Search
Close this search box.
যশোরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় জনসমুদ্র

বিএনপি কিছুই দিতে পারে না, শুধু পারে মানুষের রক্ত চুষে খেতে – প্রধানমন্ত্রী

বিএনপি কিছুই দিতে পারে না, শুধু পারে মানুষের রক্ত চুষে খেতে - প্রধানমন্ত্রী

মিথুন আশরাফ – যশোরের শামস-উল হুদা স্টেডিয়ামে ১৯৭২ সালের ২৬ ডিসেম্বর জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। একই স্টেডিয়ামে প্রায় ৫০ বছর পর জনসভায় ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারও জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। শুধু তাই নয়, যশোর শহরই জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। আর যশোর থেকেই দেশব্যাপী রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনসভায় বক্তব্য দিয়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা (বিএনপি) কিছুই দিতে পারে না, শুধু পারে মানুষের রক্ত চুষে খেতে। অনেকে এখন রিজার্ভ নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনা করছে। অথচ আমাদের সরকার রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ বাড়িয়েছে। আর কোনো সরকার রিজার্ভ বাড়াতে পারেনি। পর্যাপ্ত রিজার্ভ হাতে রেখেই সব কাজ করছি আমরা। রিজার্ভের কোনো সমস্যা নেই, আমাদের সব ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকা আছে। সামনের দিনেও কোনো সমস্যা হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রিজার্ভ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সমালোচনা শুনছি। অনেকে প্রশ্ন করেন রিজার্ভ গেলো কোথায়? আমরা তো রিজার্ভ অপচয় করিনি। মানুষের কল্যাণে কাজে লাগিয়েছি। জ্বালানি তেল কিনতে হয়েছে, খাদ্যশস্য কিনেছি। বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। করোনার টিকা ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করেছি। এসব কাজে রিজার্ভ থেকে খরচ করতে হয়েছে আমাদের। কারণ, আমরা সবসময় মানুষের কথা চিন্তা করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছি।

মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে বিএনপি নিজেদের উন্নয়ন করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা (বিএনপি) কিছুই দিতে পারে না, শুধু পারে মানুষের রক্ত চুষে খেতে। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। বিচার পাওয়ার অধিকার আমার ছিল না। বাবা-মা-ভাই-বোন সবাইকে হারিয়েছি। তারপরও এ বাংলায় ফিরে এসেছি। বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করাই ছিল আমার লক্ষ্য।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ ছিল। একের পর এক ক্যু হয়েছে। এর সঙ্গে জিয়া মোশতাক সবাই জড়িত। আমি বিচার চাইতে পারিনি। তারপরও সবকিছু মাথায় নিয়ে ফিরে এসেছি একটাই কারণে, এই জাতির পিতা আমার পিতা সারাজীবন সংগ্রাম করেছে। সেজন্য আমার লক্ষ্য ছিল, এই দেশের মানুষের জন্য কিছু করা। বার বার ক্ষমতায় এসেছি বলেই উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক করেছে। বিনা পয়সায় ৩০ ধরনের ওষুধ পাওয়া যায়। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। বিএনপি দিয়েছে অস্ত্র, খুন, হত্যা। শুধু হত্যা আর খুন ছাড়া কিছু দিতে পারেনি বিএনপি। মানুষের ভাগ্য ছিনিমিনি খেলেছে। জিয়া যখন মারা যায়, কিছু রেখে যায়নি। ভাঙা বাক্স আর ছেঁড়া গেঞ্জি ছাড়া।

তিনি বলেন, আজকে তারেক জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি। দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে। সেজন্য তার সাজা হয়েছে। অস্ত্র চোরাকারবারি করতে গিয়ে দশ ট্রাক ধরা খেয়েছে, সেখানেও তার সাজা হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমিসহ নেতাকর্মীদের হত্যা করতে চেয়েছে। আর খালেদা জিয়া এতিমের টাকা মেরে আজ সাজাপ্রাপ্ত। আর সাজাপ্রাপ্ত নেতা জনগণকে কী দেবে? তারা কিছুই দিতে পারে না, শুধু রক্ত চুষে খেতে পারে।
সরকারপ্রধান বলেন, যশোরে বিএনপি উন্নয়নের কিছুই করেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে করেছে। ’৭৫ এর পর এদেশের আর কোনও উন্নয়ন হয়নি। আ.লীগ মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু থেকে যেন যশোর আসতে পারে সেই রেললাইনের কাজ চলছে। যশোরে ৫০০ বেডের হাসপাতাল করে দিয়েছি।

নির্বাচনে যশোরের সবকটি আসন থেকে নির্বাচিত করায় যশোরের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে। সেখানে যুবকদের অনেক কর্মসংস্থান হবে। যুবকদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সেখান থেকে বিনা জামানতে ৩ লাখ টাকা ঋণ পাওয়া যায়। এটা নিয়ে নিজেরাই ব্যবসা করতে পারবে। এখনকার যুগে কেউ বেকার থাকবে না। কিছু না কিছু করতে পারবে। সেই সুযোগটা আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনও দেশ করোনা ভ্যাকসিন বিনা পয়সায় দেয়নি। আমি দিয়েছি। এই করোনা মোকাবিলার জন্য বিশেষ বিমান পাঠিয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করে সামগ্রী এনেছি। রিজার্ভ মানুষের কাছে লেগেছে। যে গম ২০০ ডলারে কিনতাম, তা এখন ৬’শ ডলার। যুদ্ধ আর নিষেধাজ্ঞার কারণে। তারপরও আমরা কিনে এনেছি, যাতে খাদ্য-ঘাটতি না দেখা দেয়। এজন্য আমি জমি অনাবাদী না রেখে উৎপাদন করার কথা বলেছি। দেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না বলে জাতির পিতা যে প্রকল্প শুরু করেছিলেন, তার সেই পথ ধরে সারাদেশে গৃহহীনদের তালিকা করে জমিসহ ঘর করে দিয়েছি বিনা পয়সায়। প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ এই ঘর পেয়েছে যাদের কোনও ঠিকানা ছিল না। এটা তাদের জীবন পাল্টে দিয়েছে। এই দেশের কোনও মানুষ ঠিকানা-বিহীন থাকবে না। যে বাংলাদেশ খালেদা জিয়া রেখে গিয়েছিল ৪০ ভাগ দারিদ্র্যতার হার, এটা আমরা ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। যে হতদরিদ্র ২৫ ভাগ ছিলো, তা আমরা ১০ ভাগে নামিয়ে এনেছি।

তিনি বলেন, যশোরে ভবদহ জলাবদ্ধতার দূর করার প্রকল্প শেষ হয়েছে। এবার আমরা দ্বিতীয় প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এর ফলে যশোর খুলনা সাতক্ষীরার জলাবদ্ধতা দূর হবে। ৮২ কিলোমিটার নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে কাজ হাতে নিয়েছি। কপোতাক্ষের মতো ভবদহের জলাবদ্ধতার যেন না থাকে, সেই বিষয়েও আমরা পদক্ষেপ নেবো।

বৃহস্পতিবার বেলা তিনটার কিছু আগে প্রধানমন্ত্রী জনসভার মঞ্চে উপস্থিত হন। এর আগে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত, গীতা ও ত্রিপিটক পাঠের মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জনসভা শুরু হয়। প্রথমেই এ জনসভার সভাপতি ও যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন প্রারম্ভিক বক্তব্য দিয়ে জনসভা শুরু করেন। মঞ্চে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকেন। এর আগে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমানঘাঁটিতে বার্ষিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বিএএফ একাডেমিতে পাসিং আউট কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করেছেন। যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের পরিচালনায় জনসভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন।

করোনা পরবর্তী ঢাকার বাইরের প্রথম কোনো বৃহত্তম জনসভায় যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর তিনি দেশব্যাপী এক এক করে দলীয় কার্যক্রমে অংশ নেবেন। ভাষণ দেবেন। সে কারণে যশোরের জনসভা ঐতিহাসিক হয়ে গেল। এই জনসভাকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে আগে থেকেই উৎসবমুখর পরিবেশ করেছে। যশোর জেলা আওয়ামী লীগ ও এর সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এই জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে সরব থাকেন। জনসমুদ্র হয়ও। যশোর ছাড়াও দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভাগীয় শহর খুলনাসহ বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর. ঝিনাইদহ, মাগুরা ও নড়াইলের সংসদ সদস্যবৃন্দ এবং এসব জেলার আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এই জনসভাকে সফল করতে রাতদিন পরিশ্রম করেন। স্মরণকালের বড় জনসমাবেশই ঘটায় আওয়ামী লীগ।

১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এই যশোরই দেশের মধ্যে প্রথম হানামুক্ত জেলা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এই যশোরের মাটিতেই ৬ই ডিসেম্বর মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ নেতৃবৃন্দ প্রথম স্বাধীন দেশে জনসভা করেছিলেন। এসব কারণে যশোরের একটা আলাদা ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। সেই যশোর থেকেই প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশব্যাপী তার রাজনৈতিক কর্মসূচির সূচনা করেন। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৩১শে ডিসেম্বর যশোর ঈদগাহ ময়দানে সর্বশেষ রাজনৈতিক ও নির্বাচনী জনসভায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

বিএনপির ধারাবাহিক সমাবেশের পালটা হিসাবে সারা দেশে সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শনের পরিকল্পনা করে আওয়ামী লীগ। তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের মহাসমাবেশ ও আগারগাঁওয়ে দলের ঢাকা জেলা কমিটির সম্মেলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিকে বার্তা দিয়েছে। ঢাকার বাইরেও এমন সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শনের পরিকল্পনা আছে আওয়ামী লীগের। তারই ধারাবাহিকতায় যশোরের শামস-উল হুদা স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক পলোগ্রাউন্ড এবং ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারের শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তৃতা করবেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই জেলা সফরের মাধ্যমে সাংগঠনিক শক্তি দেখানোর পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয়।

পাঁচ বছর আগে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর যশোর ঈদগাহ মাঠে নির্বাচনি জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। এর আগে চট্টগ্রামে ২০১৮ সালের ২১ মার্চ পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগ দিয়েছিলেন তিনি। আর ২০১৭ সালের ৬ মে কক্সবাজার সফর করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিন বছর আগে করোনার সংক্রমণ শুরু হলে রাজনীতি ঘরবন্দি হয়ে পড়ে। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি পাল্টেছে। আর তাই শেখ হাসিনা বিভাগীয় রাজনৈতিক কর্মসূচীতেও যোগ দেয়া শুরু করেছেন। যশোর দিয়েই যার শুরু হয়ে গেল। যশোরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ