আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমলনামা দেখে এমপিদের মনোনয়ন দেয়া হবে
মিথুন আশরাফ – প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে কারও মধ্যে কোনো প্রশ্ন নেই। ওই নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ২৯-৩০টি আসন পেয়েছিল। এখন তারা এর চেয়ে বেশি আসন আশা করে কী করে? কেননা, এরপর তো আওয়ামী লীগ সরকার ১৪ বছরে দেশের অনেক উন্নয়ন করেছে। মানুষকে শান্তি দিয়েছে। ফলে আমাদের ভোটও বেড়েছে। জাতীয় সংসদ ভবনের সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ বৈঠকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে জাতীয় সংসদের উপনেতা নির্বাচিত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমলনামা দেখে এমপিদের মনোনয়ন দেয়া হবে। সংসদ সদস্যদের সবার তথ্যই আমার কাছে আছে।
দলীয় সংসদ সদস্যদের এখন থেকেই সর্বাত্মক নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় নেমে পড়ার নির্দেশনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, এ বছরের অক্টোবর থেকেই আগামী নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। হাতে আর সময় আছে মাত্র ৯-১০ মাস। ফলে ঈদ-পূজার ছুটির অপেক্ষায় না থেকে এখন থেকেই মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইতে হবে। বিএনপি-জামায়াতের অতীতের দুঃশাসন, আগুন সন্ত্রাস আর অপপ্রচারের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করতে হবে। প্রতিটি আসনে নৌকা প্রতীকের পাশাপাশি সংশ্নিষ্ট সংসদ সদস্যের অবস্থান বিষয়ে জরিপ চলছে বলেও জানিয়েছেন শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ ও সংসদীয় দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় বৈঠক শুরু হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টার এ বৈঠকে দলের সংসদ সদস্যরা খোলামেলা কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীও মনোযোগ সহকারে তাঁদের বক্তব্য শোনেন। নানা বিষয়ে তাৎক্ষণিক দিকনির্দেশনাও দেন তিনি।
টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা বর্তমান সরকারের ১৪ বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মানুষের মধ্যে তুলে ধরতে দলীয় সংসদ সদস্যদের নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, ঢাকায় বসে না থেকে নিজ নিজ এলাকায় যেতে হবে। গ্রামে গ্রামে যেতে হবে। উঠান বৈঠক করে মানুষকে সচেতন করতে হবে। মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবাইকে ২০০৯ সালের আগের সঙ্গে বর্তমান সময়ের দেশের অবস্থার তুলনা করে দেখার কথা বলতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে- ২০০৯ সালের আগে দেশ ও মানুষের অবস্থা কী ছিল, আর এই ১৪ বছর পর কী হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের বিশাল উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা ও মানুষের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের আগেই মানুষের মধ্যে নৌকার অবস্থান ছিল ৭৭ শতাংশ। পদ্মা সেতু করার পর সেটা আরও বেড়েছে।
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে জয়লাভ অনেক চ্যালেঞ্জের হবে। একদিকে ৩০০ আসনেই নৌকার অবস্থান নিয়ে জরিপ করছি। আরেকদিকে সব আসনের বর্তমান এমপিদের অবস্থান নিয়েও জরিপ করা হচ্ছে। জরিপ রিপোর্টও আমার কাছে আছে। আমলনামা দেখেই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হবে। জনগণের সঙ্গে যাদের সুসম্পর্ক আছে, ক্রান্তিলগ্নে যাঁরা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন, ভালো কাজ করেছেন, জনগণের সুযোগ-সুবিধা দেখেন এবং জনগণ যাঁদের চান তাঁরাই মনোনয়ন পাবেন।
দলীয় সংসদ সদস্যদের সতর্ক করে দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আর যাঁরা জনবিচ্ছিন্ন ও যাঁদের জনপ্রিয়তা থাকবে না; ভোটে জিতে আসার সক্ষমতা থাকবে না; এলাকার মানুষের সঙ্গে যাঁদের সুসম্পর্ক নেই- তাঁরা কোনোভাবেই মনোনয়ন পাবেন না, তিনি যত বড় নেতাই হোন না কেন। দেশের প্রতি যাঁদের ফিলিংস নেই, তাঁদের সংসদে এমপি হয়ে আসারও দরকার নেই। কাজেই এলাকায় গিয়ে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। মানুষের পাশে থাকতে হবে। দলকে শক্তিশালী করতে হবে। সরকারের উন্নয়ন-অর্জন তুলে ধরে ভোট নিয়ে আবার ক্ষমতায় আসতে হবে।
কিছু কিছু সংসদ সদস্য নিয়মিত এলাকায় যান না উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিটি সংসদীয় আসনে ছয় মাস পর পর জরিপ করি। এতে একেকজন সংসদ সদস্যের পেছনে ৭০-৮০ হাজার টাকা খরচ হয়। কে কে এলাকায় যান, কে যান না- সব তথ্য আমার কাছে আছে। দলীয় মনোনয়ন পেতে হলে এলাকায় যেতে হবে। দলের দুঃসময়ের কর্মীদের সঙ্গে রাখতে হবে, তাদের মূল্যায়ন করতে হবে। সংসদ সদস্য হওয়া মানেই সংসদে আসা-যাওয়া, বরাদ্দ পাওয়া, এলাকায় নিজের লোক তৈরি আর নিজের আধিপত্য বিস্তার করা- এগুলো চলবে না। সংসদ সদস্যদের গ্লোবাল রাজনীতি বুঝতে হবে।
বিরোধী দলের আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করলে কোনো বাধা দেওয়া হবে না। তবে আন্দোলনের নামে ২০১৩-১৪ ও ১৫ সালের মতো সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের কঠোরহস্তে দমন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিরপক্ষে এবং প্রতিযোগিতামূলক হবে। এই প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে বিজয়ের জন্য এখন থেকেই মানুষের কাছে ভোট চাইতে হবে।