বাংলাদেশ ডিজিটাল থেকে স্মার্টের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু করে বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি সারা বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে। আমরা আরেকটি নতুন অহংকারের পালক বাংলাদেশের জনগণের মাথার মুকুটে সংযোজিত করলাম। এটা হচ্ছে এমআরটি লাইন সিক্স। আমাদের অহংকার পালক মেট্টোরেল।
– প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মিথুন আশরাফ
আজ ২০২২ সাল শেষ। আগামীকাল শুরু হবে নতুন বছর, ২০২৩ সাল। এ বছরে শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নের সর্বোচ্চ চিত্র চোখে পড়েছে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে ২০২২ সালে সব উন্নয়নকেই ছাপিয়ে গেছে শেখ হাসিনার সরকার। অদম্য সাহস আর দেশের মানুষের উন্নয়নে ধীর প্রত্যয়; এই দুইয়ে মিলে শুধু উন্নয়নই দেখার মিলেছে। জুনে যেমন পদ্মা সেতু উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডিসেম্বরে বছরের শেষে এসে দেশবাসীকে উপহার দিলেন দেশের প্রথম মেট্রোরেল। আর এর মধ্য দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়াও শুরু হয়ে গেল।
মেট্রোরেল বুধবার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধন করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ডিজিটাল থেকে স্মার্টের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। স্মার্ট বাংলাদেশের নতুন সংযোজন মেট্রোরেল। সত্যিই তাই। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ থেকে এখন ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ পাঁ রেখেছে বাংলাদেশ।
‘স্মার্ট বাংলাদেশে’র শুরুটা হয়েছে মেট্রোরেল দিয়ে। এরআগে যে উন্নয়ন হয়েছে, তা কখনোই হয়নি। শেখ হাসিনা সরকার বলেই তা সম্ভব হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ যার মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত এটি। বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু, স্প্যান সংখ্যা ও মোট দৈর্ঘ্য উভয়ের দিক থেকে গঙ্গা নদীর উপর নির্মিত দীর্ঘতম সেতু এবং ১২০ মিটার (৩৯০ ফুট) গভীরতাযুক্ত বিশ্বের গভীরতম পাইলের সেতু। আছে একসাথে ১০০ সেতু উদ্বোধন ও ১০০ মহাসড়ক উদ্বোধন। যা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সফল উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ জয়, সাবমেরিন যুগে বাংলাদেশের প্রবেশ শেখ হাসিনা সরকারের আমলেই হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে এতটা উন্নয়নের শিখরে নিয়ে গেছেন, যা তার পক্ষেই সম্ভব। শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশের অর্জন অনেক। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি, একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ সম্পন্ন করা, সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি এবং সমুদ্রে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করে ব্লু ইকোনমির নতুন দিগন্ত উন্মোচন, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন ও ছিটমহল বিনিময় – এতসব অর্জন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলেই হয়েছে।
অর্জনের তালিকা আরও দীর্ঘ। আছে – কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দেশের প্রথম কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার, মহাসড়কগুলো চার লেনে উন্নীত করা, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীতকরণ, দারিদ্র্যের হার হ্রাস, যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন, সাক্ষরতার হার ৭৫.৬০ শতাংশে উন্নীত করা। আছে বছরের প্রথম দিনে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বই পৌঁছে দেওয়া, মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারার শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত করা ও স্বীকৃতি দান, মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, প্রত্যেকটি জেলায় একটি করে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ, নারী নীতি প্রণয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, ফাইভ-জি মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার চালুসহ অসংখ্য ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০টি বিশেষ উদ্যোগ – একটি বাড়ি একটি খামার (বর্তমানে আমার বাড়ি আমার খামার), আশ্রয়ণ, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি, নারীর ক্ষমতায়ন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, কমিউনিটি ক্লিনিক, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, বিনিয়োগ বিকাশ এবং পরিবেশ সুরক্ষা বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান ও আয় বৃদ্ধির কার্যক্রম। ২০৪১ সালের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) সাফল্যের পর ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে দেশ। এই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হওয়ায় দেশের চিত্র বদলে গেছে।
বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেছেন। শেখ হাসিনা দেশকে বদলে দিয়েছেন। উন্নয়নের শিখরে নিয়ে গেছেন। বিশ্ব এখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করছে। উন্নয়ন এতটাই হয়েছে যে এখন বিজয়ের গান উন্নয়নের গানে রূপ নিয়ে সবার কণ্ঠে গুন গুন করে বাজছে।
এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারার গতি আরও বাড়িয়ে দিয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে চাচ্ছেন। বাংলাদেশকে ২০৪১ সালে উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছে দেওয়ার যে লক্ষ্য ধরে সরকার কাজ করছে, সেই বাংলাদেশ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হয়ে উঠবে বলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যাশা। আর সেজন্য চারটি ভিত্তি ধরে সরকার কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী এ নিয়ে বলেছেন, আ.লীগ ক্ষমতায় আসলেই মানুষের উন্নয়ন হয়। আমরা আগামী ৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। আর সেই বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে আমরা চলে যাব।
সেই স্মার্ট বাংলাদেশের ভিত্তি কী হবে, তা নিয়ে জানাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, আমাদের প্রত্যেকটা সিটিজেন, তারা প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবে, স্মার্ট সিটিজেন। উইথ স্মার্ট ইকোনমি; অর্থাৎ, ইকোনমির সমস্ত কার্যক্রম আমরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে করব। স্মার্ট গভার্নমেন্ট; ইতোমধ্যে আমরা অনেকটা করে ফেলেছি। সেটাও করে ফেলব। আর আমাদের সমস্ত সমাজটাই হবে স্মার্ট সোসাইটি।
তবে দেশ গড়ার স্বপ্নের কথা বলতে বলতেই প্রধানমন্ত্রীর কথায় আসে তার বয়স আর রাজনৈতিক বাধাবিপত্তির প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, এখন আমার ৭৬ বছর বয়স। কাজেই বেশিদিন তো আর নেই। যে কোনো দিন অক্কা পেতে পারি। তাই না? যে কোনো দিন চলে যেতে পারি। তার উপর গুলি, বোমা, গ্রেনেড হামলা, তারেক জিয়া, খালেদা জিয়া তো আর আমাকে ছেড়ে দেয়নি। বারবার আমার ওপর হামলা করেছে।
শত প্রতিকূলতার মধ্যেও বারবার প্রাণে বেঁচে যাওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, তাই ২০২১ থেকে ৪১ প্রেক্ষিত পরিকল্পনাও প্রণয়ন করে দিয়ে গেলাম। অর্থাৎ ২১ থেকে ৪১ কীভাবে বাংলাদেশের উন্নয়নটা হবে. তার একটা কাঠামো পরিকল্পনা আমরা প্রণয়ন করে সেটা বাংলাদেশের জনগণের জন্য আমি রেখে যাচ্ছি।
২০৪১ সালেই শেষ নয়, ২১০০ সালেও এই বঙ্গীয় বদ্বীপ যেন জলবায়ুর অভিঘাত থেকে রক্ষা পায়, দেশ উন্নত হয়, দেশের মানুষ যাতে ‘সুন্দরভাবে, স্মার্টলি’ বাঁচতে পারে, সেজন্য ডেল্টা প্ল্যান করে দেওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রী বলেন। তবে তা বাস্তবায়নের ভার যে নতুন প্রজন্মকেই নিতে হবে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, এখন সব নির্ভর করছে আমাদের ইয়াং জেনারেশনের ওপর, যুব সমাজের উপর। তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের উন্নতি। এটাই ছিল আমাদের ২০১৮ এর নির্বাচনী ইশতেহার। আমরা সেই কাজটাই করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তি যখন উদযাপন করা হয়, তখনই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। অর্থাৎ ২০০৮ এর যে সিদ্ধান্ত, সেটা আমরা করেছি। পাশাপাশি আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ। আজকে সারা বাংলাদেশেই আমাদের কানেটিভিটি ব্রডব্যন্ড আমরা দিতে পেরেছি। স্যাটেলাইন বঙ্গবন্ধু-১ আমরা উৎক্ষেপণ করেছি। আমরা যা যা করেছি, সবই কিন্তু আমি বলব, আমার ছেলে জয় যদি আমাকে পরামর্শ না দিত, তাহলে হয়ত আমার পক্ষে করা সম্ভব ছিল না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার গত ১৪ বছরে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন, আইসিটি অবকাঠামো, কানেকটিভিটি, ই-গভর্নমেন্ট এবং ইন্ডাষ্ট্রি প্রমোশনের ক্ষেত্রে নানা উদ্যোগ গ্রহন করে তার বাস্তবায়ন করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলায় এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে কানেকটিভিটি থাকায় করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেও কোনো কাজ ‘থেমে থাকেনি’।
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ছিল ২০২১ সাল পর্যন্ত। এবার ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে বলে ঘোষনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আগামী ৪১’ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। আর সেই বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে আমরা চলে যাব।
সরকার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার ক্ষেত্রে চারটি ভিত্তি সফলভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ করছে। এগুলো হচ্ছে -স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি। শুধু তাই নয়, ২১০০ সালের বদ্বীপ কেমন হবে, সে পরিকল্পনাও করা হয়েছে।
স্মার্ট বাংলাদেশে প্রযুক্তির মাধ্যমে সবকিছু হবে। সেখানে নাগরিকেরা প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবে। এর মাধ্যমে সমগ্র অর্থনীতি পরিচালিত হবে। সরকার ও সমাজকে স্মার্ট করে গড়ে তুলতে ইতিমধ্যেই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদিত হয়েছে।
বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরে তরুণ প্রজন্মকে সৈনিক হিসেবে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ২০৪১ সালের সৈনিক হিসেবে তোমাদের (তরুণদের) স্মার্ট নাগরিক হিসেবে প্রস্তুত হতে হবে।
দেশের উন্নয়নের একের পর এক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে বর্তমান সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২১০০ সালের ডেলটা প্ল্যান এবং ২০২১ থেকে ২০৪১ প্রেক্ষিত পরিকল্পনাও প্রণয়ন করে দিয়ে গেলাম। অর্থাৎ ২১ থেকে ৪১ কীভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে, তার একটা কাঠামো, পরিকল্পনা আমরা প্রণয়ন করে বাংলাদেশের জনগণের জন্য আমি রেখে যাচ্ছি। এই বদ্বীপ প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন জলবায়ুর অভিঘাত থেকে রক্ষা পায়, দেশ উন্নত হয় এবং উন্নত দেশে স্বাধীনভাবে সুন্দরভাবে যেন তারা স্মার্টলি বাঁচতে পারে, সেই ব্যবস্থাও করে দিয়ে গেলাম।
শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে যে রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন তার মূল শিরোনাম ছিল ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’। ১২ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে ডিজিটাল বিপ্লবের ঘোষণা আসে। এ দিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার করা হয়।
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কথাটি প্রথম সামনে আসে ২০০৮ সালে। ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন যে, ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ “ডিজিটাল বাংলাদেশে” পরিণত হবে।
এই পরিকল্পনাটির মূল লক্ষ্য ছিল, একটি উন্নত দেশ, সমৃদ্ধ ডিজিটাল সমাজ, ডিজিটাল যুগের জনগোষ্ঠী, রূপান্তরিত উৎপাদনব্যবস্থা, নতুন জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি – সর্বোপরি একটি জ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক দেশ গঠন করা। ‘বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি’ ২০০৯ সালের ১২ থেকে ১৭ নভেম্বর, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ সামিট’ নামক বিষয়ে প্রথম শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করে, যাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এবং অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো আলোচিত হয়। আর এর পর থেকেই এ ব্যাপারে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কর্মসূচি গৃহীত হতে থাকে।
জুন ২০১৯ পর্যন্ত ১৮ হাজার ৯৭৫ কি.মি. অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপন, ২ হাজার ৪ টি ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ওয়াইফাই রাউটার স্থাপন এবং ১ হাজার ৪৮৩ টি ইউনিয়নকে নেটওয়ার্ক মনিটরিং সিস্টেমে সংযুক্ত করা হয়েছে। এখন তা আরও বেড়েছে।
বর্তমানে ওয়েবসাইট বা ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও দিকনির্দেশনা সরাসরি জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় ওয়েব পোর্টাল হলো www.bangladesh.gov.bd।
সরকারি সেবা ও তথ্য বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য দেশে তৈরি করা হয়েছে বেশ কয়টি সরকারি মোবাইল হেল্পডেস্ক। এই মোবাইল হেল্পডেস্কগুলোর নির্দিষ্ট নম্বরে কল করার মাধ্যমে মানুষ সহজেই সরকারি তথ্য ও সেবা পাচ্ছে। এই সবগুলো নম্বর টোল ফ্রি সেবার আওতায়। বর্তমানে বাংলাদেশে এমন বেশ কয়টি সরকারি হটলাইন নম্বর রয়েছে।
সরকারি তথ্য ও সেবা পেতে ৩৩৩, জরুরি সেবা (পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও এ্যাম্বুলেন্স) পেতে ৯৯৯, শিশু ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ১০৯, দুদকের সহযোগিতা নিতে ১০৬, দুর্যোগের আগাম বার্তায় ১০৯০, ভূমি সেবায় ১৬১২২, জাতীয় পরিচয়পত্র তথ্য জানতে ১০৫, শিশুর সহায়তায় ১০৯৮, কৃষক বন্ধু ফোন সেবা পেতে ৩৩৩১, কৃষি কল সেন্টারে যোগাযোগ করতে ১৬১২৩, মহিলা সংস্থা বা তথ্য আপায় যোগাযোগ করতে ১০৯২২ হটলাইন ব্যবহার হচ্ছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি। ফলে সরকারি কোনো বিশেষ ঘোষণা মোবাইল ফোনের ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে সরাসরি ঐ সকল ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের নিকট পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের নাগরিকরা অনলাইনে আবেদন করে দেশের ৬৪টি জেলায় স্থাপিত ই-সেবা কেন্দ্র থেকে জমি-জমা সংক্রান্ত বিভিন্ন দলিলের সত্যায়িত অনুলিপি সংগ্রহ করতে পারে। চিনিকলের ইক্ষু সরবরাহের অনুমতিপত্র বা পুর্জি স্বয়ংক্রিয় করা হয়েছে এবং কৃষকরা বর্তমানে মোবাইলে তাদের পুর্জি পাচ্ছে। বাংলাদেশে অনলাইন বেচাকেনা ও ই-বাণিজ্য ধারণার ব্যাপক বিস্তৃতির কারণে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ই-কমার্স সাইট। সকল শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক অনলাইনে সহজে প্রাপ্তির জন্য সরকারিভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ই-বই প্ল্যাটফরম তৈরি হয়েছে। এতে ৩০০টি পাঠ্যপুস্তক ও ১০০টি সহায়ক পুস্তক রয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক ইন্টারনেট সংযোগের ফলে বর্তমানে দেশে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন অনলাইন শিক্ষামূলক প্ল্যাটফরম। যেমন ‘রবি ১০ মিনিট স্কুল’, ‘১০ মিনিট স্কুল’।
নাগরিকদের নিকট স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকার বিভিন্ন স্থানে ‘টেলিমেডিসিন সেবাকেন্দ্র’ গড়ে তুলেছে। সরকারি হাসপাতালসমূহের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে যেকোনো তথ্য বা অভিযোগ মোবাইল ফোনে অথবা ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বাড়িতে বসেই এখন আয়করদাতারা আয়করের হিসাব করতে পারেন এবং রিটার্ন তৈরি ও দাখিল করতে পারেন। পোস্টাল ক্যাশ কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং, ইলেক্ট্রনিক মানি ট্রান্সফার সিস্টেম ইত্যাদির মাধ্যমে বর্তমানে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অর্থ প্রেরণ তুলনামূলক সহজ ও দ্রুততর হয়েছে। ইন্টারনেট ও অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও টাকা স্থানান্তরিত করা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশের কিছু জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং সেবা হলো – বিকাশ, রকেট, টি-ক্যাশ, নগদ, সিটি টাচ, উপায়, ইজি ক্যাশ।
বর্তমানে গ্রাহকরা বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস বিল অনলাইনে অথবা মোবাইল ফোনে পরিশোধ করতে পারেন। সকল পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ; স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন; পরীক্ষার নিবন্ধন; চাকরির আবেদন; জন্ম নিবন্ধন; ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন ইত্যাদি ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে।
বর্তমানে প্রায় সকল ট্রেন, বাস ও প্লেনের টিকিট অনলাইনে বা মোবাইলে সংগ্রহ করা যায়। সরকারের বড় বড় উন্নয়নমূলক কাজে টেন্ডার নিয়োগের জন্য বর্তমানে ‘ই-টেন্ডার’ নামক বিশেষ ওয়েব পোর্টাল ব্যবহার করা হচ্ছে বলে এসকল কাজে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে দুর্নীতি হ্রাস পেয়েছে। ২০১৮ সালের ১২ মে মহাকাশে প্রেরণ করা হয় বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’। বিশ্বের ৯ম দেশ হিসেবে পরীক্ষামূলক ভাবে ৫এ ইন্টারনেট চালু হয় ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর। ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ বাংলাদেশের ২য় কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু ২ তৈরী ও মহাকাশে উৎক্ষেপনের জন্য রুশ প্রতিষ্ঠান গ্লাভকসমস (Glavkosmos) এর সাথে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিঃ (BSCL)..
দেশের প্রথম বাংলা ভাষাভিত্তিক ব্রাউজার ‘দুরন্ত’ যাত্রা শুরু করে ২৮ শে ফেব্রুয়ারি ২০২১। ১ ডিসেম্বর ২০২০ তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল SEA-ME-WE-6 স্থাপনের প্রকল্প অনুমতি দেয় মন্ত্রি সভা। সারাদেশে উন্নত ও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ এবং বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বাংলাদেশ বর্তমানে দুইটি সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত, যথাঃ SEA-ME-WE-4 I SEA-ME-WE-5।
ইন্টারনেটে বাংলায় তথ্য অনুসন্ধানের জন্য বাংলাদেশের প্রযুক্তিবিদরা তৈরি করেছিল দেশের প্রথম নিজস্ব বাংলা ওয়েব অনুসন্ধান ইঞ্জিন ‘পিপীলিকা’ (বর্তমানে বন্ধ)। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে বাংলাদেশের প্রযুক্তিবিদরা তৈরি করেছেন ‘ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন’ বা ইভিএম। ডিজিটাল বাংলাদেশের সব ধরণের সেবাই বাংলাদেশের মানুষ পেয়েছে।
এবার স্মার্ট যুগে প্রবেশ করেছে। যার শুরু হয় মেট্রোরেল দিয়ে। দেশের সবচেয়ে বড় অর্জনের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পদ্মা সেতু। আর মেট্রোরেল হচ্ছে দেশের গণপরিবহনে বিপ্লব! স্মার্টভাবে টিকিট কেটে যাতায়াত করার নতুন দিগন্তও বলা চলে। তাই তো প্রধানমন্ত্রী স্বপ্নের মেট্রোরেল উদ্বোধনের পর বলেছেন, আমাদের অহংকার পালক মেট্টোরেল। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু করে বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি সারা বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে। আমরা আরেকটি নতুন অহংকারের পালক বাংলাদেশের জনগণের মাথার মুকুটে সংযোজিত করলাম। এটা হচ্ছে এমআরটি লাইন সিক্স।
এই পালক বিজয়ের মাসেই এসেছে। আধুনিক গণপরিবহনের নতুন যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশের মেট্রোরেল আলাদা বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর পুত্র এবং তার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সজীব ওয়াজেদ জয় মেট্রোরেল সংক্রান্ত একটি রিল (ভিডিও) প্রকাশ করেন। পোস্টে জানানো হয়, বিজয়ের মাসে বাংলাদেশের আরেকটি অর্জন মেট্রোরেল। বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্তের শুরু।
ঢাকার মেট্রোরেল কেন অন্যান্য দেশ ও শহরের মেট্রোরেল থেকে আলাদা তার তথ্য জানানো হয়েছে ভিডিওতে। সেখানে বলা হয়েছে, বিশ্বমানের সুবিধা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে এমআরটি লাইন ৬। প্রথমবারের মতো দেশের কোনও ট্রেনে থাকছে না কোনও ব্যালাস্ট আর স্লিপার। শব্দ আর ঝাঁকুনি কমাতে মেট্রোরেল লাইন ৬ এর তিনটি পয়েন্টে থাকছে সর্বাধুনিক ম্যাস স্প্রিং সিস্টেম। ফলে শব্দদূষণের ঝুঁকি অনেক কমে গেছে।
মিরপুর ডিওএইচএস, ফার্মগেট ও শাহবাগ পয়েন্টে ব্যবহার করা হয়েছে এই প্রযুক্তি। বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে ব্যবহার করা হয়েছে রিজেনারেটিভ ব্রেকিং-বেজড হাইব্রিড প্রযুক্তি।
যাত্রীদের বাড়তি নিরাপত্তার জন্য রয়েছে প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন ডোর সিস্টেম। মেট্রোরেল লাইন ৬ এর পাঁচটি পয়েন্টে ট্রেনটি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারবে। প্রতিটি স্টেশনের সিঁড়ি, প্রবেশপথ, লিফট ও টয়লেটে প্রতিবন্ধীদের সুবিধার্থে থাকছে বিশেষ চিহ্ন। সবকটি লাইন চালু হলে প্রতিদিন পাঁচ লাখেরও বেশি লোক যাতায়াত করতে পারবেন।
তেত্রিশ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মেট্রোরেল নির্মাণকাজ চলছে জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকার সহযোগিতায়। শুরুতে সীমিত পরিসরে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে মেট্রোরেল। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের ডিসেম্বর নাগাদ মেট্রোরেলে চড়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যাতায়াত করা যাবে।
ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন দারুণ বলেছেন, মেট্রোরেল ঢাকার লাইফলাইন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের লাইফলাইন। তিনি বলেন, মেট্রোরেল যেমন ঢাকা শহরের লাইফলাইন, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তেমনি বাংলাদেশের লাইফলাইন।
গত বুধবারের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ এবং সেদিন থেকে বাংলাদেশের মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকে। কারণ, বাংলাদেশ বুধবারে বৈদ্যুতিক যানবাহনের যুগে প্রবেশ করেছে। স্মার্ট ও ডিজিটাল রিমোট কন্ট্রোল যানবাহনের যুগে প্রবেশ করেছে। মেট্রোরেল উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে তিনি স্মার্ট বাংলাদেশের পথে শুভসূচনা নিশ্চিত করেছেন। ২০৩০ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা শহরে ৬টি মেট্রোরেল উপহার দেবেন। শুধু ঢাকা শহরেই নয়, সারা দেশে ধাপে ধাপে হবে মেট্রোরেল। সেই ঘোষনাও দিয়ে রেখেছেন।
এ বছর জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, শুধু ঢাকা কেন? চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল হতে হবে। যেসব শহরের সঙ্গে এয়ারপোর্ট আছে, সেইসব শহরে পর্যায়ক্রমে সংযুক্ত করে প্রকল্প নিতে হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় ৬টি মেট্রোরেলের লাইন প্রতিষ্ঠার সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা রয়েছে। এর বাইরে চট্টগ্রামে সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। মন্ত্রী বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রামে আরও দুটি সার্ভিস লেন হবে। চলমান সংকটকালে আমরা বড় প্রকল্পের কাজ হাতে নিতে পারব না। মেট্রোরেলের প্রকল্প ছিল অনেক আগের নেয়া। আগামী বছর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে অর্ধেকটা ওপেন করতে পারব বলেও জানান তিনি।
এ বছর পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল আর কর্ণফুলী টানেল উদ্বোধন হয়। এগুলো চালু হওয়ায় বাংলাদেশের অর্থনীতির দিগন্ত বদলে যাবে। এর প্রভাব পড়বে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে। সেই সঙ্গে এগুলো বাড়িয়ে দেবে দেশের মনোবল। ‘বাংলাদেশও পারে’- এমন সাহস সঞ্চার হবে মানুষের মধ্যে। এক ভিন্ন বাংলাদেশের উদয় হচ্ছে।
২০২২ সালটি বাংলাদেশের জন্য একটি বিশেষ বছর। এ বছরের জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে তিনটি বড় উন্নয়ন প্রকল্প চালু হয়ে যায়। ২০২২ সালেই স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়। চলছে মেট্রোরেলও। দেশের দক্ষিণ-পূর্বের বন্দরনগরী চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশের সুড়ঙ্গপথও চালু হয়ে যাবে। এই টানেল কক্সবাজারের সঙ্গে চট্টগ্রামের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমিয়ে দেবে। ফলে ২০২৩ সালে অবকাঠামো সামর্থ্যে ভিন্ন এক বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হবে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০২৩ সাল থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নের নতুন অধ্যায় শুরু হবে। পেছনে ফিরে আর তাকাতে হবে না। উন্নয়নের উল্লম্ফন অব্যাহত থাকবে। ২০৩১ সালের মধ্যেই উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। ২০২৩ সাল থেকে ভিন্ন বাংলাদেশ পাবে দেশবাসী। পদ্মা সেতুর পর মেট্রোরেলও চালু হয়ে গেছে। এখন সামনে আছে কর্ণফুলীর বঙ্গবন্ধু টানেল। সরকারের জন্য অনেক বেশি গর্ব করার মতো প্রকল্প হচ্ছে কর্ণফুলী নদীর নিচের সুড়ঙ্গপথ বঙ্গবন্ধু টানেল। এ ধরনের পথ দেশের ইতিহাসে প্রথম। কক্সবাজার ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের গাড়ি চট্টগ্রাম শহরকে এড়িয়ে সুড়ঙ্গপথ দিয়েই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে চলাচল করতে পারবে। তাহলে চট্টগ্রাম নগরীর যানজটও অনেকাংশে কমবে। ১০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ টানেল চীনের সাথে জি-টু-জি ভিত্তিতে নির্মাণ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পে চীনা-সহায়তা প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চীনের একটি প্রতিষ্ঠান।
টানেলটি চালু হলে বদলে যাবে চিরচেনা চট্টগ্রাম। নদী, পাহাড় আর সাগর-মোহনার চট্টগ্রাম পাবে নবরূপ। নদীর ওপাড়ে গড়ে উঠবে আরেক চট্টগ্রাম। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আবাসন ব্যবস্থা সম্প্রসারিত হবে। চীনের সাংহাই নগরীর মতো চট্টগ্রাম হবে ওয়ান সিটি-টু টাউন। যার প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে।