Search
Close this search box.

দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রধান হাতিয়ার শিক্ষিত জনগোষ্ঠী – প্রধানমন্ত্রী

দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রধান হাতিয়ার শিক্ষিত জনগোষ্ঠী - প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার – শিক্ষিত জাতি ছাড়া কখনো একটি দেশ উন্নত হতে পারে না। আমরা দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই। আর এর জন্য প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী। আমরা সব সময় শিক্ষাকে গুরুত্ব দেই। আমাদের উদ্যোগে শিক্ষার হার বেড়েছে। বহুমুখী শিক্ষাব্যবস্থা করার পাশাপাশি যুগোপযোগী শিক্ষা বা বিষয়ভিত্তিক শিক্ষার উদ্যোগ নিয়েছি। সোনার বাংলা গড়তে সোনার মানুষ চেয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজকের ছেলে-মেয়েরাই তো সোনার মানুষ। কথাগুলো বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের চামেলী হলে শেখ হাসিনার হাতে উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের সারসংক্ষেপ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকগুলো কৃষি ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিজ্ঞান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণা হচ্ছে। কৃষি গবেষণা খুব ভালো হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তিসহ সব ক্ষেত্রে গবেষণা এবং আরও বেশি উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা গবেষণায় গুরুত্ব দিচ্ছি। গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন উদ্ভাবন হয়। সব সেক্টরকে গবেষণায় এগিয়ে আসতে হবে।

ফলফলের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ২০২২ সালের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। পাসের হারে এবার মেয়েদের সংখ্যা বেশি। তাই ছেলেদের পড়াশোনায় আরও মনোযোগী হতে হবে। এ ছাড়া যারা পাস করে নাই, তারা যেন মন খরাপ না করে। তারা যেন নতুনভাবে সামনে ভালো করার উদ্যোগ নেয়। আমাদের ছেলে-মেয়েরা ফেল করবে কেন?

প্রধানমন্ত্রী এসময় বলেন, আমরা নিয়ম করেছিলাম, ফলাফল ৬০ দিনের মধ্যে দিতে হবে। এবার আপনারা ৬০ দিনের আগেই ফল দিতে পেরেছেন। এজন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাদরাসা শিক্ষাকে আরও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। তাদের ভোকেশনাল ট্রেনিং নিতে আরও সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। তাতে তাদের কর্মসংস্থান তৈরি হবে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে আমরা শিক্ষাকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি এবং স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি করার জন্য আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নেই। আমাদের একটা প্রকল্পও ছিল নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। প্রত্যেকটা জেলা যেন নিরক্ষরতামুক্ত হয়, কয়েকটি জেলা নিরক্ষরতামুক্ত ঘোষণাও করেছিলাম। দুর্ভাগ্যের বিষয় ২০০১-এ আমরা আর সরকারে আসতে পারিনি। এর পরে বিএনপি-জামায়াত জোট আসে, সেই প্রজেক্ট আর সেভাবে কার্যকর হয়নি। আমাদের উদ্যোগের ফলে ৯৬ সালে যেখানে ৪৫ ভাগ আমরা স্বাক্ষরতার হার পেয়েছিলাম, অল্প সময়ের মধ্যে আমরা ৬৫ দশমিক ৫ ভাগে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছিলাম। ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করি, তখন আমরা দেখি ৬৫ দশমিক ৫ থেকে আর সামনে এগোতে পারেনি, বরং আর পিছিয়ে যায়। আবারও ৫০-এর ঘরে চলে আসে।

মাদ্রাসা শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষাটা যাতে তারা নিতে পারে। কারণ এই মাদ্রাসা শিক্ষার পরে ছেলে-মেয়েরা কোথায় গিয়ে কাজ করবে! সে জন্য তাদের ভোকেশনাল ট্রেনিং বা প্রযুক্তি শিক্ষা; এসব টেকনিক্যাল সাইডে যাতে তারা আরও ট্রেনিং নিতে পারে সেই সুযোগটা সৃষ্টি করা দরকার এবং তাদের উৎসাহিত করা দরকার। তাতে তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। কারণ আমরা তো সবার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা অনেক মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত করে দিয়েছি। শিক্ষকদের সরকারি চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, করোনাকালে স্কুল-কলেজে যেতে না পেরে অনেকে একটু বিক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছিল। সেই সময়টা পার হয়ে গেছে। করোনা আমরা অনেক দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি। পূর্ণদমে আবার শিক্ষাগ্রহণ শুরু হবে, সেটা হয়েছে।

করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ায় গত ৬ নভেম্বর সারাদেশে স্বাভাবিক পরিবেশে শুরু হয় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ড মিলিয়ে ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১২ লাখ তিন হাজার ৪০৭ জন।

এ বছর দুই হাজার ৬৪৯টি কেন্দ্র ও ৯ হাজার ১৮১টি প্রতিষ্ঠানে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হয়। ১৩ ডিসেম্বর তত্ত্বীয় পরীক্ষা ও ২২ ডিসেম্বর ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ হয়।

সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উচ্চমাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফল হস্তান্তর করা হয়েছে। বুধবার বেলা সোয়া ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চামেলী হলে শেখ হাসিনা এ ফল ঘোষণার কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।

এরপর বেলা সাড়ে ১১টা থেকে নিজ নিজ শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে ফলাফল আপলোড করা হয়। এ সময় থেকে যে কেউ রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে ওয়েবসাইট ও মোবাইলে এসএমএস করে ফল দেখতে পারেন।

এ বছর ১২ লাখ ৩ হাজার ৪০৭ শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। এর মধ্যে ৬ লাখ ২২ হাজার ৭৯৬ ছাত্র এবং ৫ লাখ ৮০ হাজার ৬১১ ছাত্রী। সারা দেশে ২ হাজার ৬৪৯টি কেন্দ্রে একযোগে এ পরীক্ষা নেয়া হয়।
মোট ১১টি শিক্ষাবোর্ডের মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ছিল ৯ লাখ ৮৫ হাজার ৭১৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৫ লাখ ৮২ হাজার ১৮৩ এবং ছাত্রী ৫ লাখ ৩ হাজার ৫৩০ জন।

অন্যদিকে মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে আলিম পরীক্ষায় ২ হাজার ৬৭৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ৪৪৮টি কেন্দ্র মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৯৪ হাজার ৭৬৩ জন। এর মধ্যে ৫১ হাজার ৬৯৫ ছাত্র এবং ৪৩ হাজার ৬৮ ছাত্রী।
এছাড়া কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এইচএসসি (বিএম/বিএমটি), এইচএসসি (ভোকেশনাল), ডিপ্লোমা-ইন-কমার্স পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২২ হাজার ৯৩১। এর মধ্যে ছাত্র ৮৮ হাজার ৯১৮ এবং ছাত্রী ৩৪ হাজার ১৩ জন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ