স্টাফ রিপোর্টার – প্রথমবারের মত দেশে আয়োজিত জাতীয় ভূমি সম্মেলন ২০২৩ অনুষ্ঠিত ৪টি প্যানেল ডিসকাশনে ভূমি ব্যবস্থাপনা ও জরিপ বিষয়ক বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে অংশগ্রহণমূলক আলোচনা হয়। প্যানেল ডিসকাশনে অতিথিরা তাঁদের সেক্টর কিংবা বিষয় সংশ্লিষ্ট বক্তব্য রাখেন। অংশগ্রহণমূলক প্যানেল ডিসকাশনগুলো খুবই প্রাণবন্ত ছিল।
স্মার্ট ভূমিসেবা বাস্তবায়নে প্যানেল ডিসকাশনে বক্তারা প্রথমে বিশেষজ্ঞ বক্তব্য প্রদান করেন, এরপর অংশগ্রহণকারীদের সাথে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন, এরপর অংশগ্রহণকারীগণ তাঁদের নিজ মতামত ব্যক্ত করেন। এসব মিথস্ক্রিয়া থেকে বের হয়ে আসা চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাব্য সমাধানের উপায় নিয়ে পরবর্তীতে পর্যালোচনা করা হবে এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রয়োজন অনুসারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর বঙ্গবন্ধু সম্মেলনকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত জাতীয় ভূমি সম্মেলন ২০২৩ এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের ৭টি নতুন উদ্যোগ উদ্বোধন করেন।
স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থাপনায় মাঠ প্রশাসন
২৯ মার্চ জাতীয় ভূমি সম্মেলন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর অপরাহ্নে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থাপনায় মাঠ প্রশাসন’ শীর্ষক সেমিনার/প্যানেল ডিসকাশন অনুষ্ঠিত হয়। এই প্যানেল ডিসকাশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। ভূমি সচিব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান পিএএ এই সেশন সঞ্চালনা করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মোস্তফা কামাল, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ আবুবকর ছিদ্দীক, ভূমি আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে এম শামিমুল হক ছিদ্দিকী এবং অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাজমা মোবারেক। এইদিন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভূমি সচিব।
বিভাগীয় কমিশনার, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ), রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি), সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তাগণ সেশনে অংশগ্রহণ করেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সেশনে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য টেকসই ও স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা। আমরা চাচ্ছি ২০২৬ সালের মধ্যে বর্তমানে গৃহীত ও পরিকল্পিত সব প্রকল্পের পূর্ণ বাস্তবায়ন। ২০২৬ সালে আমরা এমন একটি ব্যবস্থা দেখতে চাই যেখানে খতিয়ানের দাগ শেয়ার হবেনা এবং মালিকভিত্তিক খতিয়ান হবে। এটা হলে ভূমি নিয়ে মামলা-মোকাদ্দমা ও সীমানা বিরোধ কমে যাবে। এনআইডি দিয়েই যেন পাওয়া যায় জমির সকল তথ্য – এই ব্যবস্থা স্থাপনেও আমাদের পরিকল্পনায় আছে। সর্বোপরি দ্রুত সারাদেশে বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপ (বিডিএস) বাস্তবায়ন করা। যেসব জায়গায় একবার এই ডিজিটাল জরিপ সম্পন্ন হবে, সেখানে ভবিষ্যতে আর জরিপ করার প্রয়োজন পড়বে না।
এই সেশনে আলোচনায় যেসব তথ্য উঠে আসে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ই-নামজারি ব্যবস্থায় বর্তমানে প্রতি মাসে অনলাইনে প্রায় ২ লক্ষাধিক নামজারি নিষ্পত্তি হচ্ছে। শুরু থেকে এ পর্যন্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে প্রায় ৮৪ লক্ষ নামজারি মামলা। এ পর্যন্ত নামজারি সিস্টেম থেকে অনলাইনে আদায়কৃত প্রায় ১৬০ কোটি টাকা তাৎক্ষণিকভাবে সরকারের কোষাগারে জমা হয়েছে। ২০২১ সালে উদ্বোধনের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪ কোটির অধিক হোল্ডিং ডাটা ম্যানুয়াল থেকে ডিজিটালে রূপান্তরিত হয়েছে। নাগরিককে অনলাইনে দাখিলা প্রদান করা হয়েছে প্রায় ৫৭ লক্ষের অধিক। অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হয়েছে ৫১৯ কোটি টাকা যা তাৎক্ষণিকভাবে অটোমেটেড চালান সিস্টেমের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে। বর্তমানে ৫ কোটি ২১ লক্ষের অধিক জমির মালিকানা এবং ৭৫ হাজারের অধিক মৌজা ম্যাপ তথ্য অনলাইনে রয়েছে। ডাক বিভাগ এখন নাগরিকের ঠিকানায় খতিয়ান পৌছে দিচ্ছে। এ পর্যন্ত ৩ লক্ষের অধিক খতিয়ান ডাকবিভাগের মাধ্যমে নাগরিকগণ হাতে পেয়েছেন। এ সিস্টেম থেকে প্রায় ১৩ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা সরকারি রাজস্ব আদায় হয়েছে। প্রতিনিয়ত নামজারি খতিয়ান যুক্ত হচ্ছে এ সিস্টেমে।
১৬১২২ নম্বরে ফোন করে পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে যে কোন সময় (২৪/৭) যে কোন নাগরিক এখন ভূমি অফিসে না এসেই নামজারি, ভূমি উন্নয়ন কর এবং খতিয়ান সেবা গ্রহণ করতে পারছেন। কল সেন্টার থেকে প্রায় ১০.২০ লাখ কল নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এছাড়াও বিদেশ থেকে নিষ্পত্তিকৃত কলের সংখ্যা প্রায় ৬০০০। প্রায় ১১,৪০০ ফলো-আপ কল (কল ব্যাক) করা হয়েছে। নাগরিকগণকে ২০,৮০০ টি ভূমি সংক্রান্ত আইনী পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। সমগ্র বাংলাদেশের ১,৩৮,০০০ টি ম্যাপকে ডিজিটাইজ করাসহ স্যাটেলাইট ইমেজ ক্রয় করা হচ্ছে। এই ম্যাপের উপরে স্যাটেলাইট ইমেজ বসিয়ে প্লটভিত্তিক জমির শ্রেণীর একটি তথ্যভান্ডার তৈরি হচ্ছে। ২০২৩ সালের মার্চ নাগাদ ২০ হাজার ডিজিটাল মৌজা ম্যাপ ই-নামজারি সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত হচ্ছে। নামজারির সাথে-সাথে এই ডিজিটাল ম্যাপ ও খতিয়ান স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশোধিত হতে থাকবে। একই খতিয়ানের মধ্যে মাল্টিপল দাগ শেয়ার করা তথা হাতের লেখা খতিয়ান প্রথার অ্যানালগ পদ্ধতির উত্তরণ ঘটিয়ে ড্রোন দিয়ে ডিজিটাল জরিপের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
সায়রাত, খাসজমি ও জনবান্ধব ভূমি সেবা
৩০ মার্চ জাতীয় ভূমি সেবা সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন সকালে রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে ‘সায়রাত, খাসজমি ও জনবান্ধব ভূমি সেবা’ শীর্ষক প্যানেল ডিসকাশন অনুষ্ঠিত হয়। এই সেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন। ভূমি সচিব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান পিএএ এই সেশন সঞ্চালনা করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিৎ কর্মকার, আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর রুনা নাহিদ আক্তার, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ আবু বকর ছিদ্দীক, এবং ভূমি আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে এম শামিমুল হক ছিদ্দিকী। ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্পের ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ডোমেইন স্পেশালিষ্ট সাবেক মুখ্য সচিব মোঃ আবুল কালাম আজাদ সম্মানীয় অতিথি ছিলেন। এইদিন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভূমি আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যান।
বিভাগীয় কমিশনার, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ), সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তাগণ সেশনে অংশগ্রহণ করেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সেশনে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কাজে অগ্রগণ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় অন্যতম। তিনি আশা প্রকাশ করেন স্মার্ট ভূমিসেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজ আরও বেগবান হবে।
এই সেশনে আলোচনায় যেসব তথ্য উঠে আসে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, সায়রাত মহালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় হয়েছে হাট-বাজার থেকে ৭৪৪কোটি টাকা, বালু মহাল থেকে ২৭৩ কোটি টাকা এবং জলমহাল থেকে ১৭৩কোটি টাকা। অনলাইন ব্যবস্থার কারণে ১৬৯৯ টি জলমহাল কম ইজারা দিয়েও সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৯১ কোটি টাকা! ২০২২ এর জুন মাস পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী দেশে মোট কৃষি খাস জমি ১৭,৩৫,৯১৫ একর, এরমধ্যে বন্দোবস্তযোগ্য ৪,৬০,১৬৪ একর। মোট অকৃষি খাস জমি ২২,৫০,১৭০ একর, যার মধ্যে বন্দোবস্তযোগ্য ১,১৫,৭৬৩ একর।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গৃহহীনদের গৃহপ্রদান কর্মসূচির অওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫ লক্ষ ৭ হাজার ২৪৪ টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে খাস জমিতে পুনর্বাসন করা হয়েছে। মুজিববর্ষে সারাদেশে উদ্ধারকৃত ৫৫১২ একর খাস জমিতে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য একক গৃহ নির্মাণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে; উদ্ধারকৃত খাস জমির আনুমানিক মূল্য ২৯৬৭ কোটি টাকা। গত এক দশকে ৩,৪৬,০২৮ টি পরিবারের মাঝে ৯০,৯৯২ একর খাসজমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে।
অধিগ্রহণ ব্যবস্থাপনা, সরকারি মামলা ও সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাপনা
৩০ মার্চ জাতীয় ভূমি সেবা সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন অপরাহ্ণে রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে ‘অধিগ্রহণ ব্যবস্থাপনা, সরকারি মামলা ও সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্যানেল ডিসকাশন অনুষ্ঠিত হয়। এই সেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্পের ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ডোমেইন স্পেশালিষ্ট সাবেক মুখ্য সচিব মোঃ আবুল কালাম আজাদ সেশনটি সঞ্চালনা করেন।
ভূমি সচিব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ডক্টর মো: হুমায়ুন কবীর, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগের সচিব মোঃ মইনুল কবির এবং ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্পের প্রকিউরমেন্ট বিশেসজ্ঞ সাবেক সচিব মোঃ ফারুক হোসেন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ড. মো: মাহমুদ হাসান এই সেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
বিভাগীয় কমিশনার, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ), সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তাগণ সেশনে অংশগ্রহণ করেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সেশনে উপস্থিত ছিলেন।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, আমাদের ভূমি সীমিত। তাই, ভূমির অপব্যবহার যেন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সেজন্য ভূমি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম আরও দক্ষতার সাথে পরিচালনা করতে হবে। তিনি বলেন, যেকোনো কাজে জমি অধিগ্রহণের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন, কৃষি জমি নষ্ট না হয়। অব্যবহৃত জমি অধিগ্রহণে সব সময় অগ্রাধিকার দিতে হবে। জমি অধিগ্রহণের সময় যেন কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে বিশেষ ভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে।
এই সেশনে আলোচনায় যেসব তথ্য উঠে আসে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, অধিগৃহীত জমির সর্বোচ্চ এবং যথাযথ ব্যবহার করা হলে এবং দুই ফসলি ও তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণের আওতাবর্হিভূত রাখা হলে কৃষি জমি সংক্ষণের ব্যবস্থাসহ খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা মজবুত করা সম্ভব হবে। এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সম্প্রতি ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে “ভূমির মালিকানা ও ব্যবহার আইন, ২০২৩” প্রণয়নের জন্য আইনের খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনটি প্রণীত হলে কৃষি জমি সুরক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ ভূমি ব্যবস্থার সর্বোচ্চ দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব হবে।
দেশের বা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে মামলার যেকোনো পক্ষ ভূমি রাজস্ব মামলায় যাতে অনলাইন শুনানিতে অংশ নিতে পারেন, সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এতে ভূমি রাজস্ব বিষয়ে সেবা প্রত্যাশী জনগণ উপকৃত হচ্ছেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হলো সিভিল স্যুট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দেওয়ানি মামলা ও ভূমি রাজস্ব মামলাগুলো দ্রুত, স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সেবা নিশ্চিত করাই এর মূল লক্ষ্য। বেশ কিছু পুরানো আইনের সংস্কারপূর্বক যুগোপযোগীকরণসহ কয়েকটি নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্যে হলো: ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ এবং ভূমির মালিকানা ও ব্যবহার আইন, ২০২৩।
বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপ
৩১ মার্চ জাতীয় ভূমি সেবা সম্মেলনের তৃতীয় দিন সকালে রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপ’ শীর্ষক প্যানেল ডিসকাশন অনুষ্ঠিত হয়। এই সেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। সেশনটি ভূমি সচিব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান পিএএ সঞ্চালনা করেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আমেদ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ আব্দুল বারিক এবং জাতীয় ভূমি জোনিং প্রকল্পের কনসাল্টেন্ট সাবেক সিনিয়র সচিব দিলওয়ার বখত। সম্মানীয় অতিথি ছিলেন ল্যান্ড পলিসি স্পেশালিষ্ট সাবেক গ্রেড-১ কর্মকর্তা মোঃ হান্নান মিয়া। এইদিন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ।
বিভাগীয় কমিশনার, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব), জোনাল সেটেল্মেন্ট অফিসার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), চার্জ অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসারগণ সেশনে অংশগ্রহণ করেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সেশনে উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষা এবং জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের ল্যান্ড জোনিং প্রকল্প যুগোপোযোগী এবং গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জরিপের দীর্ঘসূত্রিতা রোধে ভূমি কর্মকর্তাদের কাজ করে যাওয়ার আহবান জানান। এছাড়া ভূমি ব্যবস্থাপনার পারিভাষা আধুনিকীকরণ করে বাংলায় করা যায় কিনা তা পর্যালোচনা করার অনুরোধ জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।
এই সেশনে আলোচনায় যেসব তথ্য উঠে আসে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায় তিনটি জরিপ বিষয়ক প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এর মধ্যে মৌজা ও প্লটভিত্তিক ডিজিটাল ভূমি জোনিং প্রকল্প সরাসরি ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি দক্ষ ব্যবহার। ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের আওতায় এস্টাব্লিশমেন্ট অফ ডিজিটাল ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন, ধামরাই ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলা এবং মানিকগঞ্জ পৌরসভায় ডিজিটাল ল্যান্ড সার্ভে করা হবে। এ প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে ম্যাপ ও রেকর্ড এর ইন্টিগ্রেশন হবে। এ প্রকল্পে ডিজিটাল ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সফটওয়ার প্রস্তুত করা হবে। সকল ডাটা ক্লাউড বেইজ সার্ভারে সংরক্ষণ করা হবে। ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের ডিজিটাল জরিপ পরিচালনার সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় পটুয়াখালী, বরগুনা, সিরাজগঞ্জ, পাবনা জেলা এবং গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া ও কোটালিপাড়াসহ ৩২টি উপজেলায় ডিজিটাল জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
প্লট টু প্লট জরিপ সম্পন্ন হলে সরকারি ও বেসরকারি মালিকানার তথ্যাটি সহজেই জানা যাবে। এর মাধ্যমে ভূমি ব্যবস্থাপনার আমূল পরিবর্তন হবে। আদালতের মামলা হ্রাস পাবে, সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি হবে। জমির মালিকানার তথ্য পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে জানা যাবে এবং জনগণ প্রয়োজনীয় সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বৃহৎ ভূ-স্থানিক উপাত্ত প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। ভূমি শ্রেণিবিভাগ, দুর্যোগ সাড়া, নগরায়ণ ও যোগাযোগ এর সকল উপাত্ত একই প্লাটফরমে সংরক্ষিত থাকবে। বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপ শেষ হলে আর মাঠে গিয়ে নিয়মিত ক্যাডাস্ট্রাল জরিপ করার প্রয়োজন হবেনা।