করিনি। এটা আমরা দেখছি, এটার বিষয়ে অবশ্যই আমরা একটি সিদ্ধান্ত নেব। এটা অবশ্যই হবে না।

আলী আজম বলেন, আমরা উপজেলা, জেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার জন্য পাঠাগার তৈরির একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আগামী চার বছর, ছোট ছোট বরাদ্দ দিয়ে বিভাগীয় কমিশনার অফিস, জেলা প্রশাসক অফিস এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিসে পাঠাগার গড়ে তুলব। এজন্য এই কার্যালয় ১ হাজার ৪০০ বইয়ের একটি তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছিলো। এটি এমন নয় যে এই ১ হাজার ৪০০ বই থেকেই বই কিনতে হবে। সেটির আলোকে বা বিবেচনায় রেখে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে যে একজন অতিরিক্ত সচিবের ২৯টি বই এ তালিকায় স্থান পেয়েছে। এ বিষয়টি আমরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করবো, যদি এর সত্যতা প্রমাণিত হয়, কোনো সমস্যা যদি দেখি তাহলে এই তালিকা বাতিলের ব্যবস্থা নেবো বা সংশোধনের ব্যবস্থা নেবো। এই সময় অন্যান্য যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত আমরা সে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। একজনেরই যে ২৯টি বই, এ তথ্য আমার জানা ছিল না। গণমাধ্যমে আসার পর এটা জানতে পেরেছি। আমরা এটি পরীক্ষা করছি। সে অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। এটি নিয়ে সকলের সাথে বসবো, বসে সিদ্ধান্ত নেব। একদিনের মধ্যেই বই কেনার তালিকা থেকে বাদ ১৪৭৭টি বই বাদ দেওয়া হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ