স্টাফ রিপোর্টার – মিয়ানমারের মর্টার শেল বাংলাদেশ সীমান্তে বারবার পড়ছে। এবার তো এক যুবক নিহতও হয়েছেন। কয়েকজন আহতও হয়েছেন। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের শূন্যরেখায় ফের মর্টার শেল বিস্ফোরণ হয়। এতে ঘটনাস্থলে এক রোহিঙ্গা যুবক নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন শূন্যরেখায় বসবাসকারী রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতা দিল মোহাম্মদ। এসময় আহত হয়েছেন আরও অন্তত আট জন। নিহত মোহাম্মদ ইকবাল (২৮) শূন্যরেখায় বসবাসকারী মনির আহমেদের ছেলে। এখনও গোলাগুলি চলছে। তাতে করে বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে সীমান্তের বাসিন্দারা
শুক্রবার রাতে ঘুমধুম ঘোনারপাড়া সীমান্তে শূন্যরেখায় এ মর্টাল শেল এসে বিস্ফোরণ হয়। ঘটনার পর থেকে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে শূন্যরেখা বসবাসকারী রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলি, মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দ শুনা গেছে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে শূন্যরেখায় বসবাসকারী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসে পড়ে তিনটি মর্টার শেল। ক্যাম্পের নিটকবর্তী এলাকায় এসে পড়ে আরও দুটি। মোট পাঁচটি মর্টার শেল পরপর বিস্ফোরণ হয়। এতে ঘটনাস্থলে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও অনেকেই।
আরেক রোহিঙ্গা নেতা আরিফ বলেন, আহতদের মধ্যে চার জনকে উদ্ধার করে কুতুপালংস্থ এমএসএফ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ বিস্ফোরণের পর রাত পৌনে ৯টার দিকে মিয়ানমারের একটি জেট বিমান তুমব্রু বাজারের ওপর এসে চক্কর দিয়ে গেছে। এসব কারণে আতঙ্ক বিরাজ করছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও ঘুমধুম সীমান্ত এলাকায়।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, বিভিন্ন জনের কাছ থেকে এমন সংবাদ পেয়ে কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে পুলিশ টিম পাঠানো হয়েছে। তবে এলাকাটি এপিবিএনের নিয়ন্ত্রণাধীন।
এর আগেও বিকেলে সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণে বাংলাদেশি এক যুবক আহত হয়। নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের বাইশফাঁড়ি চাকমা পাড়া সীমান্তের ৩৫ নম্বর পিলারের সংলগ্ন মিয়ানমারের ১০০ গজ অভ্যন্তর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনায় আহত অংথোয়াইং তঞ্চঙ্গা (২২) নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের বাইশফাঁড়ি চাকমা পাড়ার অঙ্গোথোয়াই তঞ্চঙ্গার ছেলে।
বিস্ফোরণে আহত যুবকের একটি পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। স্থানীয়রা আহত যুবককে উদ্ধার করে উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এমএসএফ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখান থেকে সন্ধ্যার পর তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে রেফার করা হয়।
সীমান্ত এলাকায় গরু চরাতে যান অংথোয়াইসহ স্থানীয় কয়েক যুবক। একপর্যায় গরু সীমান্তের শূণ্যরেখা অতিক্রম করে মিয়ানমার অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। এসময় গরু ফিরিয়ে আনতে সেখানে গেলে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ধারণা করা হচ্ছে, সীমান্তে মিয়ানমার অভ্যন্তরে মাইন পুতে রেখেছে।
ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। কূটনৈতিক পর্যায়েও প্রতিবাদ জানানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিজিবির পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমান জানান, মাইন বিস্ফোরণের ঘটনাটি মিয়ানমারের ভেতরের অংশে ঘটায় এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি। কারণ সেটি তাদের সীমানা। সেখানে যাওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল এবং তিনি সেই ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন। জানা গেছে, এখনো ২টি মর্টার শেল অবিস্ফোরিত অবস্থায় আছে। ওই এলাকায় চলাচলে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে।