মিথুন আশরাফ – প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যেভাবেই হোক শান্তি নিশ্চিত করবো। শুক্রবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) ৫ম জাতীয় সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
স্বাচিপ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, আমেরিকা (যুক্তরাষ্ট্র) একজন খুনিকে লালন-পালন করছে। অবশ্য আমেরিকার আচরণই এরকম। কখনো কোনো হত্যাকাণ্ড হলে আমার কাছে যখন বিচারের দাবি করে, তখন আমার মনে হয় – আমার বাবা-মা-ভাইদের হত্যার বিচার পেতে ৩৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। তবুও আল্লাহর কাছে শুকরিয়া ও জনগণের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই, তারা ভোট দিয়েছেন বলেই এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে পেরেছি। জাতির পিতার খুনিরা যুক্তরাষ্ট্র-কানাডায় আশ্রয় নিয়ে আছে। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার নিশ্চিত করবোই।
তিনি বলেন, এখনও কিছু খুনির শাস্তি নিশ্চিত হয়নি। একজন খুনি আমেরিকায়, আরেকজন কানডায়, দুইজন পাকিস্তানে। আরকেজনের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। আমেরিকা একজন খুনিকে লালন-পালন করছে। অবশ্য আমেরিকার আচরণই এরকম। তারপরও আমাদের প্রচেষ্টা আছে, তাদের ধরে এনে যেভাবেই হোক শাস্তি নিশ্চিত করবো। এটাই আমি চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরে হত্যাকাণ্ডের পরই ইতিহাস বিকৃতি শুরু হয়। বঙ্গবন্ধুর নাম-নিশানা মুছে ফেলার চেষ্টা হয়। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও জয় বাংলা স্লোগানও নিষিদ্ধ হয়ে যায়। অবৈধভাবে হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখলের অপচেষ্টা হয়। জাতির পিতার করে দেওয়া সংবিধানও ক্ষত-বিক্ষত করা হয়।
স্বাধীনতা বিরোধীদের ভোটের অধিকার ছিল না। জিয়াউর রহমান তাদের ভোটের অধিকার ও রাজনীতি করার সুযোগ দেন। জাতির পিতার হত্যাকারীদেরও বিচারের হাত থেকে রেহাই দেওয়া হয়েছিল, যোগ করেন শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ। দুই মাস পরপর ঋতু বদলায়। প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মনও বদলে যায়। যে কারণে তারা (বিরোধীরা) ভুলে যায় আমরা কী কী উন্নয়ন কাজ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আমরা করে দিয়েছিলাম। এখন প্রতিটি বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি। আমাদের দেশে মাতৃ মৃত্যুহার, শিশু মৃত্যুহার বেশি ছিল। মাতৃমৃত্যু কমানোর জন্য বিনা পয়সায় ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।
কিছু লোক দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় আস্থা রাখতে পারে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের কিছু ধনী লোক সর্দি-কাশি হলেই বিদেশে চলে যায়। করোনার সময় তারা বিদেশে যেতে না পেরে বাধ্য হয়েই দেশে চিকিৎসা নিয়েছে।
তিনি বলেন, পঁচাত্তরে হত্যাকাণ্ডের পরই ইতিহাস বিকৃতি শুরু হয়। বঙ্গবন্ধুর নাম-নিশানা মুছে ফেলার চেষ্টা হয়। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও জয় বাংলা স্লোগানও নিষিদ্ধ হয়ে যায়। অবৈধভাবে হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখলের অপচেষ্টা হয়। জাতির পিতার করে দেওয়া সংবিধানও ক্ষত-বিক্ষত করা হয়।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এসময় আওয়ামী লীগেরসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার সময় পাকিস্তানিদের মতো নির্যাতন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনীতি করার সুযোগ দেয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংস্কৃতি চালু শুরু হয়। পাক হানাদারদের দোসরদের ক্ষমতায় বসিয়েছিল জিয়া। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার বন্ধে আইন করেছিল জিয়া।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারের হত্যার পর অবৈধভাবে হত্যা-ক্যু ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল শুরু হয় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিকে যুক্তরাষ্ট্র লালন পালন করলেও এখন মানবাধিকার নিয়ে কোনো রা নেই, যা দেখলে অবাক লাগে।
এর আগে বিকেল তিনটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সম্মেলনে যোগ দেন সরকারপ্রধান। এরপর বেলুন ও পতাকা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনটির পঞ্চম সম্মেলন উপলক্ষে সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দীতে জড়ো হতে থাকেন হাজার হাজার চিকিৎসক।
সম্মেলন উপলক্ষে সকাল থেকে স্বাচিপের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসতে শুরু করেন। জুম্মার নামাজের পর চিকিৎসক নেতাকর্মীদের আনাগোনা আরও বেড়ে যায়। সাত বছর পর অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে চিকিৎসকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করে। সম্মেলন উপলক্ষে পেশাজীবী চিকিৎসকরা দলে দলে এসে প্রবেশ করেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সম্মেলনকে ঘিরে তাদের মধ্যে দেখা গেছে নানা উৎসাহ-উদ্দীপনা।
১৯৯৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর গঠিত হয় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাকালে অধ্যাপক এম, এ, কাদেরী সভাপতি ও মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন। ২০০৩ সালের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে অধ্যাপক আ ফ ম রুহুল হক সভাপতি ও অধ্যাপক এম ইকবাল আর্সলান মহাসচিব নির্বাচিত হন। সবশেষ ২০১৫ সালে ১৩ নভেম্বর স্বাচিপের চতুর্থ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতি হন এম ইকবাল আর্সলান ও সাধারণ সম্পাদক হন এম এ আজিজ।
পর্যায়ক্রমে সব বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জেলায় জেলায় মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার কথাও বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সশরীরে উপস্থিত থেকে সচিবদের সঙ্গে সভা করবেন। সভাটি সচিবালয়ে হওয়ার কথা থাকলেও তা পরিবর্তন করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রাহাত আনোয়ার বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন। গত বছরের ১৮ আগস্ট রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা কমিশনের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে সচিবদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি সভা হয়েছিল, এরপর আর হয়নি। রবিবার সচিবদের সঙ্গে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নির্দেশনা দেবেন। একই সঙ্গে সেদিন নিকারের বৈঠকও অনুষ্ঠিত হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে গেছে, করোনা মহামারির কারণে এক বছরেরও বেশি সময় পরে সচিবদের সঙ্গে সভা করবেন প্রধানমন্ত্রী। সচিবদের সঙ্গে তিনি ১০টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। এসব বিষয়ের ওপর সচিবদের মতামত শুনবেন। এই ১০টি বিষয় হচ্ছে—১. দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ। ২. বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনীতিকে সুসংহত রাখা। ৩. জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ। ৪. প্রয়োজনীয়তার নিরিখে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ। ৫. কৃষির উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে সারের জোগান নিশ্চিতকরণ ও পতিত জমি চাষাবাদ। ৬. সরকারি কাজে আর্থিক বিধিবিধান অনুসরণ করা। ৭. সরকারি সেবা প্রদানে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বিষয়ক পরিকল্পনা। ৮. ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ড, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি বিষয়ে পর্যালোচনা। ৯. পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতির বিষয়ে পর্যালোচনা। ১০. সুশাসন ও শুদ্ধাচার।