Search
Close this search box.

হু হু করে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা

জুলাই মাসের প্রথম সাত দিনেই ছাড়িয়ে গেছে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড। দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু বিষয়ক তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মোট ২৮১ জন মারা যান এবং হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন।

গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল মোট এক হাজার ৮৯ জন এবং এক জনের মৃত্যু হয়। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট সাত হাজার ৯৭৮ জন এবং ৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

২০২২ সালের জুলাই মাসের প্রথম দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ২২ জন, দুই জুলাই ৪৯ জন, ৩ জুলাই ৪২ জন, ৪ জুলাই ৩৬ জন, ৫ জুলাই ৪৬ জন, ৬ জুলাই ৩২ জন, ৭ জুলাই ৩১ জন। অর্থাৎ গত বছরের জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ২৫৮ জন, কোনো মৃত্যু ছিল না।

চলতি বছরের জুলাই মাসের প্রথম দিনেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ২৭০ জন, মৃত্যু হয় তিন জনের। ২ জুলাই হাসপাতালে ভর্তি হন ৫০৯ জন, মারা যান দুই জন। ৩ জুলাই হাসপাতালে ভর্তি হন ৪৩৬ জন, মারা যান চার জন। ৪ জুলাই হাসপাতালে ভর্তি হন ৬৭৮ জন, মারা যান পাঁচ জন। ৫ জুলাই হাসপাতালে ভর্তি হন ৫৮৪ জন, মারা যান এক জন। ৬ জুলাই হাসপাতালে ভর্তি হন ৬৬১ জন, মারা যান দুই জন এবং ৭ জুলাই হাসপাতালে ভর্তি হন ১৮২ জন, মারা যান এক জন। অর্থাৎ জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তিন হাজার ৩২০ জন, মৃত্যু ১৮।

এ বছরের ৭ জুলাই (শুক্রবার) সারাদেশে সর্বমোট দুই হাজার ১৬৫ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ১১ হাজার ২৯৮ জন ডেঙ্গুরোগী ভর্তি হয়েছেন এবং ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ডেঙ্গুর তথ্য বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় বহুগুণ বেড়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং কীটতত্ত্ববিদদের আশঙ্কা যথাযথ কার্যকরী এবং সবার অংশ নেওয়ার মাধ্যমে সমন্বিতভাবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ না নিলে এ বছর ডেঙ্গুতে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠানটির সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন এ বিষয়ে বলেন, বর্তমানে ডেঙ্গুতে যে পরিমাণে রোগী আক্রান্ত হচ্ছেন এবং হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, আশঙ্কা করছি সামনের দিনগুলোয় এই সংখ্যা আরও বাড়বে। এক্ষেত্রে রোগীর সংখ্যা বাড়লে, মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়ে যাবে।

বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি প্রসঙ্গে আশঙ্কা প্রকাশ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, ঈদ পরবর্তী সময়ে, বিশেষ করে আগামী মাসে ডেঙ্গু খুবই বেড়ে যাবে। এর কারণ হিসেবে আমাদের ল্যাবে এডিস মশার ঘনত্ব, রোগীর সংখ্যা, তাপমাত্রা আর্দ্রতা এবং বৃষ্টিপাত এই কয়েকটি বিষয়কে কম্পিউটার সিমুলেশন মডেলের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ডেঙ্গু আরও অনেক বেড়ে যাবে, যা আগামী আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে খুবই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে দাঁড়াবে। কয়েকদিন ধরে চলা বৃষ্টিপাত এর অন্যতম একটি কারণ।

তিনি বলেন, ঈদের ছুটি থাকার কারণে বিভিন্ন বাসা বাড়ি, অফিস আদালত বন্ধ ছিল। বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে এসব অফিস আদালত এবং বাসা বাড়ির বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পানি জমা হয়েছে। এসব স্থানে এডিস মশার নিরবচ্ছিন্ন বিস্তার হচ্ছে। এতে শীঘ্রই ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়ানোর মতো উপযোগী পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। সেজন্য ঈদ পরবর্তী সময়ে ডেঙ্গু আরও বাড়বে বলে শঙ্কা হচ্ছে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধ বিষয়ে এই কীটতত্ত্ববিদ আরও বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের ডেঙ্গুর হট স্পট ম্যানেজমেন্ট করা দরকার। ডেঙ্গু রোগীদের ঠিকানা বের করে, ওই ব্যক্তির বাড়ির আশপাশে ফগিং করে উড়ন্ত মশাগুলোকে মেরে ফেলতে হবে। কারণ, এই উড়ন্ত মশাগুলোই এই মুহূর্তে আক্রান্ত মশা, এই মশাগুলো যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন জ্যামিতিক হারে ডেঙ্গু ছড়াবে।

চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত বছরের থেকে চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত এবং মৃত্যুর প্রকোপ কয়েকগুণ বেশি। জ্বর হলে কিংবা ডেঙ্গুর কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। ডেঙ্গু পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে। ডেঙ্গু শনাক্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসা নিতে হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ