Search
Close this search box.

পেঁয়াজের ঝাঁজ দুই মাসের ব্যবধানে তিনগুণ!

রাকিব হাসান– প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে পেঁয়াজের দাম। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দামের ঊর্ধ্বগতি যেন কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না। দুই মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় তিনগুণ । এতে বাজার করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

ব্যবসায়ীদের দাবি, চাহিদার তুলনায় বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহের ঘাটতি থাকায় দাম বাড়ছে। পেঁয়াজ আমদানি করা ছাড়া এর দাম আর কমবে না। বরং সামনের দিনগুলোতে দাম আরও বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা।

তবে ক্রেতারা বলছেন, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র অসাধু ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ মজুদ করে দাম বাড়িয়েছেন। সরকারের তদারকির অভাবে সুযোগ নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

শনিবার (৩ জুন) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজের পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। দেশি পেঁয়াজের পাশাপাশি আছে অবৈধভাবে আসা ভারতীয় পেঁয়াজও। তারপরও দুই মাসের ব্যবধানে প্রায় তিনগুণ হয়েছে পেঁয়াজের দাম।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে বাজারে মানভেদে ফরিদপুরের পেঁয়াজের পাল্লা (৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা, যা কেজিতে পড়ছে ৮০ থেকে ৮৪ টাকা। পাবনার পেঁয়াজের পাল্লা বিক্রি হচ্ছে ৪২০ থেকে ৪৩০ টাকা, কেজিতে যা পড়ছে ৮৪ থেকে ৮৬ টাকা। আর রাজশাহীর পেঁয়াজের পাল্লা বিক্রি হচ্ছে ৪২০ টাকা, যা কেজিতে ৮৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অবৈধভাবে আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৪ টাকায়।
অথচ দুই মাস আগেও কারওয়ান বাজারে মানভেদে প্রতি পাল্লা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ১৫০ থেকে ১৭৫ টাকা। কেজির হিসেবে যা পড়েছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। দুই মাসের ব্যবধানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম বেড়েছে প্রায় তিনগুণ।

পেঁয়াজের এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা জব্বার বলেন, কাঁচামালের দামের কোনো ঠিক নেই। সকালে এক দাম থাকে তো বিকেলে আরেক দাম। এবার পেঁয়াজের উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহের ঘাটতি রয়েছে। তাই দাম বেশি।

হাঁট থেকে পেঁয়াজ কিনে আনা এক ব্যবসায়ী বলেন, ফরিদপুর থেকে প্রতি মণ পেঁয়াজ কিনেছি ৩ হাজার ১০০ টাকায়। কেজি হিসেবে দাম পড়েছে সাড়ে ৭৭ টাকা। এরপর পরিবহন, লেবার ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজিতে আরও ৪ টাকা যোগ হয়। বাজার পর্যন্ত আসতেই প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়ে সাড়ে ৮১ টাকা। তাহলে এই পেঁয়াজ বিক্রি করব কত? আমরা হাঁট থেকে যে দামে পেঁয়াজ কিনে আনি তার থেকে ১-২ টাকা লাভে বিক্রি করি।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী উৎপাদন ও মজুদ মিলিয়ে বাজারে পেঁয়াজের সংকট থাকার কথা নয়। তারপরও বাজারে পেঁয়াজের সংকট কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, পেঁয়াজ উৎপাদন হলেও নানা করাণে নষ্ট হয়েছে। এছাড়া কোনো কৃষক হয়তো ৫০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন করেছে। কিন্তু সে একসাথে সব পেঁয়াজ বিক্রি করে না। কারণ এখন সব বিক্রি করে দিলে সারা বছর কী করবে? তাই তার প্রয়োজন অনুযায়ী দুই মণ বা তিন মণ বিক্রি করে। আমদানি করা ছাড়া পেঁয়াজের দাম কমবে না, বরং আরও বাড়বে বলে জানান এই ব্যবসায়ী।

জাহাঙ্গীর আলম নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, হাটেই পেঁয়াজের দাম বেশি। কারওয়ান বাজারে যে দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছি, কাল হাটে গিয়ে দেখব এর থেকে বেশি দাম। তখন আমাদের তো বেশি দামেই বিক্রি করতে হবে। হাটে কৃষকদের কাছে দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তারা বলে, এবার উৎপাদন কম হয়েছে। আগে যেখানে প্রতি বিঘায় ৫০ থেকে ৬০ মণ পেঁয়াজ হতো, এবার সেখানে নাকি ৩০ থেকে ৪০ মন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কৃষক পর্যায়েই পেঁয়াজের দাম বেশি। কিন্তু বাজারে আমাদের সাথেই ক্রেতারা ঝগড়া করে। দাম কমলে এই অশান্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তবে আমদানি করা ছাড়া পেঁয়াজের দাম কমবে না। বরং এই সপ্তাহেই পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর শ্যামবাজার পাইকারী  আড়ৎ এ ৯২ টাকা করে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। তাহলে কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। আমদানি করা ছাড়া পেঁয়াজের দাম কমবে না বলে জানান বাজারের একাদিক ব্যবসায়ী।

পেঁয়াজের এমন আকাশছোঁয়া দামের কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। তাদের দাবি, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট, অবৈধ মজুদ ও সরকারের তদারকির অভাবে পেঁয়াজের বাজার এমন অস্থির হয়ে উঠেছে। এতে ভুক্তভোগী শুধু সাধারণ ক্রেতারাই।

বাজারে আসা বেশ কয়েকজন ক্রেতার সাথে কথা হলে জানা যায়, বাজারে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই বলেই পেঁয়াজের দাম এমন অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। মাঝে সরকার যখনই বাইরে থেকে পেঁয়াজ আমদানির কথা বলেছিল, তখনই কেজিতে ৪-৫ টাকা দাম কমেছে। আমদানি না করায় এখন আবার বেড়েছে। সরবরাহের ঘাটতি নেই। কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করেই ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ মজুদ করে দাম বাড়িয়েছে। এখন সরকার যদি আমদানি শুরু করে তাহলে মজুদ করা পেঁয়াজ বের হয়ে আসবে, দামও কমবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ২ লাখ ৪১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করার পর উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টন। প্রতিকূল আবহাওয়াসহ নানা কারণে প্রায় ৩৫ শতাংশের মতো পেঁয়াজ নষ্ট হলেও বর্তমানে মজুদ আছে প্রায় ১৮ লাখ টন। সে হিসেবে পেঁয়াজের সংকট হওয়ার কথা নয়, তবুও এক মাসের ব্যবধানে বাজারে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়ে কেজি প্রতি ৮০ টাকা ছাড়িয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ