নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, সদ্য সমাপ্ত ঢাকা-১৭ আসনে নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন আলমকে (হিরো আলম) মারধরের ঘটনাটিকে ‘সামান্য অন্যায়’। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই ভোটগ্রহণের শেষের দিকে এসে এই অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে।
নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরে নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি মূল্যায়ন নিয়ে মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
সাবেক এ নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব বলেন, ঢাকা-১৭ আসনে অত্যন্ত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হচ্ছিল। কোথাও কোথাও অনিয়ম হয়নি। বিকাল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়। একেবারে শেষ সময়ের দিকে একজন প্রার্থী (হিরো আলম) কেন্দ্র পরিদর্শনে যান। তিনি তার সমর্থক ও ইউটিউবার নিয়ে ঢোকার চেষ্টা করেন। এটা পুলিশ আটকে দেয়, যেহেতু আইন অনুযায়ী তিনি এটা পারেন না। উনাকেসহ চার পাঁচজনকে কেন্দ্রে ঢুকতে দিয়েছে। উনি প্রবেশ করে যখন ফিরে যাচ্ছিলেন কতিপয় দুষ্কৃতিকারী তাকে আক্রমণ করে। এটা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক, দুঃখজনক ঘটনা। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
তিনি বলেন, যেখানে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয়েছে, সেই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে সেখানে সামান্য একটু, এই অন্যায় কাজ করে প্রশ্নবিদ্ধ করার যে অপপ্রয়াস, সেটা আমরা একসেপ্ট করতে পারি না। সাথে সাথে বিষয়টি নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছেন। জরুরিভিত্তিক ভিডিও ফুটেজ দেখে দোষীদের চিহ্নিত করা এবং অন্যান্য সাক্ষী নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে জানানোর জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে ডিএমপি কমিশনারকে লিখিত চিঠিও দেওয়া হচ্ছে।
নিরাপত্তা দিতে না পারার এই ব্যর্থতা কার? এমন প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, নির্বাচন কমিশন সার্বিক দায়িত্বে থাকে। সরাসরি প্রটেকশন দেওয়ার সুযোগ নাই। এই প্রটেকশন দেওয়ার দায়িত্ব পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। সেটা পুলিশ কমিশনার দেখবেন। কারও কোনো দায়িত্বে অবহেলা আছে কিনা। অনীহা ছিল কিনা, এগুলো দেখে তারা বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের জানাবেন। তাৎক্ষণিকভাবে ভিডিও ফুটেজ দেখার সাথে সাথেই ডিএমপি কমিশনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কারও কোনো অবহেলা থেকে থাকলে সেটা দেখে তদন্তের পর ব্যবস্থা নিতে বলেছি।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার এবং ওই কেন্দ্রে যারা দায়িত্বে থাকে, সেই কেন্দ্রের বাইরে কিছু হলে তারা কিছু করতে পারেন না। কিন্তু তারা আমাদের জানিয়েছে। তখন আমরা স্থানীয় থানার ওসির সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া জন্য বলেছি। আর আমরা পুলিশ কমিশনারকে বলেছি। কেন্দ্রের ভেতরে প্রিজাইডিং অফিসার ব্যবস্থা নিতে পারবেন। বাইরে তো পারবে না।
এখন পুলিশ কমিশনার তদন্ত করে দেখবে, কারও কোনো অবহেলা থাকলে উস্কানি থাকলে পুলিশ কমিশনার তা দেখবেন। এবং ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের জানাতে হবে। গতকাল অন্যান্য জায়গায় নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। ঢাকাতেও সুষ্ঠু হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যায়ে এসে কারা যে এটা করলো, এটা তদন্তের মাধ্যমেই বের হয়ে আসবে, তাদের কী উদ্দেশ্য ছিল এই ধরণের আক্রমণ করার। ব্যালটে আমরা ভোট করেছি এতে জোরপূর্বক কেউ সিল মারেনি। যেটা নিয়ে আমরা বেশি ভয় পেয়েছিলাম। তবে কোনো বিশৃঙ্খলা বা অঘটন ঘটেনি। সেদিক দিয়ে সাকসেস।
ইসির কোনো ত্রুটি ছিল না। টার্ন আউট আরও বেশি হলে ভালো হতো। ওই ঘটনাটা (হিরো আলমকে মারধর) ছাড়া আমরা সন্তুষ্ট। তবে ইসি তো ভোট আর জোর করে নিতে পারে না। যেমন অস্ট্রেলিয়ায় ভোট দিতে না গেল ৫০ ডলার জরিমানা। সেটা তো আর আমরা করতে পারি না। আমরা মাইকিং করা হয়েছে। ভোট দিতে আসার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।