মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আনকন্ডিশনাল ফ্রেন্ডশিপ (শর্তহীন বন্ধুত্ব) ছিল, যা এখনও বিদ্যমান বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের ৫২ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম বজলুর রহমান ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট আমরা ব্রিটিশ থেকে স্বাধীন হয়ে আরেক উপনিবেশে পড়ি। অনেক বঞ্চনা অবিচার আমরা সহ্য করেছি, তারা আমাদের ভাষাও কেড়ে নিতে চেয়েছিল। বঙ্গবন্ধুই প্রথম উপলব্ধি করেছিলেন পাকিস্তান আমাদের নয়, আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশ।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। আমাদের আকাশচুম্বী মনোবল ছিল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই আমরা পেরেছি। আমরা যেখানেই গিয়েছি, এ দেশের মানুষ সহায়তা করেছে বলে আমরা টিকতে পেরেছিলাম।
মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার প্রসঙ্গে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই স্বাধীনতা আনার জন্য অন্য দেশের সেনাবাহিনী প্রবেশ করেছে। তবে যুদ্ধের পর চোখের ইশারায় সৈন্য প্রত্যাহার করে চলে যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। এটার একমাত্র উদাহরণ আমার মনে হয় বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের আনকন্ডিশনাল ফ্রেন্ডশিপ (শর্তহীন বন্ধুত্ব) আমাদের এখনও বিদ্যমান। আমরা ভারতকে বন্ধু হিসেবে পেয়েছি, ভবিষ্যতেও পাব। সেজন্যই হয়ত ভারত সৈন্য প্রত্যাহার করে চলে গেল।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ভারতের এক হাজার ৬৬১ জন জীবন দেন। এটি তাদের নিজের দেশও নয়। তবুও তারা এদেশের যোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কোটি লোক ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। ভারতের সরকার তো বটেই, সাধারণ জনগণ যদি বাংলাদেশের মানুষকে আশ্রয় না দিত, তাহলে ইতিহাস বোধ হয় অন্যভাবেই লেখা হতো।
সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, সৈন্য প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে একদিকে যেমন কূটনৈতিক দক্ষতা ছিল, অন্যদিকে ভারতীয় জনগণ আমাদের স্বাধীনতার অনিবার্যতা উপলব্ধি করেছিল। বঙ্গবন্ধু পৃথিবীকে আমাদের স্বাধীনতার অনিবার্যতা বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আশফাক হোসেন বীর মুক্তিযোদ্ধা লে. কর্নেল (অব.) সাজ্জাদ আলী জহির (বীর প্রতীক)।